আবর্জনা আর দূষণে সঙ্কটের মুখে লালদিঘি
হাকরণের একেবারে নাকের ডগায় লালদিঘির দশা শহরের আর পাঁচটা জলাশয়ের মতোই সঙ্গীন।
ফি বছর রং হচ্ছে মহাকরণে, ‘হেরিটেজ’ তকমা নিয়ে ডালহৌসি নতুন করে সাজছে, কিন্তু লালদিঘির বেহাল দশা ঘোচে না। দিঘির উত্তর পাড়ে, মহাকরণের সামনে মাটির নীচের পার্কোম্যাট থেকে প্রচুর বর্জ্য অবাধে পড়েছে শহরের সব চেয়ে প্রাচীন এই জলাশয়ে।
দিঘির জলের অবস্থাও তথৈবচ। সম্প্রতি জলের নমুনা পরীক্ষা করে তেমনই রিপোর্ট দিয়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। বর্ষাকালে কিছুটা ভাল থাকলেও শীত বা গ্রীষ্মে জলের অবস্থা হয় খুবই খারাপ। তার অন্যতম কারণ, দিঘি ঘিরে দূষণের আধিক্য। পূর্ব পাড়ে মিনিবাসের স্থায়ী স্ট্যান্ড। সেখানেই কলকাতা পুলিশের গাড়ি দাঁড় করানো থাকে। পড়ে রয়েছে প্রচুর বিকল গাড়িও। দিনভর সেই সব গাড়ির গায়েই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেন অফিসপাড়ার পথচলতি মানুষ। প্রস্রাবের স্রোত গিয়ে পড়ে দিঘির জলে। সকাল-সন্ধে ওই পাড়ার বহু মানুষের প্রাতঃকৃত্য সারার জায়গাও দিঘির পাড়। পূর্ব পাড় ধরে গজিয়ে উঠেছে ত্রিপল খাটানো কিছু ঝুপড়ি। সেই সব ঝুপড়ির বাসিন্দাদের রান্না-খাওয়া, জীবন যাপনের যাবতীয় কাজ চলে দিঘির পাড়েই।
আর আছে যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ। পাড় জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে প্লাস্টিক-সহ অন্যান্য বর্জ্য। দিঘির দক্ষিণ-পূর্ব কোণে জড়ো করা প্রচুর জঞ্জাল, বৃষ্টি হলেই যা ধুয়ে গিয়ে মেশে দিঘির জলে। পূর্ব পাড়ে সারা দিন সংগ্রহ করা বর্জ্য প্লাস্টিক জড়ো করেন জঞ্জাল কুড়ুনিরা। দিঘির পাড়ে সেই প্লাস্টিকের ব্যবসাও চলছে রমরমিয়ে। সঙ্গে সন্ধ্যা নামতেই জমজমাট মাদকের ব্যবসাও।
মহাকরণ সংলগ্ন লালদিঘির পাড়ে আবর্জনার স্তূপ। নিজস্ব চিত্র
দিঘির পশ্চিম পাড়ে বিশাল জায়গা জুড়ে একটি ঠিকাদার সংস্থার গুদাম। ডাঁই করা মালপত্রের পাশাপাশি সেখানেই শ্রমিকদের থাকার জায়গা। ফলে দিঘির উপরে চাপ বেড়েই চলেছে। কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, “দিঘি সংস্কারের কাজ শুরু হলে গুদাম ও শ্রমিক আবাস তুলে দেওয়া হবে।” আর পূর্ব পাড়ের ঝুপড়ি? তিনি বলেন, “এ তো সব জায়গাতেই আছে। কলকাতার পুরনো সমস্যা।”
তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার কয়েক দিন পরেই মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, কলকাতা পুরসভা লালদিঘি সংস্কারের কাজ শুরু করবে। দিঘির পরিবেশের উন্নয়ন হবে। চারপাশের পায়ে চলার পথে রঙিন টালি পেতে দেওয়া হবে। বসার জন্য তৈরি করা হবে বাহারি বেঞ্চ-ও। সেই সঙ্গে দিঘির জলের মানোন্নয়নও করা হবে। মেয়রের ওই ঘোষণার পরে দিঘির পাড়ের আগাছা এবং কিছু জঞ্জাল সাফ করা হয়েছে ঠিকই। তবে সংস্কারের মূল কাজ কবে শুরু হবে, তা এখনও জানা যায়নি।
দিঘির দূষণের প্রধান উৎসগুলো অবশ্য রয়েছে বহাল তবিয়তেই। নতুন পার্কোম্যাট হওয়া সত্ত্বেও দিঘির পূর্ব এবং পশ্চিম পাড়ে পার্ক করা থাকে সরকারি আমলা-অফিসারদের প্রচুর গাড়ি। সেই সব গাড়ি এবং দাঁড়িয়ে থাকা মিনিবাসের তেল অনেক সময়েই চুঁইয়ে মাটিতে পড়ে। অল্প বৃষ্টিতে যা গড়িয়ে চলে যায় দিঘিতে। তা ছাড়া, দিঘির পূর্ব পাড়ে সরকারি অফিসারদের গাড়ি থেকে তেল চুরির কারবার চলে প্রকাশ্যেই। গাড়ি থেকে তেল বার করার সময়ে রোজই কিছুটা মাটিতে পড়ে। অল্প বৃষ্টিতেই সেই তেলও পৌঁছে যায় দিঘিতে।
দিঘির সমস্যায় সব চেয়ে বেশি ভুক্তভোগী ‘বিবিডি বাগ অ্যাঙ্গলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সদস্যেরা। মৎস্য দফতরের কাছ থেকে দিঘির জল লিজ নিয়ে তাঁরা সেখানে মাছের চারা ছাড়েন এবং ছিপ দিয়ে মাছ ধরেন। গত কুড়ি বছর ধরে তাঁরা দিঘিতে ছিপ দিয়ে মাছ ধরার ব্যবস্থা করে আসছেন। সংগঠনের সদস্য সুমন্ত গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, তাঁরা ফি বছর দিঘিতে মাছের চারা ছাড়েন। কিন্তু গত কুড়ি বছরে এখানে কেবল ছিপ দিয়েই মাছ ধরা হয়েছে। কখনও জাল ফেলা হয়নি।
সুমন্তবাবুর দাবি, “দিঘিটা যে এখনও পুরো এঁদো হয়ে যায়নি, তার অনেকটা কৃতিত্বই আমাদের।”
সংগঠনের সদস্যেরা জানান, দিঘিতে ১০ থেকে ১৫ কেজি ওজনের রুই, মৃগেল, কাতলা আর কালবোস মাছ আছে। ভেটকি মাছের ওজন ১৫ থেকে ২০ কেজি। এ ছাড়া, ওই জলাশয়ে পুঁটি, চাঁদা, চেলা, শোল, ল্যাটা, কই বা মাগুরের মতো দেশি মাছও আছে প্রচুর। গরমকালে অনেক সময়েই দিঘির জলে অক্সিজেন কমে যাওয়ায় বড় মাছ ভেসে ওঠে। তখন জলে নুন দিতে হয়, পাম্প চালাতে হয় বলে জানালেন ওই সদস্যেরা। দিঘির জলে অক্সিজেন বাড়াতে পুরসভা ফোয়ারা তৈরির পরিকল্পনা করেছে। এতে জলের মান যেমন উন্নত হবে, তেমন সৌন্দর্যায়নও হবে। এ কথা জানিয়ে পুরসভার এক অফিসার বলেন, “দিঘির পাড়ে জোরালো আলো দেওয়া হবে না। তাতে মাছের ক্ষতি হতে পারে।”
First Page Jibjagat Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.