|
|
|
|
কারখানার পাখায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল মামা-ভাগ্নের দেহ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ছাতনা |
কারখানার কুলিং টাওয়ারের পাখায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলেন মামা-ভাগ্নে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনাটি ঘটে বাঁকুড়ার ছাতনা থানার জোড়হিড়ায় একটি কারখানায়। খবর পেয়ে দমকল ও পুলিশকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে রাতে দেহ দু’টি উদ্ধার করেন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন ভোলানাথ মিশ্র (৩৩) ও নির্মল মুখোপাধ্যায় (২২)। মামা, ভোলানাথের বাড়ি পুরুলিয়ার কাশীপুর থানার বড়ডিহা গ্রামে। ভাগ্নে, নির্মলের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের মহাল বোকারো এলাকায়। দু’জনেই ঠিকাশ্রমিক।
স্পঞ্জ-আয়রন, ফেরো-অ্যালয়, তাপবিদ্যুৎ-সহ প্রায় ১২ ধরনের উৎপাদন হয় ওই কারখানায়। সেখানে ভোলানাথ এবং তাঁর দাদা প্রদীপ মিশ্র দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন। মাসখানেক হল নির্মল সেখানে কাজ পেয়েছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে তিন জনেই কারখানায় কাজে ঢোকেন। সন্ধ্যা, সাড়ে ৬টা নাগাদ কারখানার ‘ক্যাপ্টিভ পাওয়ার প্ল্যান্টে’ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
বুধবার দুপুরে বাঁকুড়ার মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে প্রদীপবাবু বলেন, “তখন আমি কারখানার বাইরে জলখাবার খেতে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে ভাই বা ভাগ্নেকে দেখতে না পেয়ে ওয়াকিটকিতে যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু ওরা ওয়াকিটকি ধরেনি। ইতিমধ্যে ‘কুলিং টাওয়ার ফ্যানে’ একটা যান্ত্রিক গোলমাল ধরা পড়ে। এক ঠিকাশ্রমিক গোলমালের কারণ জানতে গিয়ে দেখেন, পাখার কাছে কিছু দেহাংশ পড়ে রয়েছে। এর পরেই আমরা সব শ্রমিকেরা জড়ো হই। কিন্তু, ভাই ও ভাগ্নেকে দেখা যায়নি। তখনই বুঝে যাই, ওই দেহাংশ ওদেরই।”
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোলানাথরা দুই ভাই। বাড়িতে মা ছাড়াও, দুই ভায়ের স্ত্রী রয়েছেন। এক বছর আগে বিয়ে হওয়া ভোলানাথের স্ত্রী সোনালি অন্তঃসত্ত্বা। দুর্ঘটনার খবর বাড়িতে পৌঁছতেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। রাতেই খবর যায় মহাল বোকারোর নির্মলের বাড়িতেও। তাঁর দাদা পরিমল ভাইয়ের দেহ নিতে এ দিন মর্গে এসেছিলেন। তিনি বলেন, “মাত্র কয়েকমাস আগে ভাই কাজ পেয়েছিল। মামার বাড়ি থেকেই ও কারখানায় যাতায়াত করত। নিজেও খুশি ছিল। কিন্তু ওর কপালে যে এই পরিণতি ছিল ভাবতে পারিনি!”
কারখানার শ্রমিকদের অনুমান, ওই পাখার উপরে লোহার পাতের একটি ‘প্ল্যাটফর্মের’ উপর দিয়ে ভোলানাথ ও নির্মল হেঁটে যাচ্ছিলেন। সেই সময় কোনও ভাবে তাঁরা নীচে পাখার উপরে পড়েন। তখনই ঘুরন্ত পাখার ‘ব্লেড’-এ আঘাত লেগে তাঁদের মৃত্যু হয়। তবে কী কারণে ওই দু’জন সেখানে গিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে কেউই স্পষ্ট জানাতে পারেননি।
কারখানার সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার পৃথ্বীশকুমার মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “মৃত শ্রমিকেরা ওই এলাকায় কেন গেলেন, পরিষ্কার নয়। কারণ, এলাকাটি সংরক্ষিত। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, ওঁরা কারও নির্দেশ ছাড়া, বিনা অনুমতিতে ওখানে গিয়েছিলেন। বিশেষ সতর্কতা ছাড়া, ওই জায়গায় কেউ যেতে পারেন না। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।” তবে মৃতদের পরিবারকে নিয়ম অনুযায়ী আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। |
|
|
|
|
|