|
|
|
|
সম্পাদকীয় ১... |
দুঃসময় |
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সরকার ঘরে-বাহিরে নানা সমস্যায় এমনিতেই জর্জরিত। সরকারি উচ্চ পদে দুর্নীতি দূর করিতে প্রস্তাবিত লোকপাল বিল ও তাহার এক্তিয়ার লইয়া আন্না হাজারের নেতৃত্বাধীন ‘সুশীল সমাজ’-এর সহিত সরকারের লড়াই ক্রমে তীব্র হইতেছে। ইউ পি এ-১-এর তুলনায় ইউ পি এ-২ সরকারের সংসদীয় গরিষ্ঠতা অধিক হইলেও তাহার শাসন পরিচালনার যোগ্যতা লইয়া প্রশ্ন জনমনে ক্রমশ গুরুতর আকার ধারণ করিতেছে। ইহারই মধ্যে কংগ্রেস দলের বর্ষীয়ান নেতা দিগ্বিজয় সিংহ রাহুল গাঁধীর প্রধানমন্ত্রিত্বে অভিষেকের সম্ভাবনার ঘুড়ি উড়াইয়া রাজনীতির আকাশ আরও ঘোলাটে করিয়া দিয়াছেন। প্রধানমন্ত্রীর নিজের দলেরই নেতা যদি এখনই প্রকাশ্যে তাঁহার বিকল্প অন্বেষণ করিতে থাকেন, তবে সেটা প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্বের নৈতিকতা ও মর্যাদা বাড়ায় না।
দিগ্বিজয় সিংহ শাসক দলনেত্রী সনিয়া গাঁধীর কাছের লোক বলিয়াই পরিচিত। অথচ ভারতের যৌবরাজ্যে সনিয়া-তনয়ের অভিষেক লইয়া তাঁহার প্রকাশ্য তাড়াহুড়া সনিয়া বা রাহুল গাঁধীর দ্বারা তিরস্কৃত হয় নাই। জয়ন্তী নটরাজনের মতো আনুষ্ঠানিক মুখপাত্রদের দিয়া মনমোহন সিংহের নেতৃত্বের প্রতি দলের আস্থার কথা পুনরুচ্চারিত হইলেও সনিয়া নিজে বা রাহুল নিজে যে দিগ্বিজয়ের অশিষ্টতা ভর্ৎসনা করেন নাই বা উড়াইয়া দেন নাই, ইহা কেবল কংগ্রেস দল নয়, আমজনতাও নজর করিয়াছে। অথচ মনমোহন সিংহ কোনও উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজনীতিক নহেন, বস্তুত তিনি রাজনীতির বৃত্তের মানুষই নন। মুশকিল হইল, এ দেশের প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে সংসদীয় দলের নেতারা সর্বদা প্রধানমন্ত্রী হন না, তাই শাসক দলের দলপতির অভিপ্রায় এবং প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায়ের মধ্যে অন্তর থাকিয়া যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সনিয়া গাঁধীর ইচ্ছানুসারেই মনমোহন সিংহ সাংসদ না হইয়াও প্রধানমন্ত্রী হইয়াছিলেন। পরে রাজ্যসভায় অসম হইতে দলীয় কোটায় ‘নির্বাচিত’ হইয়া আসিলেও এক জন নির্বাচিত সংসদীয় দলনেতার মর্যাদা ও কর্তৃত্ব কখনওই মনমোহন হাসিল করিতে পারেন নাই। তাই আজ দিগ্বিজয় সিংহরা তাঁহাকে ঠোকরাইতেছেন।
সনিয়া বা রাহুল যদি সত্য-সত্যই মনমোহন সিংহের প্রধানমন্ত্রিত্বেই ইউ পি এ-২-এর অবশিষ্ট মেয়াদ কাটাইয়া দিতে চাহেন, তবে দিগ্বিজয় সিংহদের নিরস্ত করা তাঁহাদেরই কর্তব্য। উদার অর্থনীতির ভারতীয় পথিকৃৎ রূপে মনমোহন সিংহের এখনও অনেক সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার আছে। এ জন্য তাঁহাকে মসৃণ ভাবে কাজ করিতে দেওয়া উচিত। নিজের মন্ত্রিসভাকে যাহাতে তিনি অবাধে পুনর্বিন্যস্ত করিতে পারেন, তাহা সুনিশ্চিত করাও হাইকমান্ডের কর্তব্য। বারংবার কিন্তু এই প্রয়োজনীয় কাজটি স্থগিত হইয়া যাইতেছে। জোট-রাজনীতির বাধ্যতার অজুহাতে দুর্নীতিপ্রবণ আঞ্চলিক মনসবদারদের ‘লাভজনক’ মন্ত্রিত্বে নিয়োগ করার চাপও প্রধানমন্ত্রীর উপর হইতে সরানো উচিত। ডি এম কে-র অভিযুক্ত মন্ত্রীদের নিয়োগে মনমোহনের যে প্রথমাবধি তীব্র আপত্তি ছিল, তাহাকে মর্যাদা দিলে আজ টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির ঘুঁটের মালা ইউ পি এ-২-এর গলায় ঝুলিত না। মনমোহন সিংহকে দুর্বল ও দ্বিধাগ্রস্ত প্রধানমন্ত্রী করিয়া রাখার দায় যে কংগ্রেস হাইকমান্ডের উপরেই বর্তায়, এ কথা শিশুরাও বুঝে। ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি লইয়া তাঁহার দৃষ্টান্তমূলক দৃঢ়তা দেশের রাজনৈতিক শক্তিবিন্যাসের সমীকরণকেই পাল্টাইয়া দেয় এবং জাতীয় রাজনীতি হইতে বামপন্থীদের নির্বাসন নিশ্চিত করে। দলীয় হাইকমান্ড সে-দিন যে-ভাবে মনমোহনের পাশে দাঁড়াইয়াছিল, বর্তমান ক্রান্তিকালেও সে-ভাবেই সনিয়া-রাহুলের উচিত তাঁহার পাশে দাঁড়ানো। |
|
|
|
|
|