অতীত থেকে ভবিষ্যৎ
বাঘের কথা
মিত ধরের তোলা কলকাতার কংক্রিটের জঙ্গলের একটা ছবি, তলায় লেখা: ‘আজকের কোলকাতা। একদিন এখানে সুন্দরবন ছিল।’ শুধু সুন্দরবন (সম্পা: জ্যোতিরিন্দ্রনারায়ণ লাহিড়ী) পত্রিকাটির সাম্প্রতিক সংখ্যা ওলটালেই চোখে পড়বে। সুন্দরবন চর্চার এই ত্রৈমাসিকটির প্রকাশক ‘তেপান্তরের স্বপ্ন’, সংগঠনটির কাজই হল সুন্দরবন উন্নয়ন। কিন্তু সম্পাদকীয়-তে তার সমস্যার কথাও: সুন্দরবন জুড়ে সেতু, রেলপথ, রাস্তাঘাট, গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন, পর্যটনের প্রসার এখানকার মানুষের প্রতিদিনের বেঁচে থাকাকে সহজতর করেছে। অন্য দিকে তা সুন্দরবনের অতুলনীয় জীব বৈচিত্রকে একটু একটু করে ঠেলে দিচ্ছে খাদের কিনারায়। এ-পত্রে তাই সুন্দরবনের লুপ্তপ্রায় প্রাণী উদ্ভিদ নিয়ে নানান লেখালেখি, সঙ্গে সেখানকার নিত্যদিনকার ঘটনাপঞ্জি, তুষার কাঞ্জিলালের ধারাবাহিক আত্মকথা: ‘আমার জীবন, আমার সুন্দরবন’। তবে প্রভুদান হালদারের ‘বাঘের ভবিষ্যৎ’ পড়লে হাড় হিম হয়ে যায়: ‘গত ৮ বছরে ৫০ শতাংশর বেশি বাঘ কমেছে। গড়ে দিনে একটা করে বাঘ হত্যা হয়েছে।’ অথচ বাঘ আমাদের জাতীয় পশু! বাঘ নিয়ে তাই বিশেষ সংখ্যা বন (মুখ্য সম্পা: বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য) পত্রিকাটিরও: ‘বাঙালির জীবন ও সাহিত্য বাঘের গল্পে ভরপুর।... সে সব অতীত।
আগামী প্রজন্মকে বাঘ দেখানো ক্রমশ অসম্ভব হয়ে উঠবে।’ রতনলাল ব্রহ্মচারী লিখেছেন ‘বাঘ বাঁচানোর কোনো বাস্তবভিত্তিক আশার আলো খুঁজে পাচ্ছি না।’ আর হিরণ্ময় মাইতি লিখেছেন ‘১৯৯৪ থেকে ২০১০ পর্যন্ত এই ১৭ বছরে খুন হওয়া বাঘের সংখ্যা ৯৭৬ গড়ে প্রতিবছর প্রায় ৫৮টি করে।’ প্রকৃতি ভালোপাহাড়-এরও (সম্পা: কমল চক্রবর্তী) সংখ্যা বাঘ নিয়ে, জয়ন্তকুমার মল্লিক জানাচ্ছেন: ‘১৯৭০ সালে বাঘ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৭২ সালে চালু করা হয় বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইন। তারপর ১৯৭৩ সালে দেশ জুড়ে বাঘ সংরক্ষণের জন্য ব্যাঘ্র প্রকল্প গড়ে তোলা হয়।’ শোরগোল তো সকলেরই তোলা উচিত, তেমন দিশা-ই তিনটি পত্রিকায়। সঙ্গে সাদাকালো আর রঙিনে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় বাঘের দুর্দান্ত ঝলমলে চোখজুড়নো ছবি।

