উৎসাহ সিঙ্গুরে: জরিপ শুরু আজ থেকে
জমি ফেরতের আবেদন দিতে দিনভর লাইন
মি ফেরতের ফর্ম বিলির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রবিবার আবেদন করে ফেললেন ১১৪ জন ‘অনিচ্ছুক’ কৃষক।
জমি ফেরতের প্রক্রিয়ায় আরও গতি আনতে আজ, সোমবার থেকে সিঙ্গুরে টাটাদের প্রকল্প এলাকায় জমি জরিপ ও চিহ্নিতকরণের কাজও শুরু হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যে খেতমজুর, বর্গাদার এবং অনথিভুক্ত বর্গাদারদের তালিকা চূড়ান্ত করার কাজও জোরদার গতিতে শুরু হয়ে গিয়েছে।
সিঙ্গুরের জমি ফেরানো নিয়ে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি শনিবার রাতে প্রথম বৈঠক করে। আর রবিবারই সিঙ্গুর ব্লক অফিসে নোটিস দিয়ে ফর্ম বিলির পরে দেখা যায়, আবেদনপত্র জমা পড়তে শুরু করেছে। রাতেও ব্লক অফিসের সামনে ছিল লম্বা লাইন।
চলছে ফর্ম বিলি। সিঙ্গুর বিডিও অফিসে। রবিবার তাপস ঘোষের ছবি।
ক্ষমতায় এসে সিঙ্গুরের জমি ফেরাতে আইন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। জারি হয় সংশ্লিষ্ট বিধিও। কিন্তু ওই আইন ‘অসাংবিধানিক’ দাবি করে টাটা গোষ্ঠী কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছে। সেই মামলার শুনানি চলছে। তার মধ্যেই ওই জমি নিয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে রাজ্য সরকারের কাছে আলোচনার আবেদন জানিয়েছে টাটা মোটরস।
কিন্তু সেই আবেদনকে যে রাজ্য সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না, তা স্পষ্ট এ দিনের বিজ্ঞপ্তি জারি ও আবেদনপত্র বিলিতে। হুগলির জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজনের সই করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের জমি ফেরত পেতে আবেদন করতে হবে। সেই সঙ্গে অধিকার, দাবি বা আপত্তির কাগজপত্রও জমা দিতে হবে। আগামী ২২ জুলাইয়ের মধ্যে এই আবেদন সিঙ্গুরের ব্লক অফিসে জমা দিতে হবে। ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকের থেকে অধিগৃহীত জমির সম পরিমাণ জমিই ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু কৃষকের নির্দিষ্ট জমিটি ফেরত দেওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে বলে আইনে এবং বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ রয়েছে।
রবিবার, ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও সিঙ্গুরে জমি বণ্টন প্রক্রিয়া ঘিরে প্রশাসনিক তৎপরতা ছিল জোরদার। ব্লক অফিস ছাড়াও কামারকুণ্ডু সিনেমাতলা, বেড়াবেড়ি পূর্বপাড়া, গোপালনগরে শিবির করে আবেদনপত্র বিলি করা হয়। শ’য়ে শ’য়ে কৃষক ওই আবেদনপত্র সংগ্রহের জন্য লাইন দেন। অল্প সময়ের মধ্যে চার হাজার আবেদনপত্র নিঃশেষ হয়ে যায়। এ দিনই কৃষকদের পূরণ করা আবেদনপত্র জমা নেওয়াও শুরু হয়ে যায় পঞ্চায়েত সমিতির সভাগৃহে। ১৫টি টেবিলে দু’জন করে ব্লক-কর্মী সেই ফর্ম জমা নিতে থাকেন। তা চলে রাত পর্যন্ত। গোটা বিষয়টি তদারক করেন সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রতিমা দাস, বিডিও পুলক সরকার, বিএলএলআরও প্রবাল বাগাল, সিঙ্গুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এবং কৃষিজমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক তথা হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্না।
প্রশাসনিক হিসাবে, সিঙ্গুরে ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকের সংখ্যা প্রায় ২,৯০০। অর্থাৎ, যাঁরা জমির বিনিময়ে চেক নেননি। কিন্তু প্রশাসনেরই একটি মহল মনে করছে, ওই সংখ্যা আরও বাড়বে। কেননা, মালিকানা অনুযায়ী অনেক জমিরই কাগজপত্র যথাযথ নেই। তা ছাড়া, এই ক’বছরে কোনও জমির মালিকের মৃত্যু হয়ে থাকলে এবং তাঁর একাধিক উত্তরাধিকারী থাকলে, জমি-প্রাপকের সংখ্যা বাড়বে।
সিঙ্গুর প্রকল্প এলাকায় গ্রামবাসীদের প্রবেশ আটকাতে ব্যবস্থা। রবিবার দীপঙ্কর দে-র তোলা ছবি।
টাটাদের প্রকল্প এলাকার ওই জমিদাতাদের ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’ এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। বেচারাম মান্না বলেন, “যে সব জমিদাতার কাগজপত্র যথাযথ রয়েছে, তাঁদের এ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। যে সব ক্ষেত্রে জমির মিউটেশন হয়নি বা সরকারি কাগজপত্র যথাযথ নেই, সেই সব জমিদাতা বি শ্রেণিভুক্ত। এ ক্ষেত্রে আমরা ওই সব জমির কাগজপত্র তৈরির কাজও শুরু করেছি। আর সি হচ্ছে, যে সব জমি নিয়ে মামলা রয়ে গিয়েছে।”
এ সব জটিলতার কথা অবশ্য ভাবছেন না সিঙ্গুরের সাধারণ কৃষকেরা। তাঁরা জমি ফেরত পাবেন, এই আনন্দেই মাতোয়ারা। জয়মোল্লার বাসিন্দা শেখ মোশারফ প্রথম দিনেই আবেদনপত্র নিয়েছেন ব্লক অফিস থেকে। তিনি বলেন, “আমার এক বিঘা জমি রয়েছে প্রকল্পে। আন্দোলনের প্রথম দিন থেকে ছিলাম। এত দিনে আশা পূর্ণ হল।” সানাপাড়ার সঞ্জয় মাইতি বলেন, “যে দিন জমি ফেরত পাব, তার পর দিন থেকেই চাষ করব।”
স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী বলেন, “আপাতত আবেদনপত্রগুলির সঙ্গে কৃষকেরা যে সব নথিপত্র দিচ্ছেন, তা পরীক্ষা করা হবে। সরকারি নথিতে যা আছে, তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। তার পরেই জমি ফেরত দেওয়ার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে।”
এক দিকে যখন আবেদনপত্র বিলি এবং জমা নেওয়ার কাজ চলছে, তখন এ দিনই টাটাদের প্রকল্প এলাকায় কাঁটাতার দিয়ে পাঁচিলের ফাঁকফোকর বোজানোও শুরু করেছে পুলিশ।
Previous Story South Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.