|
|
|
|
মান নিয়েই প্রশ্ন |
জয়েন্ট না-দিয়েও এ বার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দ্বিগুণ বা তারও বেশি নামের তালিকা প্রকাশ করা সত্ত্বেও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আসন খালি পড়ে থাকছে। এই অবস্থায় জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় না-বসলেও এ বার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে এর জন্য দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও অঙ্কে ৫০ শতাংশ নম্বর থাকা জরুরি। এই নতুন পদ্ধতিতে ছাত্র ভর্তি শুরু হচ্ছে চলতি বছরেই। তবে এই ব্যবস্থায় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মান বজায় থাকবে কি না বা ছাত্রছাত্রীরা আর আদৌ জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিতে চাইবেন কি না ইত্যাদি প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যেই।
এত দিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য জয়েন্টের মেধা-তালিকায় নাম থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। গত বছর জয়েন্টে ৮০ হাজার নামের তালিকা প্রকাশ করে তিন দফায় কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ২৮ হাজার আসনের মধ্যে খালি থেকে গিয়েছিল সাড়ে ছ’হাজার। এ বার আসন বেড়ে প্রায় ৩০ হাজার হবে বলে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। সেই আসনে ছাত্র ভর্তির জন্য ইতিমধ্যেই ৯০ হাজার নামের তালিকা প্রকাশ করেছে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড।
রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা অধিকর্তা সজল দাশগুপ্ত বুধবার বলেন, “এ বছর কাউন্সেলিং হবে এক দফায়। প্রতীক্ষার তালিকা তৈরি করে একাধিক বার কাউন্সেলিং করা হবে না।” প্রথম কাউন্সেলিংয়ের পরে বিভিন্ন কলেজের ফাঁকা আসনে বিএসসি পাশ বা পলিটেকনিকের ডিপ্লোমাধারী পড়ুয়ারা ভর্তির সুযোগ পাবেন। তার পরেও যে-সব আসন ভরবে না, সেগুলির জন্য কলেজ সরাসরি বিজ্ঞাপন দিয়ে ছাত্র ভর্তি করতে পারবে। অধিকর্তা বলেন, “দ্বাদশ শ্রেণিতে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং অঙ্কে ৫০ শতাংশ নম্বর পেলে ভর্তির জন্য আবেদন জানানো যাবে। নম্বরের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কলেজ তালিকা তৈরি করে ছাত্র ভর্তি করবে। সেই তালিকা রাজ্য সরকারের কাছেও পাঠাতে হবে।”
এ বছর জয়েন্টে বসেছিলেন এক লক্ষ ১০ হাজার ছাত্রছাত্রী। তাঁদের মধ্যে ৯০ হাজার নামের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তালিকার শেষের দিকে নাম থাকা ছাত্রছাত্রীদের মান নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।
এর পরে আবার দ্বাদশ শ্রেণির নম্বরের ভিত্তিতেই যদি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া যায়, তা হলে ভবিষ্যতে ছেলেমেয়েরা আদৌ জয়েন্ট এন্ট্রান্স দেবেন কি না, সেই বিষয়ে প্রশ্ন উঠতে
শুরু করেছে।
সজলবাবু অবশ্য বলেন, “প্রথম সারির কলেজগুলিতে তো জয়েন্টের মাধ্যমেই ভর্তি হবে। জয়েন্ট ছাড়া ভর্তি হবে তো হাতে গোনা কিছু আসনে।”
রাজ্যে যে-সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়, তার মধ্যে আছে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়, ছ’টি সরকারি এবং ৬৮টি বেসরকারি কলেজ। অনেক কলেজে, বিশেষত গ্রামাঞ্চলের কলেজগুলিতে প্রায় প্রতি বছরই কিছু আসন ফাঁকা থেকে যায়। সজলবাবুর বক্তব্য, “নতুন পদ্ধতিতে ছাত্র ভর্তির ফলে ফাঁকা আসনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমবে।” কিন্তু বেসরকারি কলেজের সব আসন ভরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব রাজ্য সরকার কেন নেবে, সেই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি অধিকর্তার কাছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রাক্তন ডিন মনোজ মিত্র মনে করেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে এক দিকে যেমন জয়েন্ট এন্ট্রান্স গুরুত্ব হারাবে, অন্য দিকে তেমনই ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগ উঠবে। তিনি বলেন, “সরকার হয়তো কলেজগুলির অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু এর জেরে প্রথম সারির ১০-১২টি কলেজে ছাত্র পাঠানো ছাড়া জয়েন্টের আর কোনও যৌক্তিকতা থাকবে না।” |
|
|
|
|
|