স্মরণ

ছবি: গোপী দে সরকার।
প্রাবন্ধিক হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও সাহিত্য জগতে সমান স্বচ্ছন্দ ছিলেন শিবনারায়ণ রায় (১৯২১-২০০৮)। লিখেছেন কবিতা, অনুবাদ করেছেন সার্ত্র এবং ম্যাক্সিম গোর্কির নাটক। অধ্যাপনার সূত্রে প্রবাসে কাটিয়েছেন দীর্ঘকাল। পঞ্চাশের দশকে ‘উত্তরসূরী’ পত্রিকার তিনি প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক, বিদেশ থেকে ফিরে প্রকাশ করেন ‘জিজ্ঞাসা’। ২৬ জুন বিকেল ৫টায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে তাঁরই নামাঙ্কিত স্মারক বক্তৃতা ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। পুরস্কৃত হবেন অশ্রুকুমার শিকদার, আর ‘আমাদের পজিটিভ বিদ্যাধারা’ শীর্ষকে স্মারক বক্তৃতা দেবেন সৌরীন ভট্টাচার্য। শিবনারায়ণ প্রসঙ্গে আলোচনায় কালীকৃষ্ণ গুহ। সে দিন পরিবারের পক্ষ থেকে ভাস্কর বিপিন গোস্বামীকৃত শিবনারায়ণের একটি ব্রোঞ্জনির্মিত আবক্ষমূর্তি পরিষদে দেওয়া হবে। সঙ্গে তারই।

মান্যবরেষু
“ধরো তোমার সাথে বহুদিন পর কোনো প্রিয়জনের হঠাৎ দেখা হয়ে গেল। তাকে দেখে তো তুমি বলে উঠবেই যে, ‘আজ আবার তোমার সাথে দেখা হয়ে গেল, কী খবর তোমার? ভালো আছো তো?’ এই কথাটা... ঠিক যেভাবে বলবে গানের ভেতরেও সেই খুশি খুশি অনুভূতি, বিস্ময়, ভালোলাগা সবই ছড়িয়ে দিতে হবে।” মান্না দে তাঁর ‘আজ আবার সেই পথে দেখা হয়ে গেল’ গানটি গাওয়ার মধ্যে প্রাণ আনার কথা বলছিলেন গৌতম রায়-কে। গৌতম তাঁর আত্মজীবনী জীবনের জলসাঘরে-র (আনন্দ) অনুলেখক, আদতে একটি জাতীয় গবেষণাগারে প্রধান বিজ্ঞানী, কম্পিউটর-সংক্রান্ত প্রচুর বইয়ের রচয়িতা। মান্না দে তাঁর এই গুণমুগ্ধ মানুষটি সম্পর্কে বলেছেন ‘ও খুব কাছে এসে গেছে আমার।’ এই সূত্রেই গৌতম শিল্পীর ভিতর থেকে বার করে এনেছেন এক অজানা মান্না দে-কে, লিখেছেন মান্না দে মান্যবরেষু (অঞ্জলি পাবলিশার্স)। মান্না দে-র ভূমিকা-সহ বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হল মহাজাতি সদনে, শিল্পীর ৯২তম জন্মদিনে। তাঁকে নিয়ে শতরূপা সান্যালের তথ্যচিত্র ‘জীবনের জলসাঘরে’ও দেখানো হল সে দিন। আয়োজনে ‘মান্না দে সংগীত অ্যাকাডেমি’।

কুচ্ছোকথা
“আমাদের পুঁথিপাটা-মহল্লার চেনা মুরুব্বি, যিনি দিন নেই-রাত নেই, আকাশ নেই-বাতাস নেই, এই তল্লাট-ওই মুল্লুকের ইতিউতি ঢুঁড়ে পেশ করেছেন এক জবরদস্ত থান ইট সেই গৌতম ভদ্র মশাই কথা কইবেন।... তাঁর মজলিশ জমাবেন সেই কেতাবেরই কুচ্ছোকথায়। তা ‘ন্যাড়া বটতলায় যায় ক’বার’ তাঁর যুক্তি-তক্কো-গপ্পে আপনারাও তো আসছেন... সঙ্গে ঠেকা দেবেন, ফোড়ন কাটবেন আলিপুরের কেতাবখানার তালুকদার স্বপন চক্কোত্তি মশাই।” হুতুমি গদ্যের অভিনব এ-আমন্ত্রণ পত্রটি পেশ করেছেন সুমন ভৌমিক, সুতানুটি বইমেলা কমিটি-র পক্ষ থেকে। গৌতম ভদ্রের ন্যাড়া বটতলায় যায় ক’বার বইটিকে ঘিরে তাঁর সঙ্গে স্বপন চক্রবর্তীর কথোপকথনের আয়োজন করেছেন তাঁরা। ২৫ জুন সন্ধে সাড়ে ছ’টায় ছাতুবাবু-লাটুবাবুর বাড়িতে (৬৭ই বিডন স্ট্রিট, কল-৬)।

