কম খরচে পেয়ারা চাষে আগ্রহ বাড়ছে পূর্বস্থলীতে
গে ছিল ধান, পাটের মতো গতানুগতিক চাষ। ঘোর অনিশ্চয়তা ছিল তাতে। কোনও বছর চাষিদের লাভ হত। কোনও বছর আবার লোকসানের জেরে জর্জরিত হতে হত ঋণের জালে। তবে বিকল্প হিসাবে এখন পেয়ারার চাষ করছেন পূর্বস্থলী-১ ব্লকের শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত এলাকার চাষিরা। এতে তাঁদের অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে বলে দাবি।
কালনা শহর থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দূরে এসটিকেকে রোডের পাশে রয়েছে শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত। ঝাঁ চকচকে এই পঞ্চায়েতের আশপাশে রয়েছে উত্তর শ্রীরামপুর, বিদ্যানগর, ছোট কোবলা, রাজ্য ধরপাড়া, গঙ্গানন্দপুরের মতো কয়েকটি প্রত্যন্ত গ্রাম। পুরনো গ্রামগুলির মাঝে সার দিয়ে মাথা তুলেছে পেয়ারা গাছ। জমির কাছাকাছি অস্থায়ী ঘর চাষিদের। গাছ থেকে পেড়ে আনা পেয়ারা সেখানে ঝুড়ি ভর্তি করে রাখা হচ্ছে। কোনও কোনও বাগানে পেয়ারা পাড়তে না পাড়তেই ব্যবসায়ীদের লম্বা লাইন। ট্রেন-বাসে চড়ে সেই পেয়ারা চলে যাচ্ছে শিলিগুড়ি, ঝাড়খণ্ড, ধানবাদের মতো নানা জায়গায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যেও এলাকার পেয়ারা নিয়ে রয়েছে বিশেষ উৎসাহ। অনেকে বাগান থেকে ডাঁসা পেয়ারা নিয়ে গিয়ে হাটেবাজারে বিক্রি করছেন। চাষিদের দাবি, ঠিক মতো চাষ করা গেলে বিঘা প্রতি জমিতে লাভ রয়েছে দশ হাজার টাকারও বেশি।
নিজস্ব চিত্র।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় পেয়ার চাষ হচ্ছে প্রায় বছর দশেক। প্রথমে চার জন চাষি বারুইপুর থেকে চারা এনে নিজেদের জমিতে পোঁতেন। তাঁদের হাতে-কলমে লাভ পেতে দেখে উৎসাহিত হন অন্যরাও। ক্রমে বাড়তে থাকে চাষের এলাকাও। পঞ্চায়েতের হিসেবে, বর্তমানে পেয়ারা চাষের জমির পরিমাণ হাজার বিঘারও বেশি। চাষিদের দাবি, গতানুগতিক আলু, পাট, ধান চাষের থেকে পেয়ারা চাষে খরচ কম। লাগানোর সময় চারাগাছের গোড়ায় দিতে হয় উর্বর সার। তবে এক বার চারা পুঁতলে পাঁচ থেকে ছ’বছর ভাল ফলন মেলে। গাছের বয়স বেশি হলে অবশ্য পেয়ারার আকৃতি ছোট হয়ে যায়। বন্যা বা ভয়ঙ্কর ঝড়ের মতো বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া পেয়ারা গাছ সহজে নষ্ট হয় না। চাষে কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার লাগে কম। তবে গোটা বছর ধরেই পেয়ারা বাগানে পড়ে থেকে গাছের পরিচর্যা করতে হয় চাষিদের।
শ্রীরামপুরের পেয়ারা চাষি জগবন্ধু ঘোষ বলেন, “লাভের নিশ্চয়তা থাকায় চাষের এলাকা ক্রমেই বাড়িয়েছি।” ছোট কোবলা গ্রামের চাষি কাশীনাথ বাগের কথায়, “পেয়ারা চাষের জন্য জমি তৈরি করতে হয় না। কম খরচে বেশি লাভ মেলায় এলাকায় ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই চাষ।
এলাকায় বিকল্প চাষ হিসাবে পেয়ারার জনপ্রিয়তার কথা স্বীকার করেছে শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত। এই পঞ্চায়েতের প্রধান যশোদা মণ্ডল বলেন, “পেয়ারা চাষ লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় মানুষ গতানুগতিক ধান-আলুর চাষ ছেড়ে দিচ্ছে। বিকল্প চাষে পঞ্চায়েত চাষিদের পূর্ণ সহযোগিতা করছে।” শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত এলাকায় পেয়ারা চাষের ব্যাপ্তির খবর পৌঁছেছে পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক স্বপন দেবনাথের কাছে। তাঁর কথায়, “এলাকায় প্রচুর স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। এই সমস্ত গোষ্ঠীর সদস্যদের পেয়ারা থেকে জ্যাম-জেলি তৈরি করার প্রশিক্ষণ দেওয়ার ভাবনা রয়েছে আমাদের। এমন কাজ সফল ভাবে করা গেলে চাষিরা পেয়ারা চাষ সম্বন্ধে আরও উৎসাহিত হবে। বিধায়কের দাবি, “শুধু শ্রীরামপুর নয়, এই চাষে আগ্রহী হচ্ছেন সংলগ্ন সমুদ্রগড় পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারাও।”
Previous Story Bardhaman Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.