সম্পাদকীয় ২...
পরিমাণ নয়, গুণমান
শ্চিমবঙ্গের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ঘোষণা করিয়াছেন, আগামী পাঁচ বছরে রাজ্যে আরও ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৩০০টি কলেজ স্থাপিত হইবে। প্রথমটা শুনিলে সংশয় হয় ঠিক শুনিয়াছি তো? দশটি বিশ্ববিদ্যালয় ও তিনশোটি কলেজ! অর্থের সংস্থানের কথা না-হয় ছাড়িয়াই দেওয়া গেল। সমূহ আর্থিক সঙ্কটে নিমজ্জিত রাজ্য তাহার শূন্য কোষাগার লইয়া কেমন করিয়া এই অসম্ভবকে সম্ভব করিবে, সে সমস্যা না-হয় আপাতত মুলতুবিই রাখা হইল। বর্তমানে চালু কলেজগুলির অধ্যক্ষ ও অধ্যাপকের শূন্য পদ পূরণের লোকই যেখানে অমিল, সেখানে কেমন করিয়া এতগুলি নূতন শিক্ষক-অধ্যাপক পদ পূরণ করা হইবে, কাহাদের দিয়া হইবে, সে প্রশ্নও তোলা থাকিল। কিন্তু একটি রাজ্যে এতগুলি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের কি সত্যই দরকার আছে? প্রশ্নটির উত্তর উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী আগেই দিয়া রাখিয়াছেন। তিনি চাহেন, রাজ্যের সকল ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষার অর্থাৎ কলেজে স্নাতক স্তরের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষার সুযোগ পাক। প্রতিষ্ঠানের অভাবে যেন রাজ্যবাসী উচ্চশিক্ষার সুযোগ হইতে বঞ্চিত না হয়।
পরিকল্পনাটি রোমহর্ষক। বস্তুত, এই পরিকল্পনার মধ্যে উচ্চশিক্ষার রোমহর্ষক গণতান্ত্রিকীকরণের অভিপ্রায়টি ষোলো আনার উপর আঠারো আনা উপস্থিত। একই অভিপ্রায় পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের শেষ দশকের আচরণেও বিশেষ ভাবে প্রকট ছিল। গণতন্ত্রকে সংখ্যার প্রাধান্য রূপে গণ্য করিতে অভ্যস্ত তাঁহারা পরিমাণ লইয়া এতই ভাবিত ছিলেন যে, গুণগত উৎকর্ষকে সংখ্যার যূপকাষ্ঠে বলি দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন নাই। ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল আদি নানাবিধ বিষয়ের প্রশিক্ষণের সুযোগ করিয়া দিতে তাঁহারা বহু প্রতিষ্ঠানকে অকাতরে ছাড়পত্র দিয়াছিলেন। তাহাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আকাশে উঠিয়াছে, শিক্ষার মান কোন অতলে নামিয়াছে, তাহা জানিতে নূতন সরকার তদন্ত কমিটি বসাইতে পারে। লক্ষণীয়, সামগ্রিক ভাবেই পূর্বতন সরকার উচ্চশিক্ষার মানের সহিত গুরুতর আপস করিয়া ফেলিয়াছিল। প্রেসিডেন্সি কলেজের অধোগমন হয়তো তাহার একটি চরম নিদর্শন, কিন্তু অন্যান্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার মানও ধারাবাহিক ভাবে নিম্নগামী থাকিয়াছে। নূতন সরকারের কাছে তাই উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নই ছিল প্রধানতম চ্যালেঞ্জ। কিন্তু অন্তত উচ্চশিক্ষার ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীর কথা শুনিয়া সংশয় জাগিতেছে, এ ব্যাপারে তিনি বুঝি তাঁহার পূর্বসূরিদের পদাঙ্ক অনুসরণেই ব্রতী।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান উন্নয়নের কাজটি অবশ্য ঠিক পথেই অগ্রসর হইতেছে। এ ব্যাপারে যথাযথ ভাবেই বিশেষজ্ঞদের দায়িত্ব দেওয়া হইয়াছে। অনুরূপ বিশেষজ্ঞ মতামত রাজ্যের উচ্চশিক্ষার সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রেও লওয়া উচিত। উচ্চশিক্ষাকে সকলের নাগালে আনার পরিকল্পনাটি শুনিতে যতই সাম্যবাদী হউক, উচ্চশিক্ষা যে একান্ত ভাবেই মেধানির্ভর এবং সকলেই যে মেধাবী নন, তাহা ভুলিয়া যাওয়া অনুচিত। দৃশ্যত, উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী শিক্ষার অনুভূমিক বিস্তারের ব্যাপারে যত আগ্রহী, তাহার উল্লম্ব গভীরতার ব্যাপারে তত নন। তাই তিনি ভাবিতেছেন, সুযোগের অভাবেই রাজ্যের সব পড়ুয়া কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাইতে পারে না। সুযোগ পাইলেই অর্থাৎ পর্যাপ্তসংখ্যক কলেজ রাজ্যের কোণে-কোণে ছড়াইয়া দিলেই উচ্চশিক্ষায় পশ্চিমবঙ্গ শিখর স্পর্শ করিবে। যে-রাজ্যে স্কুলপড়ুয়াদেরই এক বৃহৎ অংশ মাঝপথে পড়া ছাড়িয়া দেয়, সেখানে বোধহয় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাল্পতা উচ্চশিক্ষার সর্বজনীনতার অন্তরায় নয়। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সর্বজনীন করিয়া তোলাই এখনও কল্পনামাত্র। যথার্থ উচ্চশিক্ষার প্রথম ও প্রধান শর্ত: উচ্চ মান। অতএব উচ্চশিক্ষামন্ত্রী, পরিমাণ নয়, গুণের উপর জোর দিন।
Previous Story Editorial Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.