হিসেবই নেই পুলকারের
যেন এক ছেলেখেলা।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা। বর্ধমান শহর।
দৃশ্য ১: বীরহাটা মোড়ে প্রায় উড়ে এসে ব্রেকের বিকট শব্দে পথচারীদের চমকে দাঁড়াল স্কুলবাস। অপেরক্ষায় থাকা কয়েক জন ছাত্রছাত্রীকে ছোঁ মেরে তুলেই ফের টপ গিয়ার। পড়তে পড়তে কোনও মতে সামলে নিল খুদে পড়ুয়ারা। কেন এত তাড়া? ঝেঁঝে উঠল খালাসির গলা, “স্কুলের টাইম হয়ে গিয়েছে না!”
দৃশ্য ২: টিকরহাট মোড়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল কচিকাঁচারা। হুড়মুড় করে বাস এসেই ছেড়ে দিল। ছাত্রীদের চিৎকার, অভিভাবকদের ‘গেল গেল’ রবে কে শুনছে সে সব? ঊর্ধ্বশ্বাসে বাস চালিয়ে দিলেন চালক।
দৃশ্য ৩: বি সি রোড ধরে ছুটছে স্কুলবাস। জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে রয়েছে কচিকাঁচারা। হাত ভিতরে ঢুকিয়ে নিতে বলে না কেউ। দেখতে দেখতে এক পথচারীর মুখ দিয়ে বেরিয়েই আসে, “কোন দিন কার হাত ছিঁড়ে যাবে, কে জানে! এ সব দেখার কি কেউ নেই?”
দৃশ্য ৪: বিকেল ৩টে। বর্ধমান পৌর বালক বিদ্যালয়ের সামনে জি টি রোডে থমকে দাঁড়ায় পিকআপ ভ্যান। পঙ্গপালের মত ধেয়ে আসে শিশুরা। তাদের টেনে-হিঁচড়ে, বগলদাবা করে খাঁচায় মুরগি ভরার কায়দায় ঠেসে দেওয়া হয় গাড়ির খোলে। দৌড় দেয় পিকআপ ভ্যান।
বর্ধমান পৌর বালক বিদ্যালয়ের সামনে ছবিটি তুলেছেন উদিত সিংহ।
দিন চারেক আগেই দুর্গাপুরের হেতেডোবায় স্কুলবাস থেকে ছিটকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে স্কুলছাত্রীর। কিন্তু তাতেও বর্ধমান শহরের হুঁশ নেই। দু’বেলা একই ভাবে চলছে ছেলেমেয়েদের স্কুলে আসা-যাওয়া। নজরদারি কোথায়? বর্ধমানের ট্রাফিক পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ওসি সনৎ মণ্ডল কবুল করেন, “শহর জুড়ে কত স্কুলবাস, ম্যাটাডোর, পিকআপ ভ্যান চলে তার কোনও হিসেব আমাদের কাছে নেই। শহরে অনেক জায়গায় রিকশাভ্যানে করেও বিপজ্জনক ভাবে ছেলেমেয়েদের আনা-নেওয়া করা হয়। কিন্তু সেগুলি বৈধ না অবৈধ তা আমরা জানি না।”
ওসি-র মতে, পুলকার চিহ্নিতকরণ ও নিয়ন্ত্রণ পরিবহণ দফতরের কাজ। কিন্তু জেলা পরিবহণ আধিকারিক অনির্বাণ কোলেও মেনে নেন, “স্কুলের পরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ে কোনও তথ্য-পরিসংখ্যান আমাদের দফতরে নেই। কত বাস বা পুলকার অনুমোদিত, কতগুলি অনুমোদনহীন, তা আমরা জানি না।” তবে তাঁর দাবি, জেলাশাসকের নির্দেশে মঙ্গলবার থেকেই তাঁরা স্কুলবাস ও পিকআপ ভ্যানের অনুমোদন সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন। বর্ধমান ও দুর্গাপুরে পুলকারের নথিভুক্তি নিয়ে অনুসন্ধান হয়ে গিয়েছে। আসানসোল মহকুমার হিসেব চলছে। কিন্তু বর্ধমান বা দুর্গাপুরে কত অনুমোদনহীন পুলকার চলছে, তা তিনি বলতে পারেননি। তিনি শুধু বলেন, “কয়েক দিন পরে আসুন। সব জানিয়ে দেব।”
ছেলেমেয়েদের স্কুলে রওনা করিয়ে অভিভাবকেরা প্রতি দিনই দুশ্চিন্তায় থাকেন। হেতেডোবায় ছাত্রীর অপমৃত্যুর পরে তাঁদের দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে। টিকরহাটের বাসিন্দা দেবব্রত সিংহরায়ের আশঙ্কা, “প্রতি দিনই হাতে অত্যন্ত অল্প সময় নিয়ে জনবহুল রাস্তা দিয়ে যে ভাবে পুলকারগুলি ছুটে যায়, যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
রাজগঞ্জের বিজনকুমার তালুকদার বলেন, “ স্কুলবাস বা পুলকারগুলি যে ভাবে চলাচল করে, দেখে মনে হয় তার অনেকগুলিই লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালকেরা চালান না। তা ছাড়া অনেক গাড়ির যা ভাঙাচোরা অবস্থা, যে কোন সময়ে কিছু ঘটে যেতে পারে। প্রশাসন আর কত দিন চোখ বুজে থাকবে?”
এ ব্যাপারে পরিবহণ দফতরের তরফে কোনও পরিকল্পনার কথা এখনও শোনা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী যতই ‘ডু ইট ইমিডিয়েটলি’ বলুন, পরিবহণ কর্তারা এখনও গয়ংগচ্ছ মনোভাব ছাড়তে পারেননি বলেই অভিযোগ। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা অবশ্য বলেন, “প্রতিটি স্কুলবাসের অবস্থা, চালকদের লাইসেন্স ও কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। গত দু’দিনে বর্ধমান শহরে ৩২টি বাসের পরীক্ষা হয়েছে। কয়েকটিতে গলদ পাওয়া গিয়েছে। সমস্ত স্কুলকে বলা হয়েছে, গাড়িগুলির কাছে থেকে নতুন করে ফিটনেস সার্টিফিকেট চাইতে। এক সপ্তাহের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা হবে।”
ট্রাফিক পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ওসি বলেন, “অফিস টাইমে স্কুলবাসগুলি যে ভাবে চলাচল করে তাতে যানজট হয়। তবু স্কুলের ছেলেমেয়েরা থাকায় আমরা সেগুলিকে সকলের আগে ছাড়তে বাধ্য হই। সেই ভেবেই এত দিন এগুলির যাতায়াতে বাধাও দেওয়া হয়নি। কিন্তু এ বার মনে হচ্ছে, আমাদের সক্রিয় হবার সময় এসেছে।”
‘নিষ্ক্রিয়’ প্রশাসনের ‘সক্রিয়’ হতে কত সময় লাগে, সাক্ষী থাকবেন শহরবাসী।

অভিভাবকেরা দরকারে ফোন করুন
• বর্ধমান ৯৪৩৩৩-১১৮৩০
* নম্বরটি আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের
First Page Bardhaman Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.