|
|
|
|
টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ |
যোগেশচন্দ্র কলেজের তৃণমূল ছাত্র সংসদের বিরুদ্ধে তদন্ত |
রোশনী মুখোপাধ্যায় |
যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ল কলেজের ছাত্র সংসদের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এক জনের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কলেজের পরিচালন সমিতি। ওই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তপন মুখোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, ওই কলেজের ছাত্র সংসদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) হাতে। কলেজের অধ্যক্ষ মানিক ভট্টাচার্য তৃণমূলের শিক্ষা সেলের প্রধান। তিনি বিধানসভা ভোটে পলাশিপাড়া কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন। তবে হেরে গিয়েছেন। মানিকবাবু এই ঘটনার সঙ্গে নিজের কোনও রকম সম্পর্কের কথা স্বীকার করেননি। তাঁর দাবি, “পুরোটাই ছাত্রছাত্রীদের বিষয়। কলেজের পরিচালন সমিতি তদন্ত কমিটি গড়েছে। তদন্তে কী হয়, দেখা যাক।”
যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ল কলেজের ছাত্র সংসদ বরাবরই অ-বামপন্থীদের দখলে। তবে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের মধ্যে ছাত্র ব্লক এবং এসএফআইয়ের ইউনিট সেখানে রয়েছে। তারা জোটবদ্ধ ভাবেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনে লড়ে। কিন্তু এখনও তারা ক্ষমতা দখল করতে পারেনি। গত ১০ মার্চ ছাত্র সংসদের কার্যনির্বাহী পরিষদের কয়েক জন বামপন্থী সদস্য সাধারণ সম্পাদকের কাছে ২০০৯-’১০ বর্ষে ছাত্র সংসদের আয়-ব্যয়ের হিসাব জানতে চান। বামপন্থী ছাত্রদের অভিযোগ, ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক টিএমসিপি-র সৌম্যাদিত্য মুখোপাধ্যায় প্রথমে তা দিতে চাননি। তবে সাধারণ পড়ুয়াদের দাবি মেনে গত ১৫ মার্চ তিনি তা পেশ করেন। কিন্তু সেই হিসাব ‘সন্তোষজনক’ ছিল না। কারণ, ছাত্র সংসদের কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক যে হিসাব পেশ করেছিলেন, তা ছিল ‘অসম্পূর্ণ এবং সাদা কাগজে লেখা’। উপরন্তু তিনি সেখানে এ কথাও লিখে দিয়েছিলেন যে, ওই হিসাবের জন্য কোনও ভাবেই তিনি দায়ী নন। তিনি ওই ছাত্র সংসদের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। ওই হিসাব তার আগের বছরের। সেটা তিনি পেয়েছেন সেই বছরের সাধারণ সম্পাদকের থেকে।
এই প্রেক্ষিতে ছাত্র সংসদে ছাত্র ব্লকের নির্বাচিত প্রতিনিধি চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মুস্তাক আলমের বক্তব্য, “ছাত্র সংসদের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওই ভাবে প্রথমে নিজের দায় এড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ওই পদে থেকে দায় এড়ানো যায় না। কারণ, পূর্ববর্তী সাধারণ সম্পাদকের থেকে দায়িত্ব নেওয়ার সময় তাঁর আমলে ছাত্র সংসদের যাবতীয় আয়-ব্যয়ের হিসাবও বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের বুঝে নেওয়ার কথা।” বস্তুত, যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ল কলেজের ছাত্র সংসদের সংবিধানে বলা আছে, সংসদের কার্যনির্বাহী পরিষদকে প্রতি বছরের আয়-ব্যয়ের নথি এবং প্রমাণপত্র রক্ষা করতে হবে। সেই প্রেক্ষিতে মুস্তাকের যুক্তি, “আমাদের কলেজের ছাত্র সংসদের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক যে ওই সমস্ত নথি এবং প্রমাণপত্র ছাড়া সাদা কাগজে হিসাব পেশ করলেন, সেটাই তো সন্দেহজনক! তাঁর পূর্ববর্তী সাধারণ সম্পাদক কি তাঁকে ওগুলি হস্তান্তর করেননি? না করে থাকলে কেন করেননি?”
মুস্তাক-সহ ওই কলেজের বামপন্থী পড়ুয়াদের একাংশ এই সমস্ত যুক্তিতেই ছাত্র সংসদের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ এনেছে। তাঁদের আরও অভিযোগ, কলেজের অধ্যক্ষ মানিকবাবুকে তাঁরা গোটা বিষয়টাই জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাতে কান দেননি। এর পরে মুস্তাক-সহ ১৬ জন পড়ুয়া এ বিষয়ে একটি অভিযোগপত্রে সই করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান, সেক্রেটারি, মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল সিব্বল, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যানের কাছে পাঠান। ওই চিঠিতে ছাত্র সংসদের বিরুদ্ধে ৯ লক্ষ টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। লিখেছেন, ‘আমরা বিষয়টি অধ্যক্ষ মানিক ভট্টাচার্য এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গোচরে আনা সত্ত্বেও তাঁরা তাতে কান দেননি। কোনও কার্যকর পদক্ষেপও করেননি। এখান থেকে এটা স্পষ্ট যে, অধ্যক্ষ এবং কর্তৃপক্ষ তাঁদের দায় এড়াতে চাইছেন। যার অর্থ, কলেজের ছাত্র সংসদের তহবিলে কর্তৃপক্ষের কোনও কায়েমি স্বার্থ রয়েছে।’
মুস্তাক জানান, ওই অভিযোগপত্রের ভিত্তিতেই ইউজিসি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দিয়েছে। তারই জেরে ওই কলেজের পরিচালন সমিতি কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তপন মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক জনের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তপনবাবু অভিযোগকারী পড়ুয়াদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁদের অভিযোগগুলির তদন্ত করতে আগামী ১৮ জুলাই কমিটি প্রথম বৈঠকে বসবে। সেখানে উপস্থিত থাকার জন্য অভিযোগকারীদের অনুরোধ করা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|