|
|
|
|
শান্তি ফেরাতে লালগড়ে ফুটবল |
বরুণ দে • লালগড় |
ক’মাস আগেও লালগড়ের নাম শুনলে আঁতকে উঠতেন অনেকে। ভাবতেন, এতো সেই খুন-সন্ত্রাস-বারুদের গড়। যেখানে জীবনের ক্যানভাস আঁকা হয় লাল রক্তে। সেই লালগড়েই ফুটবল ম্যাচ করে স্থানীয় যুবদের সমাজের মূলস্রোতে ফেরার আহ্বান জানালের রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র। বললেন, “আপনারা মূলস্রোতে ফিরুন। রাজ্য সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে।” সেই সঙ্গে মন্ত্রীর আশ্বাস, “এমন ফুটবল ম্যাচ ঝাড়গ্রাম, বান্দোয়ান-সহ জঙ্গলমহলের অন্যত্রও হবে। আমরা জঙ্গলমহলের প্রতিভাবান ৫০ জন ফুটবলারকে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেব। তাঁদের নিয়ে
জঙ্গলমহল টিম গড়ব।”
রবিবার দুপুরে লালগড়ের সজীব সঙ্ঘের মাঠে ছিল ফুটবল ম্যাচের আয়োজন। খেলা শুরুর আগে থেকেই উৎসাহী জনতা ভিড় জমাতে শুরু করেন। আতসবাজির রোশনাই। ধারা বিবরণী। গোলের কাছাকাছি বল পৌঁছলেই চিৎকার। মাঠে চুনী গোস্বামী-সহ প্রাক্তন ও বর্তমান ফুটবল তারকাদের উপস্থিতি। সঙ্গে রুপোলি পর্দার কলাকুশলিদের হাজিরা। সব মিলিয়ে যেন এক টুকরো যুবভারতী উঠে এসেছিল লালগড়ে। খেলা শুরুর আগে ধারা বিবরণী দিতে গিয়ে প্রাক্তন ফুটবলার মানস ভট্টাচার্য বলছিলেন, “একটা সময় লালগড়ের কথা শুনে বিভীষিকা হত। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি নেই। এখানে এসে তাই মনে হচ্ছে। যে দিকে তাকাচ্ছি, দেখছি মানুষের ঢল। মেয়েরাও খেলা দেখতে এসেছেন।” মাঠে পৌঁছনোর আগে যে এই উৎসাহ তাঁদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল, তা জানিয়ে চিত্র-পরিচালক হরনাথ চক্রবতী বলেন, “আমি আশাই করিনি লালগড়ে এসে মানুষের এই উৎসাহ দেখতে পাব। এই পরিবেশ সত্যি ভাবা যায় না। সর্বত্র শান্তির বাতাবরণ।” ফুটবলকে ঘিরে লালগড়ের এই উৎসাহ কি ক্যামেরা-বন্দি হবে? হরনাথবাবুর জবাব, “যদি কখনও এমন ছবি করার সুযোগ আসে, তাহলে নিশ্চয়ই লালগড়ের মাঠের এই পরিবেশ সেখানে থাকবে। এমন ছবির কথা যে ভাবছি না, তা-ও নয়।” |
|
খেলা শুরুর আগের মুহূর্তে। |
ম্যাচে মুখোমুখি হয়ে ক্রীড়ামন্ত্রী একাদশ ও জঙ্গলমহল একাদশ। ক্রীড়ামন্ত্রী একাদশের হয়ে খেলেন সন্তোষ ট্রফি জয়ী বাংলার ফুটবলাররা। অন্যদিকে, জঙ্গলমহল একাদশের হয়ে মাঠে নামেন স্থানীয় প্রতিভাবান ফুটবলাররাই। শুরু থেকেই ম্যাচ ঘিরে ছিল উত্তেজনা। সন্তোষ ট্রফি জয়ী কোচ সাবির আলির ছেলেদের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিয়েছেন জঙ্গলমহলের ছেলেরা। প্রথমার্ধের খেলা শেষ হয়ে গোলশূন্য ভাবে। দ্বিতীয়ার্ধের ১৭ মিনিটে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন ক্রীড়ামন্ত্রী একাদশের সন্তোষ ওঁরাও। তবে ম্যাচ হারলেও মাঠে উপস্থিত নজর কাড়ে জঙ্গলমহল একাদশের সুনীল মুর্মু, করমচাঁদ হাঁসদাদের খেলা। সুনীলই ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হন।
শনিবার রাতেই ফুটবল প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে লালগড় এসেছিলেন মদনবাবু। তার আগে শালবনিতে সাতপাটি ফুটবল অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে মন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান অমলেশ চক্রবর্তী বলেন, “গ্রামীণ এলাকায় খেলাধুলোর তেমন সুযোগ নেই। অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা অ্যাডাকেমি গড়তে পেরেছি। মন্ত্রী আমাদের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।” মন্ত্রীর কথায়, “আমি রাতেই লালগড়ে গিয়েছিলাম। কারণ, আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল, প্রতিটি এলাকা থেকে সন্ত্রাস দূর করে শান্তি স্থাপন করা। লালগড়, শালবনিতেও যে শান্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে, রাতে লালগড় যাওয়া তারই প্রমাণ।” |
|
‘ক্রীড়ামন্ত্রী একাদশ’ বনাম ‘জঙ্গলমহল একাদশে’র ফুটবল লড়াইকে ঘিরে
উৎসাহ ছিল তুঙ্গে। |
এ দিন খেলা শুরুর আগে নেতাই গ্রামে যান ক্রীড়ামন্ত্রী। শহিদবেদিতে মাল্যদান করেন। গ্রামবাসীদের দাবি মেনে মন্ত্রী ঘোষণা করেন, “নেতাইতেও ফুটবল ম্যাচ হবে। স্থানীয় ছেলেরা খেলবে।” খেলা দেখতে এদিন সজীব সংঘের মাঠে এসেছিলেন স্থানীয় প্রদীপ মাহাতো, ভরত মুর্মুরা। ম্যাচ দেখে উৎসাহিত প্রদীপ বলেন,“ এই উদ্যোকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। এমন ম্যাচ আগে হয়েছে বলে মনে হয় না।” আর ক্রীড়ামন্ত্রীর বক্তব্য,“ আর অশান্তি নয়। জঙ্গলমহলের মানুষ উন্নয়নের পক্ষে। এবার আমরা প্রগতির পথে এগোব।”
|
ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
|
|
|
|
|