মমতাকে রিপোর্ট সাবিত্রীর
আলো নেই, হাওয়া নেই, হোম যেন জেলখানা
ড় বড় ফটক। কিন্তু ঘরগুলিতে পর্যাপ্ত আলো নেই। যথেষ্ট বাতাস নেই। মেরামতির অভাবে ঘর ভেঙে পড়ছে। খাটের ব্যবস্থা নেই। বদ্ধ ঘরে মেঝেতেই শুয়ে থাকে শিশুরা। হোম তো নয়, যেন জেলখানা!
অন্য কেউ নয়, এই বর্ণনা দিয়েছেন রাজ্যের নারী-শিশু উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র নিজেই। বারাসতের ‘কিশলয়’, আড়িয়াদহের ‘ধ্রুবাশ্রম’ এবং সল্টলেকের ‘সুকন্যা’ হোম পরিদর্শন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্প্রতি তিনি যে-রিপোর্ট দিয়েছেন, তাতে সরকার পরিচালিত হোমগুলির পরিস্থিতি এ ভাবেই তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্টে মন্ত্রী লিখেছেন, “হোমের ঘরগুলি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে এবং প্রতিটি ঘরের সামনে যে-ভাবে গ্রিলওয়ালা গেট বসানো হয়েছে, দেখলে মনে হয়, এগুলো নিরাপদ আশ্রয় নয়, যেন কারাগার। যাদের জন্য হোম, সেই সব শিশু, কিশোর ও কিশোরীকে মুক্ত আবহাওয়ায় গড়ে তোলার কোনও ব্যবস্থাই চোখে পড়েনি। শিশুদের যত্ন, সুরক্ষা, শিক্ষা বা চিকিৎসার সুব্যবস্থাও নেই।” মন্ত্রী জানিয়েছেন, ১৬ একর জায়গা ঘিরে কিশলয় হোম। পাঁচিল ঘেরা প্রচুর ফাঁকা জায়গা থাকা সত্ত্বেও শিশুদের মুক্ত আবহাওয়ায় মানুষ করা হয় না। আটকে রাখা হয় বদ্ধ ঘরে।
রাজ্যের হোমগুলির সার্বিক উন্নয়নে কী কী ব্যবস্থা (অ্যাকশন প্ল্যান-সহ) নেওয়া দরকার, কয়েক দিন আগেই সেই ব্যাপারে সবিস্তার রিপোর্ট পেশ করার জন্য সমাজকল্যাণ দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই দফতর রাজ্য ও জেলা পর্যায়ের অফিসার ও সংশ্লিষ্ট লোকেদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে রিপোর্ট তৈরি করেছে। সেই রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়েছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী। তার আগেই তিনি তিনটি হোম পরিদর্শন করেন। সেই রিপোর্টও তিনি পৃথক ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছেন বলে জানান সাবিত্রীদেবী।
সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে সরাসরি সরকারি পরিচালনায় হোম আছে ২০টি। সেগুলিতে সব মিলিয়ে ২,৮৮১টি শিশু ও কিশোরের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ভবঘুরে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য হোম রয়েছে ১০টি। সেখানে পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে ২,৪২৫ জন রয়েছেন। এ ছাড়াও নির্যাতিত রাজনৈতিক কর্মী এবং বৃদ্ধবৃদ্ধাদের জন্য একটি হোম আছে গড়িয়ায়। সেখানে রাজনৈতিক ভাবে নির্যাতিত ২৪ জন, ২৫ জন বৃদ্ধ এবং ৩৬ জন বৃদ্ধার থাকার ব্যবস্থা আছে। এই সব হোমের আবাসিকদের জন্য মাসে মাথাপিছু সরকারি বরাদ্দ ৮৫০ টাকা। ওষুধের খরচ হিসেবে দেওয়া হয় আরও ২৫০ টাকা। এ ছাড়া রাজ্যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত হোম রয়েছে ৩০টি।
হোমের আবাসিকদের জন্য এখন যে-বরাদ্দ রয়েছে, তা যথেষ্ট নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া সমাজকল্যাণ দফতরের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টে। তাতে বলা হয়েছে:
l অবিলম্বে ঘরগুলি মেরামত করতে হবে।
l শিশু ও কিশোরদের খাদ্য ও চিকিৎসার জন্য মাসিক বরাদ্দ ১১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে অন্তত ১৬০০ টাকা করা দরকার।
l মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত শিশুদের জন্য পৃথক হোম গড়ে তুলতে হবে।
l খোলামেলা পরিবেশে শিশু, কিশোর এবং শিশু অপরাধীদের মানুষ করার ব্যবস্থা দরকার। এই ধরনের ১৫ দফা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ওই রিপোর্টে। শিশু, কিশোরদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কারিগরি শিক্ষা-সহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে।
শিশুদের সুরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি সব রাজ্যে ‘ইন্টিগ্রেডেট চাইল্ড প্রোটেকশন স্কিম’ বা আইসিপিএস চালু করার নির্দেশ দিয়েছে। সেই প্রকল্পের ৭৫ ভাগ টাকাই দেবে কেন্দ্র। রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরের রিপোর্টে বলা হয়েছে, হোমগুলিতে কেন্দ্রের ওই প্রকল্প চালু করা হোক। সরকারি হোম ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত হোমগুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়নের প্রস্তাবও রয়েছে তাতে। হোমগুলির সার্বিক উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রীকে চেয়ারপার্সন করে অর্থ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা এবং পূর্ত দফতরের মন্ত্রীদের নিয়ে রাজ্য স্তরে একটি শক্তিশালী কমিটি গড়ার প্রস্তাবও আছে। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের সচিব পর্যায়ের অফিসারদের নিয়ে একটি স্টিয়ারিং কমিটি গড়ার কথাও বলা হয়েছে।
প্রায় সব হোমেই কর্মীর অভাব। প্রতিটি হোমেই দীর্ঘদিন ধরেই বহু পদ খালি পড়ে রয়েছে। হোমগুলিতে চিকিৎসক, রাঁধুনি ও দারোয়ান নিয়োগ করা হয়নি বহুকাল। সব মিলিয়ে ৩০ শতাংশ পদ খালি। জরুরি ভিত্তিতে ওই সব পদে নিয়োগেরও সুপারিশ করা হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী জানান, এই প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
Previous Story Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.