কোন পথে
বাংলার উন্নতি ঠিক কোন পথে? শুধু সমালোচনা নয়, বরং ইতিহাসের পথ ধরে অনুসন্ধান করা উচিত আমাদের ব্যর্থতার কারণ। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, পরিকল্পনা সঠিক হলে সার্থকতা আসবেই। আর তার খোঁজেই ২০০৯-এ এ শহরে গড়ে ওঠে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ক্যালকাটা। দেশের প্রথম সারির শিক্ষা ও চিন্তাবিদ, আমলা ও স্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিতদের নিয়ে। আপাতত শিক্ষা স্বাস্থ্য আইনশৃঙ্খলা ও সরকারি পরিচালন ব্যবস্থা জমি মহিলা সংক্রান্ত বিষয় সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক উন্নতির বিষয়ে ব্যস্ত এরা। ২৫ জুন বিকেল চারটেয় দ্য কনক্লেভ-এ আয়োজিত হয়েছে এদের আলোচনাসভা। ‘রোল অব ভ্যালু এডুকেশন ইন ট্রান্সফর্মিং বেঙ্গল’ শীর্ষক এই সভার প্রধান বক্তা রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য স্বামী আত্মপ্রিয়ানন্দ, থাকবেন রাজ্যের স্কুলশিক্ষামন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।

পঞ্চকবির গান
গানের টানেই কলেজে পড়ানোর চাকরি ছাড়েন ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়। বিবাহসূত্রে ছাত্রী থেকে পাত্রী হয়ে যান মঞ্চগানের শিল্পী দেবজিতের। থিয়েটারের গান গেয়েই সংগীতশিল্পীর প্রতিষ্ঠা পান ঋদ্ধি। তবু শৈলেন দাস, মায়া সেন, কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায় এবং সুশীল চট্টোপাধ্যায়ের প্রিয় ছাত্রী ভুলতে পারেননি তাঁদের আন্তরিক শিক্ষাকে। রবীন্দ্রনাথ-দ্বিজেন্দ্রলাল-অতুলপ্রসাদ-রজনীকান্ত-নজরুলের বহুবর্ণিল ভাণ্ডারকে বারবার মেলে ধরেছেন আপন পরিবেশনায়। দ্বিজেন্দ্রলাল ও অতুলপ্রসাদের বারোটা গানের সম্ভারে তাঁর সাম্প্রতিক সিডি ‘সে ডাকে আমারে’ সাড়া ফেলেছে গানের জগতে। এ বারে ঋদ্ধির একক নিবেদন ‘পঞ্চকবির গান’ একাডেমি থিয়েটারের উদ্যোগে জি ডি বিড়লা সভাগারে ২২ জুন সন্ধে সাড়ে ছ’টায়।

মরণ-বাঁচন
আর কয়েক মিনিট এ ভাবে কাটলেই নিশ্চিত মৃত্যু। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ নাকি ঘোলা জলের সমুদ্র বোঝা যাচ্ছে না। তুমুল বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়ায় হাঁটুভর জলে রীতিমতো ঢেউ। ১৭ জুন নিম্নচাপের সেই দাপুটে দুপুরে গিরিশ পার্কের মোড়ে জলের মধ্যে খাবি খাচ্ছে পায়রাটা। ডানা ঝাপটাচ্ছে, একটু উঠেই আবার পড়ে যাচ্ছে, ভেসে যাচ্ছে ঢেউয়ের ধাক্কায়। সিগন্যালে দাঁড়ানো বাস, গাড়ি থেকে অনেকেই সেই দৃশ্য দেখে “আহা রে, পায়রাটা মরে যাবে” বলে দুঃখ করছিলেন। কিন্তু সব কিছু গুলিয়ে দিয়ে আচমকা ওই বৃষ্টির মধ্যে আশপাশের বাস, গাড়ি থেকেই নামতে লাগল চেহারাগুলো। চব্বিশের তরুণ, ট্রাউজারে সুসজ্জিতা তরুণী, ধুতি-পাঞ্জাবির বৃদ্ধ সবাই, ওই এক পায়রাকে বাঁচাতে। পায়রা বেচারি অপ্রত্যাশিত মনোযোগ দেখে ঘাবড়ে গিয়ে খাবি খেতে খেতে কখনও এ বাসের নীচে, কখনও ওই টেম্পোর তলায়। সিগন্যাল সবুজ হওয়া সত্ত্বেও জনগণের দাবিতে কোনও গাড়ির চাকা নড়ল না। অবশেষে ফুটপাথের সুরক্ষিত শুকনো জায়গায় রাখা গেল তাকে। তার বেঁচে যাওয়াই আরেক বার ঘোষণা করল, এখনও মন মরে যায়নি এই কলকাতার।

