ছানার জল থেকে ভেজাল দুধ বানানোর রমরমা, তাজ্জব পুলিশ
ত দিন ছিল দুধে জল। এ বার জলের সঙ্গে রাসায়নিক মিশিয়ে কৃত্রিম ভাবে তৈরি হচ্ছে ‘দুধ’। সেই ‘দুধ’ চলে যাচ্ছে বিভিন্ন ডেয়ারিতে। তা পান করছেন শিশু, বয়স্ক থেকে শুরু করে রোগীরাও। সব দেখেশুনে ‘তাজ্জব’ পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। ঘটনা বিশদে জেনে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
পোষাকি নাম ‘দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র’। সমস্ত সরকারি অনুমতিপত্রও রয়েছে সেখানে। এলাকার গোয়ালারা এসে দুধ বিক্রি করছেন সেই কেন্দ্রে। সেই দুধ থেকে তৈরি ছানা বিক্রি হচ্ছে বাজারে। আর ছানার জলের সঙ্গে নানা রকম রাসায়নিক, গন্ধ মিলিয়ে ফের তৈরি হচ্ছে ‘দুধ’। ল্যাক্টোমিটারে (দুধের গুণমান মাপার যন্ত্র) সেই ভেজাল ‘দুধ’ যাতে ধরা না পড়ে রয়েছে, করা হচ্ছে সে ব্যবস্থাও।
উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা ও বাদুড়িয়া এলাকায় কয়েকটি এমন কেন্দ্রে হানা দিয়ে সব দেখে শুনে ‘আক্কেলগুড়ুম’ পুলিশ অফিসারদের। ওই ভেজাল ‘দুধ’-এ মিলেছে ক্ষতিকারক রাসায়নিকের উপস্থিতিও। চিকিৎসকদের মতে, শিশু তো বটেই, এই ‘দুধ’ মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে বয়স্কদের উপরেও।
গাইঘাটা থানার একটি গুদাম ভর্তি হয়ে রয়েছে চাঁদপাড়ার সোনাটিকারি থেকে উদ্ধার হওয়া ‘দুধ’ তৈরির এমন বিশাল বিশাল যন্ত্রপাতিতে। রয়েছে ৩টি মিকশ্চার মেশিন, ৫টি ছানা কেটে নেওয়ার যন্ত্র, দুধ জাল দেওয়ার জন্য বিশাল ড্রাম। উদ্ধার হয়েছে ৬ বস্তা গুঁড়ো দুধের প্যাকেট, ১০০ কেজি কস্টিক সোডা, ৩ টিন ভোজ্য তেল, ইথানল, ইথাইল অ্যালকোহল, আয়োডিন, দুধের গন্ধ যুক্ত রাসায়নিকও।
তৈরি হচ্ছে ভেজাল দুধ। নিজস্ব চিত্র
ধরা পড়েছে কয়েকজন জাল ‘দুধ’ কারবারীও। জাল ‘দুধ’ তৈরি করার অভিযোগে ‘চাঁদপাড়া দুগ্ধ উৎপাদক সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থার গাইঘাটা, নহাটার কারখানা ‘সিল’ করে দিয়েছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া নথিপত্র থেকে মিলেছে ‘মারাত্মক’ তথ্য। নামকরা কিছু ডেয়ারিতেও সরবরাহ হচ্ছে সেই ‘দুধ’। এক-একটি কারখানা থেকে প্রতিদিন ৬ হাজার লিটার। একটি জাল ‘দুধ’ তৈরির কারখানা দৈনিক কমপক্ষে ৪ লক্ষ টাকার ব্যবসা করছে। তবে এখনও এ রকম অনেক কারখানা রমরমিয়ে চলছে বলে দাবি পুলিশের।
কী ভাবে তৈরি হচ্ছে ওই ভেজাল ‘দুধ’?
পুলিশ সূত্রের দাবি, জেরায় ধৃত কারবারীরা তাদের জানিয়েছে, দুধ থেকে যন্ত্র দিয়ে ছানা বের করে নেওয়ার পরে, পড়ে থাকা জলে মেশানো হচ্ছে কস্টিক সোডা, ইথাইল অ্যালকোহল। মেশানো হচ্ছে সামান্য গুঁড়ো দুধ। সেই মিশ্রণে মেশানো হচ্ছে দুধের গন্ধ যুক্ত রাসায়নিক এবং আরও কিছু পদার্থ। মিকশ্চার মেশিনে তা ভাল করে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হুসেন মির্জা জানান, এ ভাবে তৈরি হওয়া ‘দুধ’ দেখে বা খেয়ে ভেজাল বলে ধরাও খুব মুশকিল।
কিন্তু যে কারখানাগুলি নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই, তাদের কী অবস্থা?
গাইঘাটার একটি একটি দুধের কারখানায় গিয়ে জানা গেল, প্রতিদিন ২০ হাজার লিটার গরুর দুধ এবং সাড়ে ৩ হাজার লিটার মোষের দুধ সেখানে আসে। ওই কারখানাতেও রয়েছে গুঁড়ো দুধের বস্তা এবং বিভিন্ন রাসায়নিক। তবে কারখানার কর্মীরা জানালেন, প্রোটিনের পরিমাণ ঠিক না হলে ল্যাক্টোমিটারে ধরা পড়ে। সে জন্যই দুধে অনেক সময় কিছুটা গুঁড়ো দুধ মেশাতে হয়। চিলিং প্ল্যান্টের পাইপ সাফাই করতে লাগে কস্টিক সোডা, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড। দুধে স্নেহ পদার্থের (ফ্যাট) পরিমাণ জানার জন্য নমুনা নিয়ে ইথাইল অ্যালকোহল মিশিয়ে পরীক্ষা করতে হয়। দুধে অন্য কিছু মেশানো হয়েছে কি না, তা জানার জন্য ব্যবহার করা হয় আয়োডিন। তবে কারখানার মালিক শিবশঙ্কর ঘোষ বলেন, “আমাদের দুধ সমস্ত বড় ডেয়ারিতে যায়। দুধে সামান্য ভেজাল থাকলেও তা বড় ডেয়ারিতে ধরা পড়ে যায়।”
আদৌ তা পড়ে কি?
পশ্চিমবঙ্গ দুগ্ধ মহাসঙ্ঘের (ওয়েস্টবেঙ্গল মিল্ক ফেডারেশন) কর্তারা জানাচ্ছেন, অনেক সময়েই ভেজাল ধরা পড়ে না। দুধে গুণমানের ‘সামান্য কমবেশি’ হলেও ছেড়ে দেওয়া হয়। মেট্রো ডেয়ারির জেনারেল ম্যানেজার ও দুগ্ধ বিজ্ঞানী অসিতাভ শূরের ব্য্যখ্যা, “প্রয়োজনের তুলনায় দুধের উৎপাদন অনেক কম। আমরা ফিরিয়ে দিলে অন্য ডেয়ারিরা কিনে নেয়। অনেকের আবার আসল-নকল পার্থক্য করার যন্ত্র বা পরিকাঠামোই নেই। আর ঠিক এই জিনিসগুলো মেশালে ভেজাল দুধ ধরা মুশকিল। কস্টিক সোডা, অ্যালকোহল থেকে শুরু করে এই সব রাসায়নিক মানুষের শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।”
এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “দুধে ভেজাল দেওয়ার মতো অপরাধ যাঁরা করছেন, তাঁদের অবিলম্বে চিহ্নিত করতে ওই সংক্রান্ত ফাইলগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
First Page Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.