দখলদার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র দিসপুর, হত ৩
শূন্যে গুলি ছোড়ার আদেশ ছিল। কিন্তু পরপর গুলির শব্দ শুরু হওয়ার পরেই চোখের সামনে, এক প্রতিবাদকারীর পা এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিল বুলেট। ছিটকে পড়া যুবককে বাঁচাবার সাহস কে দেখাবে? একে একে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন মানুষ। এক দিকে গুলি, অন্য দিকে পাথর বৃষ্টি। প্রায় ৪ বছর পরে লাল হয়ে উঠল অসম সচিবালয়ের সামনের রাস্তা। গুয়াহাটি ও তার আশপাশে, পাহাড় ও অরণ্যভূমি থেকে দখলকারীদের উচ্ছেদ করার প্রতিবাদে কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির নেতৃত্বে কয়েক হাজার জবরদখলকারী আজ, অসম সচিবালয়ের সামনে প্রতিবাদ দেখাতে আসেন। জোর করে সচিবালয়ে ঢোকার চেষ্টা করতেই চলে কাঁদানে গ্যাস, লাঠি, গুলি। নিহত হয় এক শিশু-সহ তিন জন। তাঁরা হলেন রুবুল আলি (৯), শিবকুমার শর্মা (৪২) এবং বীরেন কলিতা (৫৬)। জখমের সংখ্যা প্রায় ৬০।
কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির এক মহিলা সদস্যের সঙ্গে পুলিশের মারপিট। বুধবার গুয়াহাটিতে।পিটিআই
গুয়াহাটির খানাপাড়া সংলগ্ন এলাকার পাহাড়গুলি থেকে জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করতে সম্প্রতি দু’বার অভিযান চালায় বন দফতর। দু’বারই দখলকারীদের প্রতিরোধের মুখে পিছু হঠে প্রশাসন। সেখান থেকেই উচ্ছেদবিরোধী আন্দোলনের রাশ নিজের হাতে নিয়ে নেন কৃষক নেতা অখিল গগৈ। আজ পাহাড়ের কয়েক হাজার দখলদারকে নিয়ে দিসপুর সচিবালয়ের লাস্ট গেটে ধর্নায় হাজির হন অখিল। তাঁদের দাবি ছিল, বনমন্ত্রী, জেলাশাসক বা বনসচিবকে নিজে এসে স্মারকলিপি নিতে হবে এবং উচ্ছেদ বন্ধের নির্দেশ দিতে হবে। কিন্তু ঘণ্টা খানেক পরেও তাঁরা না আসায় বিক্ষোভকারীরা বেড়া ভেঙে সচিবালয়ে ঢোকার চেষ্টা করে। পুলিশ বেধড়ক লাঠি চালায় ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। পাল্টা আঘাত হানে বিক্ষোভকারীরা। পুলিশকে ইট, বাঁশ নিয়ে তাড়া করে মারা হয়। প্রাণভয়ে একে ৪৭ রাইফেল থেকে গুলি চালায় পুলিশ। উপরমুখো গুলি চালাবার নির্দেশ থাকলেও, কালাশনিকভের বুলেট বেশ কয়েকজন প্রতিবাদকারীকে আঘাত করে। বুলেটের আঘাতে জখম হয় বছর নয়ের একটি শিশু। পরে তার মৃত্যু হয়। অপর এক মাঝবয়সী ব্যক্তিও গুলির আঘাতে মারা যান। গুয়াহাটির এসএসপি, এএসপি ও ডিএসপি-সহ বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী ইটের ঘায়ে জখম হন। জখম হন সাংবাদিকরাও। বিক্ষোভকারীরা দু’টি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। পথচলতি বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ভাঙা হয় পুলিশের গাড়ি। রুক্মিণীগাঁওতে তিনটি যাত্রীবাহী বাস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ৫টা নাগাদ পরিস্থিতি খানিকটা শান্ত হয়। ততক্ষণে পুলিশ, সাংবাদিক, বিক্ষোভকারী-সহ ৬০ জন জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।
সন্ধ্যায়, দিসপুরের রাস্তায় জেলাশাসক জে বালাজি, অখিল গগৈয়ের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। অখিলের মতে, “আজকের ঘটনার দায় পুরোপুরি প্রশাসনের। জেলাশাসক বা মন্ত্রীরা কেউ স্মারকলিপি নিতে বা দেখা করতে আসেননি। নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের উপরে বর্বর হামলা চালিয়েছে পুলিশ।” অখিল বলেন, “বন আইনের ধারা অগ্রাহ্য করে, যথেচ্ছভাবে উচ্ছেদ চালাতে চাইছে কামরূপ প্রশাসন। অথচ আইন অনুযায়ী, ১৫ বছরের বেশি অরণ্যভূমিতে বসবাসকারী ভূমিপুত্রদের পাট্টা দেওয়া যায়। খানাপাড়া এলাকায়, কারা ভূমিপুত্র, কারা কতদিন ধরে রয়েছে, সেই সব সমীক্ষা না চালিয়েই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে।” জেলাশাসকের কাছে অখিলের দাবি, ২৮ জুনের মধ্যে উপজাতি উন্নয়ন, রাজস্ব ও বন দফতরের প্রধান সচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান তাঁরা। অখিলদের দাবি, এক মাসের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে আলোচনায় বসে স্থায়ী ও আইনানুগ সমাধান বের করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, “হিংসাশ্রয়ী অখিল মানুষ খেপাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে থাকা মানে নিজের ক্ষতিসাধন করা।”
Previous Story Desh Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.