|
|
|
|
যথাযথ পুনর্বাসন চেয়ে পাণ্ডবেশ্বরে সূর্যকান্ত-নিরুপম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • পাণ্ডবেশ্বর |
ইসিএলের শোনপুর বাজারি প্রকল্পের কাজে আর সরাসরি বাধা দেওয়া হল না। কিন্তু কয়লা খনির জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে যথার্থ পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলন চলবে বলে বুধবার পাণ্ডবেশ্বরে গিয়ে জানিয়ে এলেন সূর্যকান্ত মিশ্র ও নিরুপম সেন-সহ তাবড় সিপিএম নেতারা। যে সরকার সিঙ্গুরে ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলছে, তাদেরই পুলিশ কেন অন্যত্র ‘জমি আন্দোলনে’ লাঠি চালাল, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
বর্ধমানের খনি অঞ্চলে ওই প্রকল্পে বাধা দিতে গিয়ে মঙ্গলবার হাঁসডিহায় পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর লাঠির মুখে পড়েন সিপিএম তথা সিটু নেতা-কর্মীরা। পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ও জখম হন। কিন্তু এর প্রতিবাদে এ দিন রানিগঞ্জ, পাণ্ডবেশ্বর ও জামুড়িয়ায় বামফ্রন্টের ডাকা বন্ধ তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। জোর করে কাজ বন্ধ করানোর চেষ্টা এবং তার জেরে কিছু বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ সত্ত্বেও বহু দোকানপাট, স্কুল খোলা ছিল। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “প্রকল্প এলাকায় যথারীতি কাজ হয়েছে।”
এর মধ্যেই সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ হাঁসডিহায় যান বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র ও প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মদন ঘোষ, আসানসোলের সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী, জামুড়িয়ার বিধায়ক জাহানারা খান প্রমুখ। সূর্যকান্ত বলেন, “আমরা কাজে বাধা দেব না। আইনানুগ পথে লড়াই-আন্দোলন করব। কিন্তু রাজ্য সরকার এক দিকে সিঙ্গুরে চাষিদের জমি ফিরিয়ে দিতে চাইছে, অন্য দিকে পুলিশ পাঠিয়ে ইসিএলকে জমি জবরদখল করতে সহায়তা করছে। এই দ্বিচারিতা মেনে নেওয়া যাবে না।” |
|
শোনপুর বাজারি প্রকল্প এলাকায় সূর্যকান্ত মিশ্র ও বংশগোপাল
চৌধুরী-সহ সিপিএমের নেতা-কর্মীরা। বুধবার ওমপ্রকাশ সিংহের ছবি। |
শোনপুর বাজারিতে কয়লাখনি হওয়া ‘গুরুত্বপূর্ণ’ জানিয়েও প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী বলেন, “কয়লা উত্তোলনে আমাদের কোনও নীতিগত বিরোধ নেই। কিন্তু জোর করে জমি নেওয়া যাবে না। প্রায় তিরিশ হাজার মানুষ, তাঁরা যাবেন কোথায়? আগে তাঁদের জন্য যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।” দলের জেলা সম্পাদক জানান, সমস্ত শ্রমিক সংগঠনকে নিয়ে গঠিত ‘যৌথ অ্যাকশন কমিটি’র বৈঠক ডাকা হয়েছে। আন্দোলন কোন পথে যাবে, তা সেখানেই ঠিক হবে।
পুরোপুরি না হলেও কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি-কেও এই আন্দোলনে কিছুটা পাশে পাচ্ছে সিটু। ইসিএল যে জমিহারাদের জমির স্বত্ব দেওয়ার বদলে লিজ দিচ্ছে, সিটু তার ঘোর বিরোধী। আইএনটিইউসি-র কোলিয়ারি মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক প্রভাত গোস্বামীও বলেন, “পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে জমির লিজ নয়, মালিকানা দিতে হবে। তা ছাড়া সিঙ্গুর থেকে শোনপুর বাজারি, সব ক্ষেত্রেই পুলিশের আক্রমণাত্মক ভূমিকার বিরুদ্ধে আন্দোলন হলে আমরা পাশে আছি, থাকব।” তবে জমির মালিকানার বিষয়টি ছাড়া পরিবেশ ও নিয়োগের মতো আর যে সব প্রসঙ্গ সিটু তুলছে, আইএনটিইউসি তা নিয়ে একমত নয়। প্রভাতবাবুর বক্তব্য, ওই সব বিষয়ে আগেই জেলাশাসক পর্যায়ের বৈঠকে সিটু ছাড়া বাকি শ্রমিক সংগঠনগুলি ইসিএলের সঙ্গে সহমত হয়েছিল। তৃণমূল প্রভাবিত আইএনটিটিইউসি আবার ‘যৌথ অ্যাকশন কমিটি’তেই নেই। সংগঠনের রাজ্য কোর কমিটির সদস্য সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “শোনপুর বাজারি প্রকল্প শুরু হওয়ার আগেই ইসিএল কর্তৃপক্ষ সিটু-সহ সব শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিল, সেই অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। রাজ্যে ক্ষমতা হারিয়ে সিপিএম এখন বিপ্লবী হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে।” |
|
|
|
|
|