প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা পুলিশকে
দুই মহিলার কান্না দেখে থানায় ছুটলেন স্বয়ং মন্ত্রী
তদিন দোরে দোরে অনেক ঘুরেছেন দুই মহিলা। কিন্তু কেউ তাঁদের কথা কানে তোলেননি। বুধবার সাতসকালে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের বাড়ির সামনে দু’জনেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন। গৌতমবাবু তাঁদের কথা শুধু শুনলেনই না, ঘরের পোশাক পরেই তাঁদের নিয়ে ছুটলেন থানায়। সেখানে প্রকাশ্যে পুলিশকে বললেন, “দলতন্ত্র অনেক হয়েছে। এ বার নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করুন।” ভক্তিনগর থানার পুলিশ সাতসকালে মন্ত্রীকে দেখে হতভম্ব। অবাক ওই দুই মহিলাও। তাঁদের বিশ্বাসই হচ্ছে না, সরকারি গাড়ি চড়ে তাঁরা মন্ত্রীর সঙ্গে থানায় এসেছেন। মন্ত্রীর কথা শুনে তাঁদের অভিযোগও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
দু’জনের নাম গায়ত্রী সাউ ও মিনতি বর্মন। গায়ত্রীদেবীর জমি জোর করে লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। মিনতিদেবীর অভিযোগ, তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু তদন্ত হচ্ছে না। গৌতমবাবুর কথায়, “অভিযোগ ঠিক না বেঠিক তার বিচার হবে পরে। কিন্তু অভিযোগের তদন্ত তো পুলিশকে করতে হবে। ওঁদের কান্না দেখে মনে হল, পুলিশ ওঁদের কথা শুনছে না। তাই সঙ্গে সঙ্গে থানায় যাই।”
থানায় গিয়ে ওসির ঘরে নয়, থানা চত্বরেই দাঁড়িয়ে সকলের সামনেই মন্ত্রী ওসি বিনোদ গজমেরকে বললেন, “দলতন্ত্রের দিন শেষ। পুলিশকে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে হবে। আগের কথা ভুলে গিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দু’জনের অভিযোগের নিষ্পত্তি করুন।”
গৌতমবাবুর কথা শুনে দু’জনকে আলাদা ভাবে ঘরে ডাকা হয়। শোনা হয় তাঁদের অভিযোগ। ভক্তিনগর থানার অফিসাররা জানান, দু’জনের অভিযোগ নিয়ে আগেই তদন্ত হয়েছে। কিন্তু, মন্ত্রীর নির্দেশের পরে সমস্ত নথিপত্র ফের খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
গায়ত্রীদেবী ভক্তিনগর থানার জনতানগরের বাসিন্দা। তিনি স্বামী পরিত্যক্তা। তাঁর অভিযোগ, দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে জবরদস্তি তাঁর জমি লিখিয়ে নেন সিপিএম নেতা তপন দেবনাথ। গায়ত্রীদেবী বলেন, “বিষয়টি নিয়ে সেই সময় মন্ত্রী, পুলিশ সবার কাছে গিয়েছি। সিপিএম নেতাদের কাছেও গিয়েছিলাম। সকলেই জমি বিক্রি করে দেওয়ার পরামর্শ দেন। তাই লড়াই করার সাহস পাইনি। এ বার নতুন সরকার হওয়ার পরে পুলিশের কাছে গিয়েও সাহায্য পাইনি। তাই মন্ত্রীর কাছে জানিয়েছি। আমি দেড় লক্ষ টাকা ফেরত দিয়ে দেব। আমাকে ভিটে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।”
অভিযুক্ত তপনবাবু অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তপনবাবু বলেন, “সম্পূর্ণ মিথ্যে অভিযোগ। সকলের সামনে উপযুক্ত দাম দিয়ে জমি কিনে নিই। তিনি জমি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। সওয়া ২ কাঠা জমির জন্য তাঁকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার ও তাঁর স্বামীকে ১ লক্ষ টাকা দিই। প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র আমার কাছে রয়েছে। এখন চক্রান্ত করে ওই অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এর পিছনে অন্য কেউ রয়েছে। আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে।”
সিপিএমের ডাবগ্রাম জোনাল কমিটির সম্পাদক দিলীপ সিংহের অভিযোগ, “সিপিএম নেতা-কর্মীদের ফাঁসিয়ে দিয়ে জুলুম করার প্রতিযোগিতা চলছে। এখানেও সেটাই হয়েছে। সে জন্যই এতদিন পর ওই মহিলা অভিযোগ তুলছেন।” গায়ত্রীদেবীর দাবি, তিনি দিলীপবাবুর কাছেও গিয়েছিলেন। কিন্তু, দিলীপবাবু বলেন, “আমার মনে পড়ছে না।”
দ্বিতীয় ঘটনাটি এক বধূর অপমৃত্যু সংক্রান্ত। ভক্তিনগর থানার বিদ্যাচক্র কলোনির বাসিন্দা সুনীতি রায়ের (৩০) ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় শ্বশুরবাড়ি থেকে। সুনীতি ছিলেন মিনতিদেবীর মেয়ে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ আত্মহত্যা বললেও মৃতার বাড়ির লোকজন খুনের ঘটনা বলে সন্দেহ করেন। অভিযোগের তির সুনীতার স্বামীর দিকে। সেই মতো পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। কিন্তু তাঁকে ধরা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। ভক্তিনগর থানার অফিসারদের কয়েকজন জানান, ময়না-তদন্তে আত্মহত্যা বলে রিপোর্ট মিলেছে। খুনের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ-টুকু শুনেই আশ্বস্ত দুই মহিলা। গায়ত্রীদেবী বলেন, “গৌতমবাবু আমাদের বিধায়ক। উনি এতটা তৎপর হয়েছেন দেখে আমরা অভিভূত। কোনওদিন ভাবিনি, মন্ত্রীর গাড়ির চড়ে থানায় যাব।”
Previous Story Uttarbanga Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.