|
|
|
|
চলছে ইসিএলের খনন |
শিল্পাঞ্চলে পাত্তা পেল না বামেদের বন্ধ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • পাণ্ডবেশ্বর |
অচেনা ছবি দেখল খনি অঞ্চল।
বামফ্রন্টের ডাকা বন্ধ, অথচ দোকান-বাজার খোলা। বসেছে স্কুল। রাস্তায় নেমেছে লোক। বিধানসভা নির্বাচনের আগেও ‘লালদুর্গ’ রানিগঞ্জ, পাণ্ডবেশ্বর, জামুড়িয়ায় যা কল্পনা করা যেত না, কার্যত তা-ই ঘটল বুধবার।
ইসিএলের শোনপুর বাজারি প্রকল্পের কাজে বাধা দিতে গিয়ে মঙ্গলবার পুলিশের লাঠিতে সিপিএম নেতা-কর্মীদের ঘায়েল হওয়ার প্রতিবাদেই ২৪ ঘণ্টার বন্ধ ডাকা হয়েছিল। কিন্তু আগের মতো ‘সর্বাত্মক’ প্রভাব পড়েনি। বহু জায়গাতেই অর্ধেকের বেশি দোকানপাট খোলা ছিল। রানিগঞ্জ শহরে ছ’টি সরকার অনুমোদিত স্কুলও ছিল খোলা। তবে পড়ুয়া ও শিক্ষকের সংখ্যা কম থাকায় তিন-চার পিরিয়ডের পর ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। কয়েকটি জায়গায় আবার জোর করে বন্ধ ‘সফল’ করার চেষ্টা বা তার প্রতিবাদের জেরে বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয়েছে।
এ দিন সকালেই বাসে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে বন্ধ সমর্থকদের বিরুদ্ধে। আসানসোল মহকুমা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায়ের কথায় , “রানিগঞ্জ থেকে উখড়া যাওয়ার সময়ে চিচুড়িয়া মোড়ে যাত্রীদের নামিয়ে বাসে ভাঙচুর চালায় বন্ধ সমর্থকেরা। তার জেরে আসানসোল ও রানিগঞ্জ থেকে জামুড়িয়া-পাণ্ডবেশ্বরের রুটে বাস বন্ধ চালানো যায়নি। বাকি সব রুটে বাস চলেছে।” অন্ডালে ডিভিসি-র নির্মীয়মাণ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করতে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছিল তৃণমূল সমর্থক শ্রমিক-কর্মীদের। এই নিয়ে বিরোধ বাধে। শেষমেশ তৃণমূল নেতা রাজু রায়ের নেতৃত্বে দলের কর্মীরা জোর করে ভিতরে ঢুকে কাজ শুরু করেন। |
|
বহু দোকানপাটই ছিল খোলা। বুধবার দুপুরে রানিগঞ্জ বাজারে ছবিটি তুলেছেন ওমপ্রকাশ সিংহ। |
পাণ্ডবেশ্বরের কেন্দ্রায় আবার পরস্পরের বিরুদ্ধে পুলিশে হামলার অভিযোগ দায়ের করেছে নকশাল এবং সিপিএম। এলাকার পিসিসি সিপিআই (এম-এল) নেতা সাধন দাসের অভিযোগ, কেন্দ্রা পঞ্চায়েতের প্রধান জিতেন ডোম, স্থানীয় নেতা সাধু ডোম, তপন পাল এবং মহাবীর ধাঙ্গরদের নেতৃত্বে সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জোর করে দোকান বন্ধ করাচ্ছিলেন। কিছু দোকানে লুঠপাটও হয়। বাধ্য হয়ে সাধানবাবুরা স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে ‘প্রতিরোধ’ করেন। অন্য দিকে জিতেনবাবুরাও পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন।
রানিগঞ্জের চেলোদ হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক এবং কিছু এসএফআই সমর্থকের বিরুদ্ধে আবার মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস এবং তৃণমূল। তাদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক মণীন্দ্র মাঝি এসএফআই সমর্থকদের নিয়ে স্কুল বন্ধ করে দেন। ছাত্রছাত্রীরা এলেও তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মণীন্দ্রবাবু অবশ্য দাবি করেন, সিপিএমের ডাকা একটি প্রতিবাদ সভায় যোগ দিয়ে একটু দেরিতে, বেলা ১০টা ২০ নাগাদ স্কুলে পৌঁছে তিনি কোনও ছাত্রছাত্রীকে দেখতে পাননি। তাঁর বক্তব্য, “স্কুল থেকে কিছুটা দূরে এসএফআই পিকেটিং করছিল। আমার মনে হয়, ওরাই ছাত্রছাত্রীদের বুঝিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে।”
জামুড়িয়ার খাসকেন্দায় ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি চায়ের দোকান বন্ধ করানো নিয়েও গণ্ডগোল বাধে। তৃণমূল কর্মী শ্রীপতি খানের অভিযোগ, সিপিএমের লোকেরা দোকান বন্ধ করাতে গেলে তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন। তাতে খেপে গিয়ে স্থানীয় সিপিএম নেতা শ্যামল বাউরি, লালন বাউরি, মিন্টু ভুঁইয়ারা তাঁকে বেধড়ক পেটান। সিপিএম অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি তথা বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের টিপ্পনী, “নতুন সরকার আসার এক মাসের মধ্যে বন্ধ ডেকে সিপিএম নিজেদের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনাই প্রকাশ করল। মানুষ কিন্তু এই বন্ধ মানেননি। প্রায় সবই স্বাভাবিক ছিল।” তবে মঙ্গলবারের পরে যে খনি থেকে কয়লা পরিবহণের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তা এ দিনও চালু হয়নি। এরই মধ্যে কাল, শুক্রবার আসানসোল রবীন্দ্র ভবনে বৈঠকে বসছে শ্রমিক সংগঠনগুলির ‘যৌথ অ্যাকশন কমিটি’। তাতে সিটু ও বাম সমর্থিত সংগঠনগুলি ছাড়াও হাজির থাকছে আইএনটিইউসি। সংগঠনের কোলিয়ারি মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক প্রভাত গোস্বামী বলেন, “আগামী ২৯ জুন রাঁচিতে যৌথ অ্যাকশন কমিটির অধিবেশন বসছে। তারই প্রস্তুতি হিসেবে ২৪ জুন রবীন্দ্র ভবনে বৈঠক ডাকা হয়েছে। শোনপুর বাজারি প্রকল্পে পুনর্বাসনের বিষয়টি আলোচিত হতে পারে।” |
|
|
|
|
|