এক্স-জমিদারি বাঁধ বেহাল, দায় এড়াতে ব্যস্ত দু’পক্ষই
ভাগীরথীর বাঁধের জন্য রয়েছে সেচ দফতর। কিন্তু অজয় নদের দু’পাশে মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামের এক্স-জমিদারি বাঁধ কারা মেরামত করবে, সংশয় দেখা দিয়েছে তা নিয়ে। আর বাঁধ সংস্কার নিয়ে সেচ দফতর ও জেলা পরিষদের মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে চাপানউতোর।
স্বাধীনতার আগে ও পরবর্তী সময়ে গ্রামের বাসিন্দারা বিভিন্ন নদীর ধারে স্থানীয় জমিদারদের জায়গার উপরে বাঁধ নির্মাণ করান। ১৯৬৪ সালের পর থেকে সেই সব বাঁধ অধিগ্রহণ করে সেচ দফতর। সেগুলি স্থানীয় ভাবে এক্স-জমিদারি বাঁধ হিসাবে পরিচিত।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলকোটের ২৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে মাত্র ৫ কিলোমিটার বাঁধই রক্ষণাবেক্ষণ করে দামোদর ক্যানাল ডিভিশন। তেমনই কেতুগ্রামে রসুইগ্রামের বাঁধ দেখভাল করে ময়ূরাক্ষী ক্যানাল ডিভিশনের মুর্শিদাবাদের সালার সাব-ডিভিশন। ওই অংশটুকু ছাড়া গোটা বাঁধই কার্যত অনাথ। প্রতি বছরেই বর্ষার সময় অজয়ের জল বিপদসীমা ছুঁলেই বাঁধের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে। তখন স্থানীয় ভাবে খারাপ জায়গাটুকুরই সংস্কার করা হয়। সাময়িক ভাবে বিপদ কাটে। তবে অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয় না।
এই বাঁধ নিয়েই চলছে টানাপোড়েন। নিজস্ব চিত্র।

শুধু মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রাম নয়। একই অবস্থা কাটোয়া ও দাঁইহাটে ভাগীরথীর উপরে থাকা এক্স-জমিদারি বাঁধেরও। বেশ কয়েক বছর আগে বর্ধমানের তৎকালীন জেলাশাসকের উদ্যোগে পুর দফতর ওই এক্স-জমিদারি বাঁধের জন্য টাকা বরাদ্দ করেছিল। বর্তমানে সেই বাঁধেরও অবস্থা খারাপ। আর তাই বাঁধের পাড়ে থাকা বাসিন্দারা দুশ্চিন্তাকে সঙ্গী করেই বেঁচে থাকেন বর্ষায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কেতুগ্রামের চড়খি, বিল্লেশ্বর, ত্যাওড়া, রসুই, গণফুল, ভাণ্ডারগড়িয়া, মঙ্গলকোটের মাঝখাঁড়া, পালিগ্রাম, সাঁতলা, ব্রহ্মপুর-সহ বেশ কিছু জায়গায় বাঁধ বেশ পলকা। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, জল বাড়লেই বাঁধ ভাঙার উপক্রম হবে। কেতুগ্রামের রসুই গ্রামের বাসিন্দা তপন রায় কিংবা সিপিএম নেতা শের আলি বলেন, “প্রতি বছর অজয় নদের কেতুগ্রামের দিকে বাঁধ ভাঙবে, এমনটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামবাসীরাই তৎপর হয়ে বাঁধ সংস্কার করে থাকেন।” মঙ্গলকোটের পালিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান নবকুমার মণ্ডলের কথায়, “জল বাড়লে কী হবে, বুঝতে পারছি না।”
অজয় ও ভাগীরথীর এক্স-জমিদারি বাঁধের অবস্থার পরিবর্তন হোক, এমনটাই চান বাসিন্দারা।
কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এক্স-জমিনদারি বাঁধগুলি সেচ দফতরই অধিগ্রহণ করলে ভাল হয়। বিশেষজ্ঞরা বাঁধ সংস্কার করলে মানুষেরও দুশ্চিন্তা কিছুটা কমবে।”
কিন্তু সেচ দফতরের দামোদর ক্যানাল ডিভিশনের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “এক্স-জমিদারি বাঁধ আমরা সংস্কার করছি না। জেলা পরিষদকেই এগিয়ে আসতে হবে।” আবার, ময়ূরাক্ষী ক্যানাল ডিভিশনের সালারের সহকারী বাস্তুকার প্রদীপ দাস বলেছেন, “কেতুগ্রামের অজয় নদের উপরে রসুইগ্রামের বাঁধের কিছুটা অংশ আমাদের। বাকিটা কাদের দায়িত্বে রয়েছে ঠিক বলতে পারব না।” বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি উদয়শঙ্কর সরকার অবশ্য বলেন, “এক্স জমিদারি বাঁধ শুধু মাত্র জেলা পরিষদের পক্ষে সংস্কার করা সম্ভব নয়। সেচ দফতরকেও এগিয়ে আসতে হবে।”
বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কারসিংহ মিনা বলেন, “সেচ দফতরের আধিকারিকদের সমস্ত বাঁধ ঘুরে রিপোর্ট তৈরি করতে বলেছি। রিপোর্ট পাওয়ার পরেই বাঁধ সংস্কার নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বাসিন্দারা এখন সেই অপেক্ষাতেই।

First Page Bardhaman Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.