|
|
|
|
মন্টেককে আমন্ত্রণ তৃপ্ত মমতার |
যোজনা বরাদ্দ ২২ হাজার কোটি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
মধুরেণ সমাপয়েৎ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গত তিন দিনের দিল্লি অভিযানের শেষ পর্বটিকে এ ভাবেই বর্ণনা করা চলে। আজ ডেপুটি চেয়ারপার্সন মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া-সহ পূর্ণাঙ্গ যোজনা কমিশনের সদস্যের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক সেরে রাজ্যের জন্য ২২,২১৪ কোটি টাকার যোজনা বরাদ্দ নিয়ে কলকাতা ফেরার উড়ান ধরলেন মমতা। গত বছরের তুলনায় মমতার বাড়তি পাওনা ২৪ শতাংশ।
রাজ্যের জন্য এর আগে কখনও এত বড় মাপের যোজনা বরাদ্দ করেনি কেন্দ্র। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগের বাম সরকার যে যোজনা নথি এত দিন কেন্দ্রের কাছে পেশ করেছে, তা ছিল যথেষ্ট গোঁজামিলে ভরা। তুলনায় আজ মমতার পেশ করা যোজনা নথি অনেক বেশি বাস্তবমুখী। বৈঠকের পর মন্টেককে পাশে নিয়ে মমতা জানিয়েছেন, পরিকাঠামো থেকে কর্মসংস্থান এক সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় অর্থ খরচ করবে তাঁর সরকার। রাজ্যের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখার জন্য মন্টেক-সহ যোজনা কমিশনের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মমতা। সূত্রের খবর, সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন মন্টেক। বৈঠকের পরে মন্টেক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সমস্ত প্রচেষ্টার পিছনে আমাদের সমর্থন রয়েছে। যে ক্ষেত্রগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে পাহাড়ের উন্নয়ন, সুন্দরবন, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ইত্যাদি।” |
|
শুভেচ্ছা বিনিময়। নয়াদিল্লিতে রমাকান্ত কুশওয়ার তোলা ছবি। |
আজ রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়নমন্ত্রী মণীশ গুপ্তকে নিয়ে যোজনা কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মমতা। দু’দফায় প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে দর কষাকষি। বৈঠকের শেষে দৃশ্যতই সন্তুষ্ট মমতা বলেন, “আমি যোজনা কমিশনের কাছে কৃতজ্ঞ। পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের জন্য কমিশনের সদস্যেরা যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছেন। যে বরাদ্দ পেয়েছি তা যথেষ্টই ভাল।” প্রসঙ্গত, গত বছর অসীম দাশগুপ্ত রাজ্যের জন্য ১৭,৯৮৫ কোটি টাকার যোজনা বরাদ্দ নিয়ে ফিরেছিলেন।
এ বছরের যোজনা বরাদ্দের একটি বড় অংশ ব্যয় হবে রাজ্যে শিল্প পরিকাঠামো গড়তে। মোট ১৭টি শিল্প তালুকের মধ্যে পাঁচ থেকে ছ’টি সংখ্যালঘু এলাকায় করার পরিকল্পনা রয়েছে মমতার। এ ছাড়া অর্থ খরচ করা হবে পাহাড়ের উন্নয়ন, সুন্দরবনে পর্যটন শিল্প, কলকাতার সৌন্দর্যায়নে। জঙ্গলমহলের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে মন্টেকের সঙ্গে। মমতার কথায়, “আমরা সেখানকার মানুষকে এক সামগ্রিক প্যাকেজ দিতে চাইছি। বন্দুক নয়, আমরা তাঁদের হাতে খাদ্য ও রোজগার তুলে দিতে চাই।”
বিশেষজ্ঞদের মতে রাজ্যের এ বছরের পরিকল্পনা অনেক বেশি বাস্তবসম্মত। তাঁদের অভিযোগ, এত দিন রাজ্যের পেশ করা বাজেটের পিছনে থাকত সংখ্যাতত্ত্বের কারসাজি। তার ভিত্তিতে ফি-বছর যোজনা আয়তনও নির্ধারণ করা হত। প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারপার্সন ছিলেন, তখন থেকেই তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বলে আসছেন, স্বল্প সঞ্চয় আসলে ধার। আয় নয়। কিন্তু অশোক মিত্র থেকে অসীম দাশগুপ্ত, কারওরই মত বদলাতে পারেননি। রাজ্যের বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ উঠত যে, আয়ের পরিমাণ বেশি ধরে যোজনা আয়তন প্রতি বছর বাড়িয়ে নিত তারা। কিন্তু শেষে সেই পরিমাণ আয় করতে পারত না। এ বছর সেই রাস্তায় হাঁটেননি মমতা। তিনি অর্থ দফতরের কর্তাদের নির্দেশ দেন, চটক নয়, প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার।
কী রয়েছে সেই পরিকল্পনায়? মুখ্যমন্ত্রী জানান, সুন্দরবনে আফ্রিকান সাফারির ধাঁচে পর্যটনের ব্যবস্থা করা হবে। দার্জিলিংকে সুইৎজারল্যান্ড এবং কলকাতাকে লন্ডনের মতো করে গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে। আগামী ক’বছরে রাজ্যে ১০ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে বলে জানান মমতা। পাশাপাশি, অসংগঠিত ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি, সংখ্যালঘুদের সার্বিক উন্নয়ন, সমস্ত গ্রামে বিদ্যুৎ ও পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া, গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্য-শিক্ষা পরিকাঠামো তৈরিতে জোর দেওয়া, দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প সব মিলিয়ে রাজ্যকে ‘প্রকৃত মডেল’ হিসেবে দেশের সামনে তুলে ধরার স্বপ্ন দেখছেন মমতা। তিনি বলেন, “কলকাতার সঙ্গে শান্তিনিকেতন, হলদিয়া, মালদহ, কোচবিহারের মতো জায়গার বিমান যোগাযোগ গড়ে তোলা হবে। উত্তরবঙ্গে চা বাগানকে কেন্দ্র করে ‘টি ট্যুরিজম’ গড়া হবে। পাট শিল্পকেও চাঙ্গা করা হবে।”
শুধু যোজনা বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা নয়, আজ মন্টেকের সঙ্গে আলাপচারিতায় রাজ্যের বেহাল আর্থিক অবস্থার চিত্রটিও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, ঋণের ভারে ন্যুব্জ পশ্চিমবঙ্গ। পরিকাঠামো ক্ষেত্রেও রাজ্য অন্যদের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। রাজ্যের হাল সরেজমিনে খতিয়ে দেখার জন্য মমতা মন্টেক-সহ যোজনা কমিশনের সদস্যের পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার অনুরোধ করেন। রাজ্য সরকার সূত্রের খবর, সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে সুন্দরবন, দিঘা, দার্জিলিং, অনগ্রসর আদিবাসী অন্নুনত এলাকা ঘুরবেন সদস্যরা। পাট শিল্পের বেহাল অবস্থাও খতিয়ে দেখার কথা রয়েছে তাঁদের। |
|
|
|
|
|