|
|
|
|
লক্ষাধিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত |
পাঞ্চেতের পরে মাইথন, জল ছেড়েই যাবে ডিভিসি |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
ডিভিসি-র পাঞ্চেত জলাধারের জলস্তর এক ফুট কমেছে। কিন্তু মাইথন জলাধারের জলস্তর বেড়ে গিয়েছে দু’ফুট। তাই এখনই জল ছাড়া বন্ধ করছে না ডিভিসি। পাঞ্চেতের জল আরও একটু কমে গেলে মাইথন থেকে জল ছাড়া শুরু হবে। দামোদর উপত্যকায় নতুন করে বৃষ্টি না-হলেও ৩০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া চলতে থাকবে আরও কয়েক দিন।
ডিভিসি-র হিসেব, গত ২৪ ঘণ্টায় ঝাড়খণ্ডের তেনুঘাট থেকে পাঞ্চেতে জল ঢুকেছে প্রায় ৫৭ হাজার একর ফুট আর জল ছাড়া হয়েছে ৬০ হাজার একর ফুট। এই কারণেই জলস্তর মঙ্গলবারের ৪১৩ ফুট থেকে নেমে বুধবার হয় ৪১২ ফুট। ডিভিসি সূত্রের খবর, জলস্তর ৪১০ ফুটে নেমে গেলে পাঞ্চেত থেকে জল ছাড়ার প্রয়োজন কমে যাবে।
কিন্তু মাইথন জলাধারের ছবিটা উল্টো। মঙ্গলবার সেখানে জলস্তর ছিল ৪৬৯ ফুট। বুধবার সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭১ ফুটে। তা সত্ত্বেও নিম্ন দামোদর এলাকা প্লাবিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় এখনও মাইথন থেকে জল ছাড়া শুরু হয়নি। সেটা শুরু হবে পাঞ্চেত থেকে জল ছাড়া বন্ধ হওয়ার পরে। জলস্তর ৪৬৫ ফুটে নেমে না-আসা পর্যন্ত ৩০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া চলবে বলে রাজ্যকে জানিয়ে দিয়েছে ডিভিসি।
রাজ্যের সেচসচিব অঞ্জনকুমার চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “বাড়তি জল ধরে রাখার জন্য আমরা ঝাড়খণ্ড সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছি। প্রয়োজনে এ রাজ্যের খরিফ চাষে সেচের কাজে লাগতে পারে ওই বাড়তি জল।” এ বারের অতিবর্ষণে রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও তার কয়েকটি ইতিবাচক দিকও রয়েছে। রাজ্যের কৃষি দফতর সূত্রে বলা হয়, আয়লা-বিধ্বস্ত সুন্দরবনে গত দু’বছর প্রয়োজনীয় বৃষ্টি হয়নি। তাই জমির নুন ওঠেনি। এ বারের প্রবল বর্ষণে জমি চাষযোগ্য হয়েছে বলে জেলার কৃষি দফতর মহাকরণে রিপোর্ট পাঠিয়েছে। যুগ্ম কৃষি অধিকর্তা রজত পাল এ দিন মহাকরণে বলেন, “সুন্দরবন এলাকার ব্যাপারে জেলা থেকে যে-তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, পরিস্থিতি আগামী খরিফ চাষের পক্ষে অনুকূল।”
বন্যা পরিস্থিতির পরবর্তী অবস্থা নিয়ে রাজ্যের কৃষিকর্তারা এ দিন মহাকরণে দফায় দফায় বৈঠক করেন। পরে যুগ্ম কৃষি অধিকর্তা জানান, প্রবল বর্ষণে শুকিয়ে যাওয়া নদী, খাল, বিল, পুকুর, ডোবা জলে টইটম্বুর হয়ে গিয়েছে। তাতে আমন ও আউস ধানের ভাল ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যে-সব কৃষিজীবী আগে থেকেই পাট চাষের কাজে নেমেছিলেন, প্রবল বর্ষণের বাড়তি জল তাঁদের পাট ধোয়ার কাজে লাগবে। তবে এই বর্ষণে শাকসব্জি চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এ দিকে, রাজ্যের ১১টি জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় এক লক্ষ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে বুধবার মহাকরণে জানান বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ খান। তিনি জানান, কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে লক্ষাধিক বাড়ি আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্ষণের ফলে এবং বাঁধ উপচে পড়ায় নিচু এলাকার ২০ হাজার বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন নদীবাঁধের ১০৫টি জায়গা, পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন নদীবাঁধের ১০৮টি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার নদীবাঁধের ৪০০টি জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ওই সব ফাটল মেরামত করা হচ্ছে বলে জানান রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া।
পূর্ব মেদিনীপুরে কাঁসাইয়ের জল কিছুটা কমেছে। তবে আগে থেকে জলমগ্ন পাঁশকুড়া, ময়না, তমলুক, নন্দকুমার ব্লকের গ্রামগুলিতে এখনও মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। ত্রাণসামগ্রী মিলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে রয়েছে পানীয় জলের জন্য হাহাকার। দুর্যোগে পান ও ফুল চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমনের বীজতলাও ক্ষতিগ্রস্ত। শুরু হয়েছে সাপের উপদ্রব। ঘাটাল মহকুমার বন্যা পরিস্থিতি বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। শিলাবতী, ঝুমি, কংসাবতী-সহ মহকুমার বিভিন্ন নদীতে জল বেড়েই চলেছে। ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রাস্তা থেকে জল সরেনি। ফলে এ দিনও সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। নৌকাই আপাতত যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু পর্যাপ্ত নৌকাও মিলছে না।
এরই মধ্যে বানভাসি ঘাটালে বুধবার নৌকায় হাসপাতালে যাওয়ার পথে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন চাউলি গ্রামের বধূ সম্মতি ঘোড়ই। ঘাটাল শহর থেকে কিলোমিটার আটেক দূরে চাউলি। মঙ্গলবার রাত থেকেই বাড়িতে প্রসবযন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন সম্মতিদেবী। একে নৌকার অভাব। তার উপরে বন্যার জল পেরিয়ে রাতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকিও ছিল। বুধবার সকাল হতেই তাঁকে নৌকায় চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়। পথেই নৌকায় প্রসব হয় তাঁর। পরে তাঁকে ভর্তি করানো হয় ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে আরও একটি সন্তানের জন্ম দেন তিনি। দু’টি শিশু এবং মা সুস্থ আছেন। |
|
|
|
|
|