শিলিগুড়িতে তৃণমূলের সমর্থনেই বোর্ড কংগ্রেসের, সরছেন মেয়র
বশেষে তৃণমূলের শর্ত মেনে বামেদের সমর্থনে জেতা মেয়রকে পদত্যাগ করিয়ে শিলিগুড়ি পুর-বোর্ড পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস।
কংগ্রেসের অন্দরের খবর, আগামী ২৯ জুন, বাজেট পেশের আগেই মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তকে ইস্তফা দিতে হবে বলে তৃণমূল যে দাবি তুলেছে, তা মেনে নিয়েছেন কংগ্রেসের জেলা নেতৃত্ব। রবিবার দলের সব কাউন্সিলরকে শিলিগুড়ির বিধান ভবনে ডেকে সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার।
জেলা নেতৃত্বের মনোভাব বোঝার পরে আজ, সোমবার অথবা কাল, মঙ্গলবার পদ থেকে মেয়র ইস্তফা দেবেন বলে আশা করছে তৃণমূল। জোট সূত্রের খবর, মেয়র, চেয়ারম্যান ও ৩টি মেয়র পারিষদ কংগ্রেসের হাতেই রাখা হবে। তৃণমূলের হাতে থাকবে ডেপুটি মেয়র এবং ৪টি মেয়র পারিষদ পদ। কোন বিভাগের দায়িত্ব কোন দল পাবে, তা এখনও ঠিক হয়নি।
নতুন রঙে। শিলিগুড়ি পুরসভা ভবন।
তৃণমূল সূত্রের খবর, ইস্তফা দিলেও নতুন মেয়র নির্বাচন না-হওয়া পর্যন্ত গঙ্গোত্রীদেবীকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে বলা হবে। সে ক্ষেত্রে ২৯ জুন পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ না-করে ‘ভোট অন অ্যাকাউন্ট’ পেশ হবে। তার পরেই সরকারি তরফে নতুন মেয়র নির্বাচনের দিন ঘোষণার বিজ্ঞপ্তি জারি করবে রাজ্য সরকার। সেই কাজ যাতে ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “বোর্ড পুনর্গঠনের ব্যাপারে কংগ্রেস-তৃণমূলের ঐকমত্য হয়েছে। আশা করি, সব কিছু নির্বিঘ্নেই হবে।” পাশাপাশি, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক তথা দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্করবাবুও বলেন, “তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আর দেরি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।”
বস্তুত, ২০০৯ সালের ১ অক্টোবর মেয়র পদপ্রার্থী গঙ্গোত্রী দেবী বামেদের সমর্থনে জেতার পর থেকে তৃণমূল টানা চাপ দিলেও কংগ্রেস বিষয়টি নিয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সময় শিলিগুড়িতে গিয়ে ঘোষণা করেন, বামেদের সংস্রব ছেড়ে মেয়র ইস্তফা দিলে, তবেই পুরবোর্ড পরিচালনায় সরাসরি যোগ দেবে তৃণমূল। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিষয়টি ভেবে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে মেয়রকে ইস্তফা দেওয়ার কোনও নির্দেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব দেননি। ফলে, এ পর্যন্ত রাজ্যে যে ক’টি নির্বাচন হয়েছে, তাতে কোথাও কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের হাত মেলানোর পরিস্থিতি তৈরি হলেই ‘শিলিগুড়ি-মডেল’-এর পুনরাবৃত্তি হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনাও চলেছে।

মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত।
রাজ্য রাজনীতিতে ‘শিলিগুড়ি মডেলের জনক’ বলে পরিচিত সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের সঙ্গে এ দিন বহু চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার বলেন, “মেয়র নির্বাচনের সময় একটা বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। যা গোলমাল শুরু হয়েছিল, বোর্ডে অচল হয়ে যেতে পারত। তখন শহরবাসীর স্বার্থে আমরা একটা অবস্থান নিয়েছিলাম। এখন কংগ্রেস-তৃণমূল জোট কী করবে, তাদের ব্যাপার। পুর-পরিষেবা এখন থমকে রয়েছে। জবাবদিহি জোটকেই করতে হবে। মানুষ উন্নত পরিষেবা চান, এটা ওদের মাথায় রাখতে
হবে।”
সম্প্রতি ‘শিলিগুড়ি-মডেল’ সংক্রান্ত যাবতীয় জল্পনায় জল ঢালতে আসরে নামেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী, যিনি এখনও শিলিগুড়ি পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা পুরসভার পরিষদীয় দলনেতার পদে রয়েছেন। মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পরে গৌতমবাবু দলের কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে জানিয়ে দেন, পুর-বোর্ড পুনর্গঠনের পরেই তিনি কাউন্সিলর পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। সেই মতো প্রস্তুতি শুরু হয়। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি পুরসভার পদাধিকারীদের নিয়ে বৈঠক করে কাজকর্মে ‘ঢিলেমি’র জন্য মেয়রকে ভর্ৎসনা করেন মন্ত্রী। বৈঠকের পরে তৃণমূলের পক্ষ থেকে মেয়রকে হুমকি দেওয়া হয়, আসন্ন বাজেট অধিবেশনের আগে বোর্ড পুনর্গঠনের ব্যবস্থা না-হলে তৃণমূলের সমর্থন আর পাওয়া যাবে না।
ওই ঘটনার পরেই শনিবার কলকাতায় ‘শিলিগুড়ি ভবনে’ শঙ্করবাবু, গৌতমবাবু বৈঠকে বসেন। সেখানে ছিলেন তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল এবং রঞ্জন শীলশর্মা। বৈঠকে গৌতমবাবু তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশের কথা মনে করিয়ে দিতেই শঙ্করবাবু এক কথায় জানিয়ে দেন, তাঁরা দ্রুত মেয়রকে ইস্তফা দেওয়াবেন। রবিবার শঙ্করবাবু শিলিগুড়িতে দলের কাউন্সিলরদের সে কথা জানান। মেয়র গঙ্গোত্রীদেবী জানান, তিনি দলের নির্দেশ মেনেই চলবেন।
Previous Story Uttarbanga Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.