|
|
|
|
অপেক্ষায় ৩০০ রোগী,
ছ’মাসেও চালু হয়নি ওটি
পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
মমতা দেখুন : আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ |
|
|
কারও মুখের ক্যানসারের ক্ষত বাড়তে বাড়তে গলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্ঘটনায় মুখের হাড়গোড় ভেঙে কারও মুখ বিকৃত হয়ে গিয়েছে। কেউ দাঁতের টিউমারের যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। অস্ত্রোপচারের জন্য নাম লেখানো রয়েছে তিন মাস, ছ’মাস, এক বছর বা দু’বছর আগে। কিন্তু মাথা কুটেও অস্ত্রোপচারের ডেট মিলছে না। অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষমাণ এমন গুরুতর রোগীর সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে রাজ্যের শ্রেষ্ঠ সরকারি দাঁতের হাসপাতাল আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজে।
অথচ, মাত্র ছ’মাস আগে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উদ্বোধন করা নতুন ইমার্জেন্সি ট্রমা সেন্টার, অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার (ও টি), আই সি ইউ পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। গত ২১ ডিসেম্বর হাসপাতালের ওই কেন্দ্রের উদ্বোধনের পরে বুদ্ধবাবু জানিয়েছিলেন, চার-পাঁচ দিনেই সেটি কাজ শুরু করবে। কার্যক্ষেত্রে সেখানে এখনও একটিও অস্ত্রোপচার হয়নি। ডেন্টাল কলেজের কার্যনির্বাহী অধ্যক্ষ দিব্যেন্দু মজুমদার নির্লিপ্ত গলায় বলেছেন, “অপারেশন হয়নি তো হয়নি! কবে হবে, তা-ও জানি না। হ্যাঁ, ৩০০ রোগী অপেক্ষায় আছেন। থাক। তাতে হয়েছেটা কী?” কিন্তু বুদ্ধবাবু যে চার-পাঁচ দিনে কাজ শুরুর কথা বলেছিলেন? তাঁর উত্তর, “সেটা বুদ্ধবাবুকেই জিজ্ঞাসা করুন।”
কবে চালু হবে ট্রমা সেন্টার, ও টি এবং আই সি ইউ? গলায় আরও নির্লিপ্তি এনে দিব্যেন্দুবাবুর জবাব, “কোনও দিন না-ও হতে পারে। কোনও সময়সীমা নেই। কবে শুরু হবে, জানি না। আপনার কী অসুবিধা হচ্ছে?” রোগীদের চরম ভোগান্তি নিয়ে গত ১৪ জুন ওই ডেন্টাল কলেজেরই কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করা হয়েছে।
চিঠিতে চিকিৎসকেরা লিখেছেন, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের রোগীদের জন্য। মুখ ও দাঁতের গুরুতর সমস্যায় আক্রান্তদের বড় অস্ত্রোপচারের জন্য এখানে রাখা হয়। কিন্তু মাত্র ১০টি শয্যায় সারা পশ্চিমবঙ্গের রোগীদের চাপ সামলানো অসম্ভব বলেই নীলরতনের পাশে ৫.৫৫ একর জমিতে দু’টি ভবন তৈরি করে ১০০টি শয্যা, ট্রমা সেন্টার, অপারেশন থিয়েটার, আই সি ইউ চালুর পরিকল্পনা হয়েছিল। সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও যা চালু হওয়ার নামগন্ধ নেই। গত ডিসেম্বরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একটি ভবন উদ্বোধন করে যাওয়ার পরে ডেন্টাল কলেজের মাইনর ও টি থেকে অস্ত্রোপচারের দু’টি চেয়ার ও বেশ কিছু যন্ত্রপাতি সেখানে এনে ফেলে রাখা হয়েছে। ফলে চেয়ার আর যন্ত্রের অভাবে মূল হাসপাতালে ছোটখাটো অস্ত্রোপচারও দিনে ছ’টার বেশি হচ্ছে না।
জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের আরও অভিযোগ, কার্যনির্বাহী অধ্যক্ষ দিব্যেন্দুবাবু অধিকাংশ সময়েই হাসপাতালে আসেন না। সম্প্রতি দীর্ঘ অনুপস্থিতির সময়ে তিনি চিকিৎসক জীবন মিশ্রকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলাতে দেন। সেই জীবনবাবু আবার ১ মার্চ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে বদলি হয়েছেন। কিন্তু এখনও সেখানে কাজে যোগ না-দিয়ে আর আহমেদেই রয়েছেন। দিব্যেন্দুবাবু এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি আর জীবনবাবু যুক্তি দিয়েছেন, কিছু সমস্যা ছিল বলে তাঁর যাওয়া হয়নি। সামনের সপ্তাহেই তিনি বর্ধমান যাবেন। হাসপাতালের সদ্য প্রাক্তন চিকিৎসক রাজু বিশ্বাস বলেন, “কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে হাসপাতালের শোচনীয় অবস্থা। গরিব মানুষগুলোর অন্যত্র যাওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই মাসের পর মাস অস্ত্রোপচারের আশায় নাম লিখিয়ে বসে আছেন।”
অপেক্ষমাণ ৩০০ জন রোগীর কয়েক জন হলেন বেলেঘাটার সঞ্জয় দাস, আজুরা বিবি, খড়দহের মিঠু মুখোপাধ্যায়, বারুইপুরের ইলা ভৌমিক, ডায়মন্ড হারবারের নমিতা হালদার, হাসান আলি, এ ভৌমিক প্রমুখ। ১৭ বছরের সঞ্জয় দাসের দাঁতে ক্যানসার। সে গত তিন মাস ধরে নীলরতনে আর আহমেদের জন্য নির্দিষ্ট শয্যায় ভর্তি আছে। কিন্তু কোনও অজানা কারণে তার অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। তার ক্যানসার বাড়তে বাড়তে গলায় চলে এসেছে। গুরুতর অসুস্থ কিশোর কোনওক্রমে বলে, “মুখ্যমন্ত্রীকে একটু জানান। যদি আমাদের জন্য কিছু করতে পারেন।” |
|
|
|
|
|