আয়নার সামনে
‘‘কোনও ‘একটি বিশেষ পার্টি’কে নিশ্চিত ভাবে বিশ্বাস করা এবং আরও বহু মানুষকে ‘তাই’ করতে বলার অর্থ এই ‘সময়’-এর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা।... রঙ পালটানোর সঙ্গে, ক্ষমতার একরৈখিক চিৎকার পালটাবে না।” নিজের শিল্প-বিশ্বাস থেকে সতর্ক করেছেন কৌশিক সেন। সদ্য প্রকাশিত তাঁর আমার সময়/আমার থিয়েটার-এর (স্ক্রিপ্ট) নিবন্ধাদি নাট্যকর্মী শুধু নয়, যে-কোনও পাঠককেই ভাবাবে, তর্ক তুলবে। নানান নাট্যপ্রযোজনায় তাঁর অভিনয় আর নির্দেশনার শক্তি, কিংবা বিশিষ্ট পরিচালকদের ছবিতে তাঁর অভিনয়ের সমৃদ্ধি দেখেছি আমরা এতকাল। এ বারে যেন গদ্যকার কৌশিক নিজেরই মুখোমুখি, আমাদেরও দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন আয়নার সামনে।

জৈব উদ্যোগ
বিবাহের এ হেন জৈব প্রচেষ্টা বঙ্গে নজিরহীন। কচুরিপানা থেকে তৈরি কাগজে আমন্ত্রণপত্র। অতিথি আপ্যায়ন জৈব চায়ে। রাসায়নিক সার বা কীটনাশক মুক্ত সবজি। কৃত্রিম খাদ্য বা অ্যান্টিবায়োটিক খাইয়ে বড় করা হয়নি এমন পাঁঠা আর মুরগির মাংস রান্না হবে কোনও রঙ ব্যবহার না করে। ত্রিচুড় থেকে এসেছে সুপুরি পাতার থালা আর জল-চা-সরবত খাওয়ার জন্য বাংলার মাটির গেলাস। জেনারেটর চলবে জৈব-ডিজেলে। অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে থাকছে একশো সৌর লণ্ঠন। তা ছাড়া সৌর প্যানেল বসানো হচ্ছে এলইডি আলোর জন্য। এ আয়োজন বর্ধমান রাজবাড়ির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে, পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের পুত্রের বিয়ে উপলক্ষে। “কেবল বিয়ের অনুষ্ঠানেই নয়, প্রাত্যহিক জীবনেও জৈব প্রচেষ্টা মেনে চলা সম্ভব। এই বার্তাই পৌঁছে দিতে চাই”, বললেন সুভাষবাবু। এই গরমে বিয়ের হল ঘরে এসি থাকবে, তবে ‘দূষণ কাটাতে হল ঘরে রাখা হবে প্রচুর গাছ।’ বিয়ে বাড়ির উচ্ছিষ্ট কিন্তু পথের কুকুর খাবে না, কারণ তা থেকে তৈরি হবে জৈব সার। কুকুরের জন্য আলাদা রান্না হবে। দূষণহীন পরিবেশে জৈব ভোজনের পরে অতিথিরা একটা করে গাছের চারা উপহার পাবেন।

