|
|
|
|
বন্দিমুক্তির স্বার্থে তথ্য তলব |
সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে অভিযুক্তের তালিকা দিতে ফাঁপরে পুলিশ |
দেবজিৎ ভট্টাচার্য • কলকাতা |
‘রাজনৈতিক বন্দি’দের মুক্তিদানের প্রক্রিয়ায় গতি আনতে হুগলি ও পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের কাছে অভিযুক্তদের নামের তালিকা চেয়ে পাঠাল কারা দফতর। কোনও সময়সীমা বেঁধে না-দিলেও মূলত সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের দিনগুলোয় যাঁদের নাম বিভিন্ন ভাবে পুলিশের খাতায় নথিবদ্ধ হয়েছে, তাঁদের সম্পর্কেই তথ্য চাওয়া হয়েছে বলে মহাকরণ সূত্রের খবর।
কিন্তু সেই তথ্য জোগাড় করতে গিয়ে ঘোর সমস্যায় পড়েছে পুলিশ।
সমস্যার কারণ, অশান্ত নন্দীগ্রামে এলাকা দখল-পুনর্দখল ঘিরে বহু অভিযোগ স্থানীয় থানায় জমা পড়েছিল। এক দিকে তদানীন্তন শাসকদল সিপিএম, অন্য দিকে বিরোধী তৃণমূল-সমর্থিত ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি কার্যত ভোটার তালিকা ধরে নির্বিচারে মামলা দায়ের করেছিল পরস্পরের বিরুদ্ধে। একই লোকের নাম একাধিক মামলায় জড়ানো হয়েছিল। যার অন্যতম দৃষ্টান্ত, ২০০৮-এর মার্চে সোনাচূড়ায় ঘর ভাঙা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে যে ৪৬ জনের নামে, তার ২৮ জনের নাম আছে সে দিনেরই ভাঙাবেড়িয়ায় অন্য একটি সংঘর্ষের এফআইআরে!
একই ভাবে নন্দীগ্রামের এক প্রান্তে গোলমাল হলে এফআইআর হয়েছিল অন্য প্রান্তের লোকজনের নামে, এমনকী, ঘটনার দিন নন্দীগ্রামেই ছিলেন না, এমন লোকের বিরুদ্ধেও। পরে পুলিশ দেখেছে, শুধু নন্দীগ্রামে দু’বছরে মোট আড়াই হাজার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়লেও অভিযুক্তের আসল সংখ্যাটা অনেক কম।
দিন দুয়েক আগে রাজনৈতিক বন্দিমুক্তি পর্যালোচনা কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকেও বিষয়টি ওঠে। সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের নেতা, বর্তমানে হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্না সেখানেই ৭৮৬ জন অভিযুক্তের তালিকা পেশ করেন। মোট ১১৪টি মামলায় তাঁরা অভিযুক্ত। নন্দীগ্রামে অবশ্য অভিযুক্তের সংখ্যাটা বেশি। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, “তখন নন্দীগ্রামে রোজ চার-পাঁচটা অভিযোগ রুজু হত। শুধু নন্দীগ্রাম থানার পক্ষে অত তদন্ত করা সম্ভব ছিল না। তাই অন্য জেলা থেকে তদন্তকারী অফিসার নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।”
তাতেও বিশেষ লাভ হয়নি। পুলিশি তথ্য বলছে, ধার করে আনা তদন্তকারী অফিসারেরা বহু মামলা অসমাপ্ত ফেলে রেখে চলে যান। বহু মামলায় এক জনকেও গ্রেফতার না-করে সবাইকে ‘পলাতক’ দেখিয়ে চার্জশিট পেশ হয়। পরবর্তী কালে আত্মসমর্পণের হিড়িক পড়লেও পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সিদ্ধান্ত নেয়, কোনও মামলায় মোট অভিযুক্তের ৬০% আত্মসমর্পণ করলেই বাকিদের ‘পলাতক’ দেখিয়ে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে। কিন্তু তাতেও তদন্তকারী অফিসারদের সমস্যা মেটেনি। এক পুলিশকর্তা বলেন, “জমি আন্দোলন সংক্রান্ত বহু এফআইআরে তিন-চার জনের নামের পরেই ‘আরও অনেকে’ বলে উল্লেখ রয়েছে। এঁরা কারা, কেউ জানে না!” মহাকরণ সূত্রের খবর: বন্দি মুক্তির ক্ষেত্রে প্রথমে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তার পরে নজর দেওয়া হবে গ্রেটার কোচবিহার ও কামতাপুরী আন্দোলন সংক্রান্ত মামলাগুলোয়। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানান, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলে আটক ৮৩ জন ইতিমধ্যে আদালতের নির্দেশে ‘রাজনৈতিক বন্দি’র মর্যাদা পেয়েছেন। তাঁদের মুক্তির বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
পাশাপাশি বিনা বিচারে আটকদের মুক্তির ব্যাপারটাও বিবেচনা করছে কমিটি। কারা-সূত্রের খবর: রাজ্যের বিভিন্ন জেলে দু’বছর ধরে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছেন সহস্রাধিক বন্দি। চার বছরের বেশি রয়েছেন ২৬২ জন, ছ’বছরের বেশি ৭৭ জন। এমনকী দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে আটক রয়েছেন ১৪ জন, যাঁদের বিচার এখনও শেষ হয়নি! |
|
|
|
|
|