বৃষ্টিতে রাতভর গাছতলায় আটকে শাস্তি স্বাস্থ্যকর্মীদের
ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে চিকিৎসক ও নার্সদের খোঁজ করেছিল কিছু লোক। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী তাঁদের ডাকতে যান। তাতেই একটু ‘দেরি’ হয়েছিল। সেই ‘অপরাধে’ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং দু’জন অন্তঃসত্ত্বা নার্স-সহ ১৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে বৃষ্টির মধ্যে রাতভর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরে গাছের তলায় আটকে রাখার অভিযোগ উঠল ‘অপ্রকৃতিস্থ’ ওই গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে।
রামপুরহাট ১ ব্লকের চকমণ্ডলা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘটনা। তবে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ্ত মণ্ডল বা স্বাস্থ্যকর্মীদের তরফে রবিবার পর্যন্ত থানায় লিখিত অভিযোগ হয়নি। স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার ছিল পাল্স পোলিও টিকাকরণ। শনিবার রাতে তারই প্রস্তুতি চলছিল স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ এলাকার কিছু বাসিন্দা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢুকে পড়েন। তাঁদের সঙ্গে কোনও রোগী ছিল না। তাঁরা নিজেরাও কেউ চিকিৎসার জন্য আসেননি। চিকিৎসক-নার্সদের খোঁজ করে ‘সময়মতো’ না পাওয়াতেই খেপে ওঠেন তাঁরা। সেই সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরে ছিলেন সুদীপ্তবাবু, মেডিক্যাল অফিসার অচিন্ত্য রায়, তিন জন নার্স এবং পালস পোলিও টিকাকরণের কিছু কর্মী। ‘দেরি হওয়া’ ও ‘কাজে গাফিলতি’র অভিযোগ তুলে সকলকেই বাইরে বার করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন ওই গ্রামবাসীরা। এর পর ‘শাস্তিদান-পর্ব’। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বাস্থ্যকর্মীর কথায়, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনেই একটি গাছের তলায় আমাদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। মোবাইলে আমরা যাতে কাউকে খবর না দিতে পারি, সে জন্য ওরা আমাদের কড়া পাহারায় রেখেছিল।” তাঁর দাবি, “ওই বাসিন্দারা সকলেই ছিল মদ্যপ। দুই অন্তঃসত্ত্বা নার্সকে রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ছেড়ে দেওয়া হলেও ঝোড়ো হাওয়া, বাজ আর বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বাকিদের ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ভোর সাড়ে ৩টে পর্যন্ত।”
এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা নিয়ে অবশ্য এলাকায় ক্ষোভ আছে। এর আগেও একাধিকবার গ্রামবাসীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তবে এই ঘটনার পরে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। ওই স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, “এমনিতেই এলাকাটি নির্জন। এই ঘটনার পরে বেশি রাত পর্যন্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করব কী করে, জানি না।”
রবিবার সকালে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান রামপুরহাট ১-এর বিডিও শান্তিরাম গড়াই। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রামপুরহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ আলি হোসেন। শান্তিরামবাবু বলেন, “খুবই অমানবিক ঘটনা। আমি স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যকে গ্রামবাসীদের সঙ্গে বৈঠক করতে বলেছি। সমস্ত ঘটনা মহকুমাশাসককে জানিয়েছি।” মহকুমাশাসক (রামপুরহাট) বিধান রায় বলেন, “বিডিও-কে বলেছি, বিএমওএইচ যেন থানায় অভিযোগ করেন।” এ দিন বিকেলে বিএমওএইচ সুদীপ্তবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলব।” এর পরে চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বীরভূমের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস মল্লিক বলেন, “সুদীপ্তবাবু মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। তাই হয়তো তিনি অভিযোগ করতে চাইছেন না। লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় আমরাও আইনি পদক্ষেপ করতে পারছি না। তবে, এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। মেনে নেওয়া যায় না। পরে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তাই এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। বিডিও যেভাবে উদ্যোগী হয়েছেন তাতে কী হয় দেখা যাক।”
ওই গ্রামেরই বাসিন্দা নিখিল পাল বলেন, “আমি ঘটনা শুনেই এ দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছুটে যাই। পরিষেবায় ঘাটতির দোহাই দিয়ে এ ধরনের আচরণ মানসিক অত্যাচার ছাড়া আর কিছুই না। আমি পুলিশকে মৌখিক ভাবে বিষয়টি জানিয়েছি। গ্রামের সকলে মিলে মদ্যপদের এই আচরণের বিহিত করতে হবে।”
Previous Story Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.