ঝাড়গ্রাম-খড়্গপুর হয়ে রাতে কলকাতার দিকে ট্রেন চালু করার দাবি উঠে এল ভোটের প্রচারে। জামশেদপুর উপ-নির্বাচনের প্রচারে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরাই ভোটে জিতলে এই ট্রেন চালুর বিষয়টি নিয়ে তৎপর হওয়ার কথা বলছেন।
সম্প্রতি শহরের অন্যতম বিশাল রাজনৈতিক সমাবেশে ইস্পাত-নগরীর এগ্রিকো ময়দানে এই ট্রেন চালুর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সরব হন বিজেপি প্রার্থী দীনেশানন্দ গোস্বামী। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি নিতিন গড়কড়ী ও মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার উপস্থিতিতে ওই সভায় গোস্বামী বলেন, “এক বছরের বেশি কেটে গেল দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের রেললাইনে রাতে ট্রেন চলছে না। ব্যাপাটা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ভোটে জিতলে সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনে আমরা প্রসঙ্গটি তুলব।” |
ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলায় জামশেদপুর লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায় ট্রেনের অপ্রতুলতা নিয়েও গোস্বামী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “রেলের তরফে আমাদের দীর্ঘ দিন ধরে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ২০০৪ সালের পরে এ তল্লাটে কোনও নতুন ট্রেন হয়নি।” গোস্বামী প্রধানত, এ রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া অংশ ঘাটশিলা, ধলভূমগড়, চাকুলিয়া ইত্যাদি এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “ওই সব অঞ্চলের বহু মানুষ জামশেদপুরে মজুরের কাজ করতে আসেন। অথচ, সকাল-সকাল জামশেদপুরে আসার কোনও লোকাল ট্রেন নেই। ট্রেন থাকলে তাঁদের সুবিধা হত। বাড়ি থেকেই ওঁরা কাজ করতে আসতে পারতেন।” এমনিতে কলকাতা বা খড়্গপুর থেকে জামশেদপুর বা ঘাটশিলা যাওয়ার ট্রেন থাকলেও তা পৌঁছতে পৌঁছতে বেলা গড়িয়ে যায় ফলে, রুজির টানে জামশেদপুরগামী জনতার কোনও সুবিধাই হয় না।
ইস্পাত-নগরীর সঙ্গে কলকাতার রাতে ট্রেনের সংযোগ বন্ধ হয়ে আছে সেই জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ড থেকেই। গত বছর ২৮ মে-র রাতে ঝাড়গ্রামের কাছে সরডিহায় জ্ঞানেশ্বরীর নাশকতা ঘটনা ঘটেছিল। এর পর থেকে খড়্গপুর, আদ্রা এ চক্রধরপুর---দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এই তিনটি ডিভিশনেই রাতে ট্রেন চলছে না। এর পরে খড়্গপুর ও ওড়িশার রৌরকেলা অবধি রাতের ট্রেন বন্ধ। এর জন্য সব থেকে বেশি ভুগতে হচ্ছে জামশেদপুরের বাসিন্দাদের। সাধারণ নাগরিকদের অভিজ্ঞতায়, নিকটতম মেট্রোশহর কলকাতা থেকে সকালে ট্রেন বা বিমান ধরা থেকে শুরু করে কলকাতায় কোনও কাজে সকালে পৌঁছতে হলে কার্যত কোনও উপায় নেই। বিষয়টি নিয়ে শহরের রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কেউ জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন। জামশেদপুরে ব্যবসায়ীদের সম্মিলিত মঞ্চ সিংভূম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর তরফে বেশ কয়েকবার বিক্ষোভ-অবস্থান নেওয়া প্রতীকী অনশন-এর কর্মসূচি পালনও হয়ে গিয়েছে। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, দেশের শতকরা ৪০ ভাগ খনিজ সম্পদ জামশেদপুরের আশপাশে। ওই খনিজ পরিবহণের কাজে রাতের ট্রেন না-থাকার দরুণ সমসা হচ্ছে। চেম্বার অব কমার্সের কর্তারা রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মারকলিপি জমা দিয়েও বার বার বলেছেন যে, রাতের ট্রেন না-চলার জন্য এই অঞ্চলের নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য ও বিকাশ দু’টোই ব্যাহত হচ্ছে।
ইতিমধ্যে রেলের একটি অনুষ্ঠানে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডাও রাতের ট্রেন চালুর বিষয়ে ঝাড়খণ্ড সরকারের তরফে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখনও বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। বাম জমানার অবসানের পরে রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হওার পরেও বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি। ঘটনাচক্রে মমতার দল তৃণমূলও জামশেদপুরের ভোটে লড়ছে। তৃণমূল প্রার্থী সুমন মাহাতোর বক্তব্য, “জনতার নিরাপত্তাও একটি বড় প্রশ্ন। মমতাদি বা তৃণমূল কখনওই চাইবে না মানুষ অহেতুক সমস্যায় পড়ুক।” ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রার্থী সুধীর মাহাতোও জিতলে সংসদে রাতের ট্রেন চালুর সমস্যা নিয়ে সরব হওয়ার কথা বলছেন। |