|
|
|
|
ডিএমের পরিদর্শনের পরে ভোলবদল খাদ্য দফতরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা• মেদিনীপুর |
অনিয়মই যেন নিয়ম হয়ে উঠেছিল। কর্মী-অফিসারেরা যখন ইচ্ছে অফিসে আসতেন। আবার যখন খুশি চলে যেতেন। হাজিরাখাতায় প্রভাব পড়ত না। কিন্তু এক ধাক্কাতেই সেই রুটিন বদলে গেল। বরাবরের নিয়মটাই নতুন করে চালু হল। আর তা হল জেলাশাসকের পরিদর্শনের জেরে।
এক বুধবার থেকে পরের বুধবার--সাত দিনেই ভোল পাল্টে গেল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতরে। ১৫ জুন, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎই জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতর পরিদর্শনে যান জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত। গিয়ে দেখেন, বেশিরভাগ চেয়ারই ফাঁকা। নেই আধিকারিকেরাও। মাত্র হাতে গোনা কয়েক জন কর্মী। জেলাশাসক অসন্তোষ চেপে রাখেননি। তার পরেই নির্দেশ দেন, প্রত্যেকেই যেন সরকারি নিয়ম মেনে অফিসে আসেন। না এলেই গরহাজির দেখাতে হবে। আর দেরিতে এলে হাজিরা খাতায় দেরিতে ঢোকার কথা উল্লেখ রাখতে হবে। সেই রিপোর্ট পাঠাতে হবে জেলাশাসককে। |
|
চলছে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
যেমন বলা তেমন কাজ। এক সপ্তাহ পরে আর এক বুধবার প্রধান করণিক ঝর্না দাস ঘড়ির কাঁটা ধরে অফিসে হাজির। তাঁর সামনে হাজিরা খাতা। কর্মীরা সকাল ১০টা ১৫ মিনিটের মধ্যে অফিসে ঢুকছেন। হাজিরা খাতায় সই করছেন। তার পর সেই খাতা চলে যাচ্ছে অতিরিক্ত জেলা খাদ্য নিয়ামকের কাছে। কত জন কর্মী সময়ে এলেন, কত জন দেরি করলেন, আর কত জনই বা এলেন না--তা লিপিবদ্ধ করে প্রধান করণিক পাঠিয়ে দিচ্ছেন জেলাশাসকের কাছে। আগে যেখানে দিনের পর দিন দেরিতে এলেও দেরির উল্লেখই থাকত না হাজিরাখাতায়, এমনকী না এসেও পরের দিন সই করে দেওয়ার বেনিয়ম চলত, এখন তা বদলে গিয়েছে।
কী ভাবে? অফিসের এক কর্মীর কথায়, “আগে বেনিয়মটাই নিয়ম হয়ে গিয়েছিল। প্রধান করণিকেরও কিছুই করার ছিল না। কিন্তু জেলাশাসকের নির্দেশের পরেই প্রধান করণিকও কড়া হয়েছেন। কাউকেই রেয়াত করছেন না।” প্রধান করণিক ঝর্নাদেবীর বক্তব্য, “জেলাশাসক ও জেলা খাদ্য নিয়ামক আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, দেরিতে এলেই দেরির কথা হাজিরাখাতায় উল্লেখ করতে। না এলে গরহাজির দেখাতে হবে। সেই নির্দেশ মেনেই কাজ করছি।” আগেও তো এটাই নিয়ম ছিল, কিন্তু তখন কড়াকড়ি হত না কেন? ঝর্নাদেবীর জবাব, “বাড়ি দূরে হওয়ার কারণে আগে কিছু ক্ষেত্রে অনেকে দেরিতে আসতেন। সেটা ঠিক। কড়াকড়িও হয়তো কম ছিল। এ বার কড়া হচ্ছে।” জেলা খাদ্য নিয়ামক প্রদীপ ঘোষও মানছেন, “এখন সব কর্মীই সময়ে উপস্থিত হচ্ছেন। এমনকী আগের থেকে বেশি কর্মীও হাজির থাকছেন। জেলাশাসকের পরিদর্শনের পরে অফিসের হালটাই বদলে গিয়েছে।”
হাল যে বদলে গিয়েছে তার প্রমাণ হাজিরাখাতা। ১৫ জুন জেলাশাসক পরিদর্শন করেন। ১৬ জুন ৬৫ জন কর্মীর মধ্যে ৫৬ জনই উপস্থিত। এক জনও দেরিতে আসেননি। ৯ জন অনুপস্থিত। ১৬ জুনের পরেই এক জন কর্মীর বদলি হয়। ফলে ১৭ জুন থেকে ৬৪ জন কর্মী এই অফিসে। ১৭ তারিখে ৬৪ জনের মধ্যে ৫২ জন উপস্থিত। প্রত্যেকেই সময়ে এসেছেন। ১২ জন অনুপস্থিত। ২০ জুন ৬৪ জনের মধ্যে ৫৪ জন সময়ে এসেছেন। এক জন দেরিতে। ২১ জুন ৬৪ জনের মধ্যে ৫৬ জন সময়ে এসেছেন, ২ জন দেরিতে। ২২ জুন ৬৪ জনের মধ্যে ৫৮ জন সময়ে এসেছেন এক জন দেরিতে। সবই লিপিবদ্ধ হচ্ছে। আর সেই রিপোর্ট পৌঁছে যাচ্ছে জেলাশাসকের কাছে। এক সপ্তাহ তো ঠিকই চলছে। কিন্তু পরেও কি তা চলবে? এই প্রশ্ন অবশ্য থেকেই যাচ্ছে। যদিও জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এ বার সর্বত্রই নজরদারি চালানো হবে। সরকারি নিয়ম মেনে না চললেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |
|
|
|
|
|