এইচ পাইলোরি ব্যাক্টেরিয়া
ঠিকুজি মুঠোয়, শায়েস্তা হতে পারে পাকস্থলীর দুশমন
ত্রু কে, শুধু সেটুকুই জানা ছিল। এ বার তাকে পুরোপুরি চেনা গেল! পাকস্থলীর ক্যানসার, অন্ত্রের নানা রকমের ঘা, শরীরে লোহার (আয়রন) ঘাটতি কিংবা কলেরার মতো ভয়াবহ রোগের জন্য দায়ী যে ব্যাক্টেরিয়া, সেই ‘হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি’র পূর্ণ জিনগত মানচিত্র (ফুল জিনোম সিকোয়েন্স) আবিষ্কার করলেন বিজ্ঞানীরা। শুধু তা-ই নয়, এ দেশের পরিবেশে জীবাণুটির কোন কোন চরিত্র বেশি সক্রিয়, তা-ও জানা গিয়েছে বলে ওঁদের দাবি। গবেষকদলের পুরোভাগে রয়েছেন কলকাতার এক বিজ্ঞানী ও এক চিকিৎসক। তাঁদের আশা, জীবাণুটির খুঁটিনাটি নখদর্পণে আসায় এ বার তার হামলা ঠেকানো আর ওষুধ আবিষ্কারের রাস্তা সহজ হয়ে যাবে।
বিজ্ঞানী-চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি (সংক্ষেপে এইচ পাইলোরি) স্থানভেদে বিভিন্ন ভাবে সক্রিয় হয়। ভারতের জলবায়ুতে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কী, তা বার করার চেষ্টা চলছিল দীর্ঘ দিন ধরে। কলকাতার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেজ (নাইসেড)-এর বিজ্ঞানী এবং এসএসকেএমের চিকিৎসকদের গবেষণায় এই প্রথম ধরা পড়ল তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য। বিজ্ঞান-পত্রিকা ‘নেচার’-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’-এর ওয়েবসাইটে ওঁদের গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। একে স্বাগত জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী মহল।
গবেষকদলে রয়েছেন নাইসেডের বিজ্ঞানী আশিস মুখোপাধ্যায়, এসএসকেএমের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি-র প্রধান চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী এবং ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ মেডিসিনের অধ্যাপক ডগলাস বার্গ। এসএসকেএমে ভর্তি হওয়া কলকাতার এক রোগীর দেহ-নমুনা নিয়ে বারো বছর ধরে তাঁরা গবেষণা চালিয়েছেন। হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি কতটা বিপজ্জনক?
আশিসবাবু জানাচ্ছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এইচ পাইলোরি-র সংক্রমণ হয় শৈশবে। যথাযথ চিকিৎসা না-হলে যা আজীবন থেকে যায়। সংক্রামিত ব্যক্তির পরিবারে ও আশপাশের এলাকায় সংক্রমণ ছড়ানোর বেশি ভয় থাকে। যেখানে পরিস্রুত জল ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচালয় নেই, সেখানকার বাসিন্দাদেরও এর শিকার হওয়ার প্রভূত আশঙ্কা।
সংক্রমণ সারানোর উপায় কী?
ডাক্তারদের বক্তব্য: এ ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হল, সংক্রামিত ব্যক্তির দেহে অধিকাংশ ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গজিয়ে ওঠে। ফলে প্রায় কোনও ওষুধই কাজ করে না। জিনের চরিত্র সম্পর্কে অজ্ঞতার দরুণ এত দিন চিকিৎসকেরা এই ব্যাক্টেরিয়ার আগ্রাসনের সামনে খানিকটা অসহাই ছিলেন। এ বার জোরদার লড়াই শুরু করা যাবে বলে তাঁদের আশা। এসএসকেএমের অভিজিৎবাবুর কথায়, “গবেষণাটি রোগ নিরাময়ে কতটা কাজে লাগবে, ডাক্তার হিসেবে সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে সব দিক বিচার করে বলছি, এ বার এ দেশে এইচ পাইলোরি-র সক্রিয়তা রোখার ওষুধ আবিষ্কারের পথ অনেকটা প্রশস্ত হল।” বস্তুত পাকস্থলীর সমস্যা এ দেশের ঘরে ঘরে। উপরন্তু ইদানীং পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকায় চিকিৎসকদের উদ্বেগও বাড়ছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, এইচ পাইলোরি সংক্রমণের চেহারাটা স্থানভেদে কী ভাবে পাল্টে যায়, অন্য দেশের নমুনার সঙ্গে তুলনামূলক পরীক্ষায় তা পরিষ্কার। আশিসবাবু বলেন, “ব্যাক্টেরিয়াটির চরিত্র যে হেতু এক-এক দেশে এক-এক রকম, তাই নৃতাত্ত্বিক নিরিখেও এই আবিষ্কার গুরুত্বপূর্ণ।”
পাকস্থলীর শত্রুকে বাগে আনতে ওঁদের উদ্যোগ কী ভাবে কার্যকর হয়, আপাতত তারই অপেক্ষা।
First Page Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.