|
|
|
|
দূষণ ছড়ানোয় অভিযুক্ত কাগজকল |
কারখানা বন্ধের নির্দেশ পর্ষদের |
নুরুল আবসার • আমতা |
দূষণ ছড়ানোর দায়ে আমতার শেরপুরের কাগজকল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।
কাগজকলটির বিরুদ্ধে দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ পেয়ে রবিবার সকালে পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কুমার দত্ত নিজেই এলাকায় পরিদর্শনে আসেন। তিনি দেখেন এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ছাড়াই চলছে কাগজকলটির উৎপাদন। ফলে কারখানার বর্জ্য সরাসরি মিশছে খালের জলে। তা থেকে ছড়াচ্ছে দূষণ। উৎপাদন চালু করার আগে কারখানার তরফে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছ থেকে কোনও ছাড়পত্রও নেওয়া হয়নি। এই সব কারণেই কারখানা কর্তৃপক্ষকে এ দিন থেকেই উৎপাদন বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেন তিনি।
আজ, সোমবার চেয়ারম্যান কারখানার মালিককে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদে ডেকেছেন শুনানির জন্য। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র ছাড়া কেন তিনি উৎপাদন চালু করেছিলেন, সে বিষয়ে তাঁর বক্তব্য শোনা হবে। একই সঙ্গে এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট কবে নাগাদ তিনি বসাতে পারবেন সে বিষয়টিও লিখিত ভাবে জানতে চাওয়া হবে। পর্ষদের চেয়ারম্যান বলেন, “যত দিন পর্যন্ত না ইটিপি বসিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র নেওয়া হচ্ছে তত দিন পর্যন্ত উৎপাদন চালু করতে দেওয়া হবে না।” শুধু তাই নয়, পর্ষদের ছাড়পত্র না-নিয়ে এত দিন ধরে উৎপাদন চালানোর জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জরিমানা আদায়ের মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে বলে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি অবশ্য বলেন, “এটা ঠিক হবে শুনানির পরে।” |
|
নিজস্ব চিত্র। |
চেয়ারম্যানের সঙ্গে আসেন সদস্য সচিব সন্দীপন মুখোপাধ্যায় এবং পর্ষদের মুখ্য বাস্তুকার সুব্রত ঘোষ। তাঁরা দেখেন কারখানার বর্জ্য নালা দিয়ে বেরিয়ে সরাসরি পড়ছে খালে। খালের জল নোংরা জমে থিকথিকে হয়ে রয়েছে। ছড়াচ্ছে কটূ গন্ধ। ইটিপি না থাকার ফলেই সরাসরি কারখানার বর্জ্য এসে খালে পড়ছে। চেয়ারম্যান কারখানার আধিকারিকদের বলেন, “আপনারা করেছেন কী? এ ভাবে কেউ কারখানা চালায়? মানুষের যা ক্ষতি হল তা পূরণ করতে পারবেন?”
সকাল ঠিক ১০টার সময়ে কারখানায় ঢুকে পড়েন তাঁরা। কারখানার আধিকারিকদের কাছে তাঁরা জানতে চান, ইটিপি কত দিনের মধ্যে বসবে। জবাব আসে, জুলাই মাসের ২০ তারিখের মধ্যে ইটিপি বসানোর কাজ শেষ হবে। একই সঙ্গে চেয়ারম্যান কারখানার আধিকারিকদের নির্দেশ দেন বর্জ্য পড়ে খালের জল যে ভাবে নোংরা হয়েছে, তা তাঁদেরই সাফ করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
কারখানা-সংলগ্ন দক্ষিণ শেরপুর গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গেও পর্ষদের কর্তারা কথা বলেন। গ্রামবাসীরা তাঁদের দেখান, কী ভাবে খালের জল দূষিত হয়ে গিয়েছে। বহু মহিলা ক্ষোভ উগরে দেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতা অশোক মাজি বলেন, “আমরা কারখানার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু দূষণ বন্ধ করতেই হবে।”
চেয়ারম্যান বলেন, “গ্রামবাসীদের ক্ষোভ ন্যায্য। ২০ জুলাইয়ের মধ্যে এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানো-সহ বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। সেগুলি হয়ে গেলে আমরা ফের পরিদর্শনে আসব। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তবেই উৎপাদন চালু করার অনুমতি দেওয়া হবে।” কারখানাটির মালিক অভিজিৎ ঘোষ জানিয়েছিলেন এখানে পরীক্ষামূলক ভাবে উৎপাদন হচ্ছে। এখনও নিয়মিত উৎপাদন চালু হয়নি। তাঁর এই বক্তব্য খারিজ করে দিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, “যা দেখলাম তাতে বোঝা গিয়েছে, উৎপাদন নিয়মিতই হয়। তবে তা হয়ত পরিমাণে কম। কিন্তু তাতেই এলাকার যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে।”
কারখানাটিতে গত জানুয়ারি মাস থেকে উৎপাদন শুরু হয়েছে বলে গ্রামবাসীরা জানান। কারখানার বর্জ্য সরাসরি এসে মিশছে এই এলাকার অন্তত চারটি খালে। খালের জল দূষিত হয়ে আমতা ১ এবং উলুবেড়িয়া ২ ব্লকের অন্তত ১০টি পঞ্চায়েতের লক্ষাধিক বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ। কারখানা ঘুরে দেখছেন পর্ষদ কর্তারা। |
|
|
|
|
|