|
|
|
|
তার ছিঁড়ে খয়রাশোলে মৃত্যু বালিকার, জখম ১ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খয়রাশোল |
স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বাড়ি ফেরার সময়ে মাথায় হাইটেনশন তার ছিঁড়ে পড়ায় মৃত্যু হল ১২ বছরের এক বালিকার। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে খয়রাশোলের লোকপুর বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া আলিয়টকামারপাড়া এলাকায়। মৃত বালিকার নাম টুম্পা খাতুন। ওই এলাকায় তার বাড়ি। এই ঘটনায় একটি শিশু জখম হয়েছে। এর পরে এলাকার ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা ক্ষতিপূরণের দাবিতে দেহ আটকে রাখেন। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় প্রায় ৩ ঘণ্টা পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
বাসিন্দাদের ক্ষোভ, বিদ্যুৎ দফতরের উদাসীনতার জন্য এমন ঘটনা ঘটেছে। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় হাইটেনশন তারগুলি খারাপ হয়ে রয়েছে। মাঝে মধ্যে তার ছিঁড়েও পড়ছে। সংশ্লিষ্ট দফতরে বহুবার জানিয়েও ফল হয়নি। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির জেলা আধিকারিক কৃষ্ণকান্ত মিশ্র বলেন, “আমাদের দফতরের গাফিলতির জন্য যদি ঘটনাটি ঘটে থাকে, তা হলে নিয়ম অনুযায়ী মৃতার পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। তদন্ত করে দেখতে ইতিমধ্যে দফতরের আধিকারিকদের পাঠানো হয়েছে।” |
|
টুম্পা খাতুনের শোকার্ত পরিবার। নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে চিকিৎসার জন্য লোকপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েছিল আলিয়ট স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী টুম্পা। সঙ্গে ছিল খুড়তুতো দিদির তিন বছরের ছেলে শেখ নাজির। মাঠ দিয়ে বাড়ি নাজিরকে কোলে নিয়ে টুম্পা বাড়ি ফিরছিল। আচমকা হাইটেনশন তার টুম্পার মাথার উপরে ছিঁড়ে পড়ায় নাজির ছিটকে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে পুড়ে যায় টুম্পার দেহ। এর পরেই তাঁরা বিদ্যুৎ দফতরে জানিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করান। জখম নাজিরকে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মৃতদেহ ঘিরে ভিড়। ছেঁড়া তাদের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে টুম্পার দগ্ধ দেহ। একটু দূরেই আত্মীয়ের কোলে নাজির। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দা তরুণকুমার ঘোষ, সফিক খান, শেখ মুজিবুলদের ক্ষোভ, “এলাকার বিদুৎ পরিষেবা এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া হাইটেনশন তার বদলে দেওয়ার দাবি নিয়ে বহুবার বিদ্যুৎ দফতরের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এর আগেও একাধিকবার তার ছিঁড়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে কারও মৃত্যু না হলেও এ বার ঘটল। বহু এলাকায় খুঁটির সঙ্গে তারগুলি কোনও ভাবে আটকে রয়েছে। আবার যে কোনও সময়ে তা ছিঁড়ে পড়তে পারে।”
তারগুলি যে সত্যিই বদলানো প্রয়োজন, তা মনে করেন খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সিপিএমের সমীর রায়। তিনি বলেন, “দুর্ঘটনা হলেও এর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগই দায়ী।” তার খারাপ থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির জেলা আধিকারিক কৃষ্ণকান্ত মিশ্র। তিনি বলেন, “রাতারাতি এক সঙ্গে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার তার পাল্টানো সম্ভব নয়। তবে এর কাজ চলছে। আগে লোহার তার ছিল। এখন অ্যালুমিনিয়ামের তার দেওয়া হচ্ছে। ওই এলাকায়ও ওই তার দেওয়া হবে।” এ দিকে, টুম্পার মৃত্যুতে শোকে ভেঙে পড়েছে তার পরিবার। দিনমজুর বাবা কাজে বাইরে থাকায় মা সারেমা বিবিকে আর অসহায় দেখাল। তিনি বলেন, “এ ভাবে মেয়েটা শেষ হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। ফোঁড়া হয়েছিল। তাই বললাম ডাক্তার দেখিয়ে আয়। কিন্তু মেয়ে আর ফিরবে না কে জানত!’’ মায়ের মতো তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছে টুম্পার তিন ভাই বোনও। আর নিজের ছেলেকে ফিরে পেলেও বোনের মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না টুম্পার খুড়তুতো দিদি নাজিরা বিবি। |
|
|
|
|
|