নির্মীয়মাণ বাড়ির পাঁচিল ভেঙে জখম চার শিশু
স্কুলে যাওয়ার পথে একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের উপর থেকে পাঁচিল ভেঙে পড়ে গুরুতর জখম হল চার খুদে পড়ুয়া। তাদের সকলেরই বয়স সাড়ে তিন থেকে নয় বছরের মধ্যে। বুধবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে মধ্য হাওড়ার বিজয়ানন্দ পার্কের কাছে নরসিংহ দত্ত রোডে।
পুলিশ জানায়, আহতেরা প্রত্যেকেই স্থানীয় হরিজন বস্তির বাসিন্দা। রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের প্রথমে হাওড়া জেলা হাসপাতাল ও পরে হাওড়ার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তাদের দেখতে যান মধ্য হাওড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষি ও বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, পড়ুয়াদের মধ্যে এক জন বাদে সকলেরই মাথায় আঘাত লেগেছে। ওই বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনও নিম্ন মানের মাল-মশলা ব্যবহার করা হচ্ছিল কি না, তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়াল। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশও।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নরসিংহ দত্ত রোডে নির্মীয়মাণ ওই পাঁচতলা ফ্ল্যাটবাড়িটির পিছনে আর একটি বহুতলের নীচে রয়েছে ‘নবযুবক হরিজন বিদ্যালয়’ নামে একটি হিন্দি মাধ্যম প্রাথমিক স্কুল। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ওই স্কুলে মূলত উল্টো দিকের হরিজন বস্তির ছেলেমেয়েরাই পড়াশোনা করে। পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে রোজকার মতোই ওই নির্মীয়মাণ বহুতলের পাশ দিয়ে স্কুলে যাচ্ছিল শাওন হরি (৯), তার বোন সিমরান হরি (৪), সাগির হরি (৭) ও তুষার হেলা (৮) নামে ওই চার পড়ুয়া। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে বৃষ্টি পড়লেও বাড়িটিতে মিস্ত্রিরা কাজ করছিলেন। চার পড়ুয়া যখন ওই বাড়ির নীচ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন আচমকা পাঁচতলার উপর থেকে একটি পাঁচিল ভেঙে পড়ে। ভাঙা ইটের স্তূপের তলায় চাপা পড়ে যায় চার জন। হাতের বইখাতা ছিটকে যায়। রক্তে ভেসে যেতে থাকে মাটি।
ভেঙে পড়া সেই পাঁচিল। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
এলাকার বাসিন্দা সুভাষরঞ্জন মুদি বলেন, “আমি তখন পাশের ফ্ল্যাটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা জোরালো শব্দ শুনে পিছন ফিরে দেখি, স্কুলের বাচ্চাগুলোর উপরে পাঁচিল ভেঙে পড়েছে। ওরা চিৎকার করে কাঁদছে। দেরি না করে চেঁচিয়ে সকলকে ছুটে আসতে বলি। এর পরে ইট সরিয়ে ওদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।”
এই দুর্ঘটনার খবর হরিজন বস্তিতে পৌঁছলে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা বাঁশ ও বেঞ্চ দিয়ে ঘিরে রাস্তা অবরোধ করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত সাত বছর ধরে ফ্ল্যাটবাড়িটি তৈরি হলেও পথচারী বা প্রতিবেশীদের জন্য কোনও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কাজ চলাকালীন ওই বাড়ির চারপাশে বাঁশ বা লোহার পাইপের খাঁচা করে চট বা প্লাস্টিক দিয়ে ঘিরে দেওয়াও হয়নি। ফলে উপর থেকে প্রায়ই ইট-পাটকেল, বালি, সিমেন্ট পথচারীদের গায়ে পড়ে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই ফ্ল্যাটবাড়ির প্রোমোটার যেহেতু একটি ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক দলের নেতা, তাই কেউ মুখ খুলতে সাহস করেন না। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বাড়ির নীচ দিয়ে যাতায়াত করতে হয়।
এ ব্যাপারে হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়াল বলেন, “বাড়িটি পুরসভার অনুমতি নিয়ে তৈরি হয়েছে কি না, তা দেখা হবে। পাশাপাশি, বাড়িটিতে নিম্ন মানের মাল-মশলা ব্যবহার হয়েছে কি না, তদন্ত হবে তারও। ত্রুটি প্রমাণিত হলে প্রোমোটারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর বাড়ি তৈরির কাজ চলাকালীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা কেন করা হয়নি, সে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।”
Previous Story South Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.