|
|
|
|
খাল কাটার কাজ এখনও শেষ হয়নি, কাটেনি বন্যার আশঙ্কাও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • জয়পুর |
আমতা ২ ব্লকের লক্ষাধিক মানুষকে ফি বছর বন্যার হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই থলিয়া-বাকসি খাল কাটার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু দশ বছরেও খাল কাটার কাজ শেষ হয়নি। উল্টে এই অসম্পূর্ণ খাল বাসিন্দাদের কাছে নিয়ে এসেছে বন্যার আতঙ্ক। কারণ, অসম্পূর্ণ খালে ডিভিসির ছাড়া জল ঢুকে পড়েছে। খালের বাঁধ বহু জায়গায় জীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে বাঁধ ভেঙে বন্যা হতে পারে বলে সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন।
উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ এই দু’টি ব্লকের বিস্তীর্ণ অংশ দামোদরের পশ্চিম দিকে পড়ে। সেচ দফতরের ভাষায় এটি হল ‘স্পিল’ এলাকা। তার ফলে এই এলাকায় দামোদরের পাড়ে কোনও বাঁধ নেই। উল্টো দিক, অর্থাৎ দামোদরের পূর্ব পাড়ে অবশ্য বাঁধ রয়েছে। সেচ দফতরের কর্তাদের কথায়, এই দিকে বাঁধ দেওয়া হয়েছে হাওড়া শহর এলাকাকে বন্যার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য।
স্পিল এলাকায় অবস্থিত হওয়ার জন্য উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ এই দু’টি ব্লকের লক্ষাধিক বাসিন্দা প্রতি বছর বন্যায় ভেসে যান। ভেঙে পড়ে বহু বাড়িঘর। প্রাণহানি ঘটে। এই সব এলাকার বাসিন্দারা দামোদরের পশ্চিম পাড়ে বহু বার বাঁধ দেওয়ার দাবি জানালেও সেচ দফতর সাফ জানিয়ে দেয়, ‘স্পিল’ এলাকায় নদীর পাড়ে বাঁধ দেওয়া যাবে না। |
|
বাঁধের উপরে গর্ত। নিজস্ব চিত্র। |
তবে, দু’টি ব্লকের বাসিন্দাদের পাকাপাকি ভাবে বন্যার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বিকল্প পরিকল্পনা করে সেচ দফতর। তাতেই থলিয়া-বাকসি খাল বা শর্টকার্ট চ্যানেল কাটার পরিকল্পনা করে সেচ দফতর। আমতা ১ ব্লকের থলিয়া থেকে বাগনান ১ ব্লকের বাকসি পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার খাল কাটার কথা বলা হয়। খালটির মাধ্যমে দামোদরের সঙ্গে রূপনারায়ণ নদকে যুক্ত করার কথা হয়। উদ্দেশ্য, ডিভিসি জল ছাড়লে সেই জল এই খালের মাধ্যমে দামোদর থেকে রূপনারায়ণে পড়বে। ফলে আমতা ২ এবং উদয়নারায়ণপুরের বাসিন্দারা বন্যার কবলে পড়বেন না।
২০০০ সালের গোড়ায় থলিয়ায় দামোদরের পাড় থেকে খাল কাটার কাজ শুরু হয়। প্রায় ১০ কিলোমিটার পরে খাল কাটার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সেচ দফতরের বক্তব্য, জমি অধিগ্রহণের সমস্যার জন্যই কাজটি শেষ করা যায়নি। কাজ বন্ধ রয়েছে প্রায় দু’বছর।
এ দিকে, ডিভিসি জল ছাড়লেই থলিয়ার দিক থেকে দামোদরের জল এই খালে ঢুকে পড়ছে। এ বছরও ডিভিসি যে ২০ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে তার অনেকটা এই খালে ঢুকে পড়েছে। খালের দু’দিকের বাঁধে অন্তত ৫০টি জায়গা জীর্ণ হয়ে পড়েছে। সেই সব অংশে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে বলে বাসিন্দাদের আশঙ্কা। তাঁদের বক্তব্য, এইমাত্র বর্ষা শুরু হয়েছে। তা ছাড়া, ডিভিসি জল ছেড়েছে খুবই কম। কিন্তু তাতেই জীর্ণ বাঁধের গায়ে যে ভাবে জল ধাক্কা মারছে তাতেই প্রমাদ গুনছেন বাসিন্দারা।
আমতার বিধায়ক কংগ্রেসের অসিত মিত্রের অভিযোগ, “শর্টকার্ট চ্যানেলের কাজ শেষ না-হওয়ার জন্যই এই হাল।” তাঁর যুক্তি, “প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হলে থলিয়ার কাছ থেকে দামোদরের কতটা জল খালে ঢুকবে তা নিয়ন্ত্রণ করারও ব্যবস্থা থাকত। কিন্তু এখন দামোদরের জল অবাধে খালে ঢুকছে। তার উপরে খালের দু’দিকে বাঁধ মেরামত করা হয়নি। বাঁধের গায়ে স্লুইস গেট বসানো হয়েছে। অথচ তার মুখ বন্ধ করা হয়নি।” মানুষকে জোর করে বন্যার মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ।
মঙ্গলবার আমতা ২ ব্লকে সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থতি নিয়ে আলোচনার জন্য সর্বদল বৈঠক হয়। তাতে অসিতবাবু দাবি তোলেন থলিয়া-বাকসি খালের দু’দিকের বাঁধের যে সব জায়গা জীর্ণ হয়ে পড়েছে সেগুলি অবিলম্বে মেরামত করতে হবে। আমতা ২-এর বিডিও পিনাকী সেনগুপ্ত জানান, বুধবার উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক ফের বৈঠক ডেকেছেন। সেখানে সেচ দফতরকে থলিয়া বাকসি খালের জীর্ণ বাঁধ মেরামত করার জন্য বলা হবে। নিম্ন দামোদর নির্মাণভুক্তির নির্বাহী বাস্তুকার দেবাশিস পড়ুয়া অবশ্য বলেন, “আমরা জরুরিভিত্তিতে এই কাজ শুরু করে দিয়েছি।” |
|
|
|
|
|