|
|
|
|
অভাব ঘোচাতে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন বিসর্জন দেবাশিসের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বসিরহাট |
স্যাঁতসেঁতে দেওয়ালের জায়গায় জায়গায় খসে পড়া প্লাস্টারের এক চিলতে ঘরে বসেই দেবাশিস স্বপ্ন দেখে। না, বিরাট কিছু হওয়ার স্বপ্ন নয়, শুধু মানুষের মতো মানুষ হয়ে সংসারর হাল ফেরানোরই স্বপ্ন দেখে দেবাশিস। হাজারো অভাবের মধ্যেও এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট টাউন হাইস্কুলের ছাত্রটি ৪০২ নম্বর পেয়ে অনেককে অবাক করে দিয়েছে। বসিরহাট পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের স্বর্ণকার করাতকল পাড়ায় বাড়ি দিলীপ দে’র। প্রতিবন্ধী দিলীপবাবু যখন যে কাজ জোটে তাই করেন। বর্তমানে কলকাতায় একটি প্রতিষ্ঠানে নৈশপ্রহরীর কাজ করেন। সামান্য আয়ে বরাবরই চেষ্টা করেছেন ছেলের পড়াশোনায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে। সাংসারের অভাব ঘোচাতে মা পূর্ণিমা দেবী পরিচারিকার কাজ নিয়েছেন। বললেন, “বাড়ি বাড়ি কাজ করে যা রোজগার হয়, তাতে এক বেলা ভাল করে খেতে দিতে পারি না ছেলেটাকে। এক সময় স্বপ্ন দেখতাম ও বড় হয়ে ইঞ্জিনায়ার হয়েছে। কিন্তু এখন আর তা দেখি না। শুধু এটুকুই চাই ও মানুষ হোক। এখন কেউ যদি পাশে দাঁড়ান তবে ছেলেটা অন্তত এগিয়ে যেতে পারে।” দিনে সাত-আট-ঘণ্টা পড়াশোনা করা দেবাশিসের অভ্যাস সময়ে পেলেই রবীন্দ্রনাথর ছোট গল্পের বই নিয়ে বসে পড়া। এ চাড়া খেলাধূলা, গান ও ছবি আঁকার শখও চিল তার। কিন্তু সংসারের অভাবের কারণে সে সব ছাড়তে হয়েছে। চোখের সামনে বাবা-মায়ের কষ্ট দেখে তাই দেবাশিস জানায়, “ভেবেছিলান পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ার হব। কিন্তু আমাদের মতো ঘরের ছেলেদের বোধহয় ওই স্বপ্ন দেখা বিলাসিতা ছাড়া কিছুই নয়। তাই চাই শিক্ষক হয়ে চাকরি করে সংসারে অভাব ঘুচিয়ে বাবা-মাকে একটু স্বস্তি দিতে। আর চাই আমার মতো যারা দু:স্থ তাদের পাশে দাঁড়াতে। স্কুলের প্রধাম শিক্ষকের কথায়, “ওদের সংসারে যে ভাবে অভাবের মধ্যে ও পড়াশোনা করে এতটা সাফল্য পেয়েছে তাতে আমরা গর্বিত। কেউ সাহায্য করলে ও আরও এগিয়ে যেতে পারবে।” |
|
|
|
|
|