নিসর্গের শিল্পী
শৈশবে বাবার সঙ্গে সাইকেলে চেপে শুরু হয়েছিল প্রথম প্রকৃতি দর্শন। সে দেখা আজও শেষ হয়নি। বরং চিত্তরঞ্জন রেল কারখানায় নিয়মমাফিক কাজের পর সঞ্জয় আজও ছুটে বেড়ান বাংলা-বিহার সীমান্তের রুক্ষ প্রকৃতিতে। সম্বল বলতে বিড়লা অ্যাকাডেমিতে প্রদীপ মৈত্রের কাছে শেখা জল রঙের করণকৌশল। সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় এখন নিসর্গচিত্রের সার্থক শিল্পী। ওঁর ছবি ইতিমধ্যেই যথেষ্ট পরিচিতি পেয়েছে, নানা পুরস্কারও পেয়েছেন। এ বারে ওঁর চতুর্থ একক প্রদর্শনী ‘উপত্যকার মাঝে দাঁড়িয়ে’, শুরু হচ্ছে ২৩ জুন, আকাদেমিতে। প্রয়াত শোভন সোমের স্মৃতিতে উৎসর্গীকৃত এই প্রদর্শনী চলবে ২৯ পর্যন্ত, ৩-৮টা।

দ্রষ্টব্য
আকারে কয়েক মিমি, কিন্তু ওরাই হল পৃথিবীর বৃহত্তম স্থপতি। অথচ দুঃখের বিষয়, বিশ্ব উষ্ণায়নে ওদের প্রায় চল্লিশ শতাংশ আজ নিশ্চিহ্ন। পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এরা হয়তো সম্পূর্ণ বিলুপ্তই হয়ে যাবে। সামুদ্রিক প্রবাল একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সমুদ্রের তলায় পর্বতের আকার নেয়, যা প্রবাল-প্রাচীর নামে পরিচিত। অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ দৈর্ঘ্যে ছাড়িয়ে গিয়েছে চিনের প্রাচীরকেও। ক্যানসার, এডস-এর ওষুধ, বোন গ্রাফটিং, অলঙ্কার ও গৃহসজ্জাতেও প্রবাল বহু ব্যবহৃত। সমুদ্রে ক্ষারের মাত্রা বেড়ে যাওয়াতে বিপন্ন হয়ে পড়ছে প্রবালেরা। পরিবেশ দিবসকে মাথায় রেখে ভারতীয় জাদুঘরে এ মাসের দ্রষ্টব্যে সাজানো হয়েছে নানা ধরনের প্রবাল।

নানা ভাষায়
নানা ভাষা এক গান। সার্ধশতবর্ষে রবীন্দ্রসঙ্গীতের নানা আয়োজনের মধ্যে কিঞ্চিৎ ব্যতিক্রমীটি হতে চলেছে ২১ জুন, বিশ্ব সঙ্গীত দিবসে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শিল্পীরা জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে সেই অনুষ্ঠানে বাংলা ছাড়াও নানা ভাষায় গাইবেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। তার মধ্যে ককবরক, সাঁওতালি, কুড়মালি, খাসি, মেচ, সাদ্রি, রাজবংশীর মতো ভাষাও আছে। এই আয়োজন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজ্য নৃত্য, নাট্য, সঙ্গীত, দৃশ্যকলা অ্যাকাডেমির আয়োজনে। সহায়তায় পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র।

পাল্লা দিয়ে
ছেলেবেলা থেকেই পর্ণ মিত্র-র ইচ্ছে হয় ‘এয়ারহোস্টেস’ হবেন, নয়তো ‘অ্যাকট্রেস’। দ্বিতীয়টিই হলেন শেষ পর্যন্ত, তায় প্রথম ছবিতেই বিপরীতে অঞ্জন দত্ত। আবাল্য এই অঞ্জনের গান শুনেই বেড়ে ওঠা, তাঁর বানানো ‘বড়াদিন’ দেখে মুগ্ধ হওয়া। বড় হয়ে তাঁকেই পরিচালক এবং অভিনেতা হিসেবে পাবেন, ভাবতে পারেননি পর্ণ, প্রায় লালমোহনবাবুর মতোই বলে ফেললেন ‘আমার প্রত্যেকটা স্বপ্ন যে এ ভাবে...।’ ২৪ জুন কলকাতায় অঞ্জনের যে নতুন ছবি মুক্তি পাচ্ছে রঞ্জনা, আমি আর আসব না, তাতে রঞ্জনা পর্ণ, আর অবনী সেন অঞ্জন। বাস্তবের মতো ছবিতেও রঞ্জনা অবনী সেন-এর ফ্যান, গুরু মেনে গান শিখতে এসেছিল তাঁর কাছে। বাস্তব আর সিনেমা একাকার হওয়ায় আনন্দ যেমন হয়েছিল, অঞ্জন-এর সঙ্গে কাজ করতে হবে ভেবে ভয়ও করত পর্ণ-র, ‘সেটা কাটল লোকেশনে, ওয়ার্কশপ করে। স্ক্রিপ্ট শোনানো বা বডি ল্যাঙ্গোয়েজ ওঁর সব কিছু থেকেই শিখে নিতাম।’ আর গিটার কী ভাবে ধরতে হয় তা শিখিয়েছেন সংগীত পরিচালক নীল দত্ত। অঞ্জনের মন্তব্য, ‘অভিনেতা হিসেবে বলতে পারি, ও আমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছে।’
 
