|
|
|
|
তৃণমূল অফিসে আগুন |
জোড়া খুনে ধৃত সিপিএমের ২ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বর্ধমান |
দু’বছর আগের জোড়া খুনের ঘটনায় দুই সিপিএম কর্মী গ্রেফতার হতেই আগুন লাগানো হল তৃণমূলের কার্যালয়। কাদা লেপা হল শহিদ বেদিতে। বুধবার বর্ধমান থানার নতুনগ্রামে এই গণ্ডগোল হয়। অগ্নিসংযোগের অভিযোগে পুলিশ এক জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে সিপিএমের দাবি, এই হামলায় তাদের কেউ জড়িত নয়।
মঙ্গলবার গভীর রাতে ওই গ্রাম থেকেই শেখ জিয়াউদ্দিন ও জসীমউদ্দিন মণ্ডল নামে দুই সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০০৯ সালের ২৯ জুলাই স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতা, মোল্লা সামসুর রহমান ও শেখ জাফর আলি খুনে তাঁরা অভিযুক্ত। পুলিশ জানায়, নমাজ পড়ে ফেরার পথে পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক সামসুর ওরফে মন্টু মাস্টার এবং জাফর ওরফে জফাই শেখকে খুন করা হয়েছিল। সিপিএমের ২৭ জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। এর মধ্যে ২২ জন আগাম জামিন নিয়ে নেন। পাঁচ জন নেননি। তাঁদেরই দু’জনকে ধরা হয়েছে। বুধবার সিজেএম চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে তোলা হলে দুই ধৃতকে ৫ জুলাই পর্যন্ত জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তৃণমূলের অভিযোগ, দু’জনের গ্রেফতারের বদলা নিতেই সিপিএম তাদের অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়। মন্টু মাস্টার ও শেখ জফাইয়ের শহিদ বেদিতে কাদা লেপে দেওয়া হয়। নতুগ্রামে গিয়ে ভাতারের তৃণমূল বিধায়ক বনমালি হাজরা অভিযোগ করেন, “সিপিএমের চাপেই এত দিন অভিযুক্ত পাঁচজনকে ধরতে পারেনি পুলিশ। এখন দু’জন ধরা পড়তেই ওরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের অফিস পুড়িয়ে দিয়েছে।” এই নিয়ে উত্তেজনা ছড়ালে পুলিশ ও র্যাফ টহল দিতে নামে। পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর নতুনগ্রামে গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, “অপর তিন জনকেও পুলিশ গ্রেফতার করবে। প্রয়োজনে বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি চালানো হবে।” |
|
নিজস্ব চিত্র। |
দু’বছর আগে ওই খুনের পরেও অশান্ত হয়ে উঠেছিল এই এলাকা। তৃণমূলের দু’জন খুন হওয়ার পরে পাল্টা হামলায় গণপ্রহারে মারা যান সিপিএমের শেখ কুতুবুদ্দিন। যদিও গ্রামবাসীর একাংশের দাবি, তিনি পালাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিলেন। কিন্তু সিপিএম পুলিশকে দিয়ে জোর করে খুনের মামলা রুজু করায়। তার জেরে বেশ কয়েক জনকে গ্রামছাড়াও হতে হয়েছিল। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে মন্টু মাস্টারের ছেলে শেখ শাহনওয়াজ এবং জফাই শেখের ছেলে শেখ আনিসুর রহমান রেলে চতুর্থ শ্রেণির চাকরি পান।
মন্টু মাস্টারের মেয়ে শ্যামলী খাতুনের অভিযোগ, “মঙ্গলবার গভীর রাতে সিপিএমের একদল লোক সদর দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে গোটা পরিবারকে খুনের হুমকি দিয়েছে।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা রবীন নন্দী বলেন, “নতুন সরকার আসার পরে পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে পাঁচ অভিযুক্তকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। কিন্তু সিপিএমের তা সহ্য হচ্ছে না। তাই ওরা নতুন করে গোলমাল করছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ তা অবশ্য বলেন, “দু’বছর আগে ওখানে খুন-পাল্টা খুনের ঘটনা ঘটেছিল। ওদের অভিযুক্তেরা জামিন নেয়নি, আমদের লোকেরাও নেয়নি। কিন্তু পুলিশ ওদের না ধরে আমাদের লোকেদেরই ধরেছে। গ্রামে অশান্তি সৃষ্টি করে আমাদের সমর্থকদের গ্রামছাড়া করার উদ্দেশ্যে তৃণমূলের লোকেরাই নিজেদের কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে। আমাদের কেউ এতে জড়িত নয়।”
পুলিশ সুপার অবশ্য বলেন, “আগের জোড়া খুনের ঘটনায় গ্রামের ২৭ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে বর্ধমান থানা। পাঁচ জন জামিন না নেওয়ায় আদালত তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করেছিল। তাঁদেরই দু’জন গ্রেফতার হয়েছেন। তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে আগুন লাগানোর অভিযোগে আপাতত রেজাউল ওরফে রাজিবুল শেখ নামে এক জনকে ধরা হয়েছে।” |
|
|
|
|
|