|
|
|
|
তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি |
ধর্মঘটের রাস্তা খোলা রেখেই পথে বামফ্রন্ট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ডিজেল, কেরোসিন ও রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বন্ধ বা পরিবহণ ধর্মঘটের রাস্তা খোলা রাখছে বামফ্রন্ট। ট্রেড ইউনিয়নগুলির স্তরে এই নিয়ে সবিস্তার আলোচনার পরে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাওয়া হতে পারে বলে রবিবার বাম সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে। প্রাথমিক ভাবে গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে রাজ্য স্তর পর্যন্ত যে প্রতিবাদ কর্মসূচি বামফ্রন্ট নিয়েছে, তাতে অবশ্য বন্ধ নেই। ফ্রন্ট নেতৃত্ব চাইছেন, সাধারণ মানুষকে ‘প্রস্তুত’ থাকার জন্য যথেষ্ট সময় দিয়ে তবেই ধর্মঘটের ঘোষণা করতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার আগেই যেখানে বন্ধের রাস্তা থেকে সরে এসেছেন, সেখানে তাঁদের সম্পর্কে মানুষের কাছে ‘ভুল বার্তা’ যাওয়া আটকাতে এখন ‘সতর্ক’ থাকতে হচ্ছে বাম নেতৃত্বকেও।
মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষের ব্যবহার্য রান্নার গ্যাস ও কেরোসিন এবং গণ-পরিবহণের জন্য অত্যাবশকীয় পণ্য ডিজেলের ‘অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি’র প্রতিবাদে বামফ্রন্টের ডাকে আজ, সোমবার ১২ ঘণ্টার বন্ধ হচ্ছে একমাত্র বাম-শাসিত রাজ্য ত্রিপুরায়। এখানেও তেমন কোনও কর্মসূচি নেওয়া যায় কি না, সেই বিষয়ে এক প্রস্ত আলোচনা হয়েছে এ দিন বামফ্রন্টের বৈঠকে। পরে এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, “ত্রিপুরার বিষয়টা দেখেছি। পরে প্রয়োজনে আমরাও বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি নেব। ভবিষ্যতে নানা কর্মসূচির কথাই ভাবা হবে।” আপাতত ৪ থেকে ১০ জুলাই রাজ্যের প্রতিটি জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে বামফ্রন্ট। সপ্তাহব্যাপী প্রচারের পরে ১১ জুলাই কলকাতা এবং জেলায় কেন্দ্রীয় সরকারের দফতরগুলির সামনে বেলা ১ থেকে ৫টা পর্যন্ত ধর্না-অবস্থান হবে। যে সব এলাকায় বামেদের সংগঠনের হাল খারাপ, সেখানে প্রতিবাদ আন্দোলন করা সম্ভব না-ও হতে পারে বলে বিমানবাবু মেনে নিয়েছেন।
ফ্রন্ট সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে বন্ধ বা নিদেনপক্ষে পরিবহণ ধর্মঘট ডাকার প্রস্তাব নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। ফ্রন্টের একাংশের বক্তব্য, ভোটে হেরে যাওয়ার পরে ওই ধরনের বড় কর্মসূচি নিলে এক দিকে সংগঠনকে চাঙ্গা করা যায়, আবার জনমানসেও নিজেদের ‘প্রতিবাদী ভাবমূর্তি’ তুলে ধরা যায়। তা ছাড়া, ডিজেল, রান্নার গ্যাস, কেরোসিনের মতো জরুরি পণ্যের দাম বাড়ানোর মূল সিদ্ধান্ত যে হেতু কেন্দ্রীয় সরকারের নেওয়া, তাই এখনই রাজ্যে মমতার নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের সরাসরি বিরোধিতায় না-নেমেও মানুষের কাছে ‘প্রয়োজনীয় বার্তা’ দেওয়া যায়। আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামী, মনোজ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের হাফিজ আলম সৈরানি, সিপিআইয়ের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়দের সঙ্গে আলোচনা করে বিমানবাবু ঠিক করেন, আরও ‘অপেক্ষা’ করা হবে। শ্রমিক সংগঠনগুলি প্রথমে তাদের দিক থেকে কর্মসূচি নিক। প্রাথমিক ভাবে যা স্থির হয়েছে, তাতে বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নগুলি ২৮ জুন স্থানীয় ভিত্তিতে বিক্ষোভ করবে, ৩০ জুন বিডিও-দের কাছে স্মারকলিপি দেবে এবং ৫ জুলাই কেন্দ্রীয় জমায়েত করবে। তবে বাম শিবিরের যা মনোভাব, তাতে ক্ষমতায় থাকাকালীন তারা যা করত, সেই ভাবেই বিরোধী ভূমিকাতেও বন্ধের হাতিয়ার হাতছাড়া করতে চায় না তারা। তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা এই ব্যাপারে যে মনোভাবই নিন না কেন!
বিমানবাবু বলেন, “আমাদের দাবি, এই মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। আন্দোলনকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে হবে, যাতে কেন্দ্রের উপরে চাপ সৃষ্টি করা যায় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য।” রান্নার গ্যাসের বর্ধিত মূল্যের থেকে ১৬ টাকা ভ্যাট তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সেই সিদ্ধান্তকে প্রাথমিক ভাবে স্বাগতও জানিয়েছে সিপিএম। বিমানবাবু এ দিন বলেন, “১৬ টাকা উঠলেও ৩৪ টাকা তো রয়ে গেল! ইউপিএ-র গুরুত্বপূর্ণ শরিক হিসাবে উনি পুরো ৫০ টাকা প্রত্যাহার করাতে কেন পারলেন না? অতীতে বামফ্রন্ট ২০ টাকা কমিয়েছে, ১৪% পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে। সেটা কেউ দেখছে না!” বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের দাবি, “দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য কেন্দ্রের কাছে রাজ্য সরকারের দাবি জানানো উচিত, যেটা আমরা ২০০৮ সালে করেছিলাম। মমতার মন্ত্রিসভা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বলুক, এই দাম কমানো উচিত। সেই চিঠি প্রকাশ করে দিক! তা হলেই হবে!” |
|
|
|
|
|