রসিক
বেটোফেনের বন্ধু চলে গেলেন গত বুধবার রাতে। কিশোর চট্টোপাধ্যায়ের বালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে রয়ে গেল পাশ্চাত্য ধ্রুপদী সঙ্গীতের প্রায় দেড় হাজার সিডি ও রেকর্ড। দেওয়ালে নিজের আঁকা ছবি। খাটে উল্টো করে রাখা বাদামি ট্রাউজার্স। সব কিছু ফেলে ৭৩ বছর বয়সে সহসা তিনি চলে গিয়েছেন বহু, বহু বছরের পার। একদা ‘ক্লাসিকাল গ্যাস’, ‘স্ট্রিংস অ্যাটাচ্ড’ ইত্যাদি নামে বেটোফেন, মোৎজার্ট এবং ধ্রুপদী পাশ্চাত্য সঙ্গীত নিয়ে নিয়মিত কলম লিখতেন। ‘ক্যালকাটা স্কুল অব মিউজিক’-এ তাঁর উদ্যোগেই চালু হয় ‘লিসনার্স ক্লাব’। এত বেটোফেন শোনেন কেন? বিজ্ঞাপন সংস্থায় চাকরির সময় এই কথাটাই সত্যজিৎ রায়কে জিজ্ঞেস করেছিলেন কিশোর। দীর্ঘদেহী মানুষটির গম্ভীর উত্তর ছিল, ‘ওঁকে শুনতে শুনতেই তো একটা জীবন কেটে যায়।’ সুনয়নী দেবীর পৌত্র কিশোরের সঙ্গীতপ্রেম মনে পড়িয়ে দিত, ‘একাকী গায়কের নহে তো গান’। ছোটদের জন্যও ‘পুপু পেল পিয়ানো’ বা ‘রামধনুর শেষে’র মতো গল্প লিখেছেন। আর তাঁর খেয়াল? মজা করে পোষা কুকুরের নাম দেবেন হিজবিজবিজ। আবার কখনও হারিয়ে যাবেন অবসাদ আর বিষণ্ণতার অন্ধকারে। তবু তাঁর তুলিতে ধরা দেবে কাঁটার মুকুট পরা অর্ফিউস। সেই সত্তর দশকেই এঁকেছেন পুরুষের নগ্নতা। খবর পেয়ে দিল্লির প্রদর্শনীতে পুলিশ এসে হাজির। পুলিশকে চা আর সামোসা খাইয়ে শিল্পী বুঝিয়ে দিলেন, এ সবই শিল্পের ভাষা। ষাটের দশকে বাড়ির অমতে কলকাতার ব্রাহ্মণ কিশোর আর হাজারিবাগের বদ্যি মৈত্রেয়ীর বিয়ের গল্প আরও অসাধারণ! ক্রমে সেই পাত্রী এ শহরে নারীবাদের অন্যতম প্রবক্তা মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়। আর বাড়ির আড্ডায় তাঁর যাবতীয় শাসন সাদা দাড়ির আড়ালে মুচকি হেসে নিঃশব্দে উড়িয়ে দেন কিশোর। কে জানত, ওই রকম নিঃশব্দ দুষ্টুমিতেই দুনিয়াকে সহসা বিদায় জানাবেন তিনি? সঙ্গের ছবি মৃণাল মণ্ডলের তোলা, আত্মপ্রতিকৃতিটি মনসিজ মজুমদারের সংগ্রহ থেকে।
  First Page  


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.