বলিউডে অবশ্য এই ট্রেন্ডটা বেশ সাফল্য পেয়েছে সম্প্রতি। ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’ সুপারহিট। ছবি তৈরি হচ্ছে র্যাগিংয়ের শিকার আমন কচরুকে নিয়েও। প্রকাশ ঝা-এর নতুন ছবি ‘আরক্ষণ’-এর কেন্দ্রে আছে সংরক্ষণ-রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক। এই ঢেউয়ে টলিউড যে পিছিয়ে নেই, সেটাও দেখা যাচ্ছে এ বার।
বারাসত ও বামনগাছিকে এক সুতোয় বুনেছেন চিত্রনাট্যকার পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। বললেন, “ছবির নায়ক অনন্ত দাস এক জন সাধারণ মানুষ। যে রিকশাওয়ালাকে বোকা বানিয়ে একটি ছেঁড়া নোট চালিয়ে দেন। চোখের সামনে দিদিকে বাঁচাতে গিয়ে ভাই খুন হয়ে গেলেও নিরুত্তাপ থাকেন। এক দিন অনন্তের মেরুদণ্ডে ব্যথা হয়। চিকিৎসক জানান, তাঁর মেরুদণ্ড ক্রমশ সোজা হয়ে যাচ্ছে। এর পরেই লোকটি অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটাতে থাকেন। ছেলে-কোলে বাবার দিকে ধেয়ে আসা অবরোধকারীদের ছাতার খোঁচা দেন। ভাইয়ের হত্যাকারীদের শাস্তি দিতে দিদির পাশে দাঁড়ান।” সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক আঙ্গিকের এই ছবিতে অভিনয় করছেন তাপস পাল, পাওলি দাম, সোনালি চৌধুরী থেকে শুরু করে রঘুবীর যাদবের মতো বলিউডের অভিনেতাও।
রিঙ্কুর চরিত্রে অভিনয় করছেন সোনালি। তিনি বলেন, “রাজীবের মৃত্যুর খবর কাগজে পড়ার পরে আমি অনেক ক্ষণ কেঁদেছিলাম। আমি সেই মেয়ের চরিত্র করছি, যে এত বড় ঘটনার পরেও অপরাধীদের চিনিয়ে দিয়ে তাদের গালে চড় কষাতে ভয় পায়নি। এই প্রথম সত্যিকারের এমন একটা চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত।” পাওলি অভিনয় করছেন এক সাংবাদিকের চরিত্রে। পাওলি বলেন, “এই ছবি বাণিজ্যিক হলেও তাতে সামাজিক বার্তা রয়েছে। আমি চেষ্টা করছি, সাংবাদিক হিসেবে আমার চরিত্রের মধ্য দিয়ে যেন একটা ইতিবাচক ইমপ্যাক্ট তৈরি হয়।”
সংবাদ থেকে কাহিনি আহরণ করে তৈরি ছবি কি হিট করার সম্ভাবনা বেশি থাকে? মেট্রোর সামনে এক মহিলার নির্যাতনের খবরকে কেন্দ্র করে ‘দহন’ উপন্যাস লিখেছিলেন সুচিত্রা ভট্টাচার্য। পরে তা থেকে সিনেমা তৈরি করেন পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ। ঋতুপর্ণ মনে করেন, “তাৎক্ষণিক কোনও চাঞ্চল্যকর খবরকে শিল্প-সাহিত্যে রূপ দিতে গেলে স্থায়ী কিছুর প্রয়োজন হয়। খবরের বাইরে সেটা কতটা শিল্পে পরিণত হচ্ছে, তার আবেদন ফুরিয়ে যাচ্ছে কিনা, সে সব পরিচালকের উপরে নির্ভর করে।” সহজ করে ঋতুপর্ণ বলেন, “খবর নিয়ে তো পুলিশ-ডায়েরিও তৈরি হয়। সেটা তো চলচ্চিত্র নয়। ‘দহন’ যেমন শেষ পর্যন্ত নিছক প্রতিবাদের গল্প না থেকে দু’জন অপরিচিত মহিলার মধ্যে একটা যোগসূত্রও তৈরি করে।”
‘আটটা আটের বনগাঁ লোকালে’র পরিচালক দেবাদিত্য কী বলছেন? তাঁর কথায়, “এই খবরগুলো মানুষকে ভীষণ নাড়া দিয়েছে। তাই সেগুলো আরও বেশি মানুষের মনে গেঁথে দিতেই সিনেমাটা তৈরি হচ্ছে। বারাসতে রাজীবের বাড়ি গিয়ে রিঙ্কুর সঙ্গে কথাও বলেন সোনালি। রিঙ্কু বললেন, “সোনালি আমার কাছ থেকে ঘটনাটা শুনে কাঁদছিল। আমি চাই, এই ঘটনা যেন আর কারও সঙ্গে না ঘটে। সিনেমাটা হলে নিশ্চয়ই আরও অনেকে সচেতন হবে।” |