সাত দিন আগে পেটে ছিল ‘গ্যাস’, এখন মিলল মৃত ভ্রূণ
প্রথমে রোগিণীকে পরীক্ষা করে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ জানালেন, তিনি সাড়ে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার পরে সেই মহিলারই জরুরি অস্ত্রোপচার সেরে ঘোষণা করলেন, পেটে বাচ্চা পাওয়া গেল না। গ্যাসের জন্য পেট ফুলে ছিল। ৮ জুনের ওই ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্যবিভাগ তোলপাড় হল, তদন্ত শুরু হল, পুলিশে শিশুপাচারের অভিযোগও হল। মহিলার আল্ট্রাসোনোগ্রাফি ও মূত্র পরীক্ষা করে কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানালেন, মহিলা আদৌ গর্ভবতী ছিলেন না।
এই ঘটনাপ্রবাহের পরে মাত্র এক সপ্তাহ কেটেছে। তার পরেই অভিনব মোচড়! বৃহস্পতিবার রাতে কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে ভর্তি উষা দুর্লভ নামে ওই মহিলার পেট থেকে চার মাসের মৃত ভ্রূণ বার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। যাঁর পেট সাড়ে সাত মাস ধরে গ্যাসে ফুলেছিল বলে চিকিৎসকেরাই জানিয়েছিলেন। অস্ত্রোপচার করে ও পরবর্তীকালে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করার পরেও যাঁর জরায়ুতে ভ্রূণের কোনও অস্তিত্ব মেলেনি তাঁর পেট থেকে কী করে মৃত ভ্রূণ পাওয়া গেল তার নানারকম ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছেন হাসপাতালের সুপার ও চিকিৎসকেরা। তার কোনওটাই অবশ্য যুক্তিগ্রাহ্য মনে হয়নি অন্য স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের। প্রথমে যিনি মহিলার অস্ত্রোপচার করেছিলেন সেই চিকিৎসক শুভেন্দু দত্ত-ও এখনও বলে চলেছেন, “পেটে বাচ্চা ছিল না। আমি কোনও বাচ্চা পাইনি।”
কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতাল উষা দুর্লভ। সুদীপ ভট্টাচার্য
হাসপাতাল অবশ্য এখন দাবি করেছে, ভ্রূণ বার করার পুরো প্রক্রিয়াটিই ক্যামেরায় ধরে রাখা আছে। সংরক্ষিত রয়েছে ভ্রূণটিও। কিন্তু উষাদেবীর স্বামী নদে দুর্লভ গোটা বিষয়টির মধ্যে রহস্য রয়েছে বলে দাবি করে মৃত ভ্রূণের ডিএনএ পরীক্ষার দাবি জানিয়েছেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা অমিত হালদারও জানিয়েছেন, আগের তদন্ত রিপোর্ট স্বাস্থ্যভবনে পাঠানো হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আবার তদন্ত করতে হবে। স্বাস্থ্য দফতরের ‘হাসপাতাল সেল’-এর দায়িত্বে থাকা বিশ্বরঞ্জন শতপতীও বিষয়টিতে বিস্ময় প্রকাশ করে সবকিছু খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন।
উষাদেবী প্রথম থেকেই বলছিলেন যে তিনি সাড়ে সাত মাসের গর্ভবতী। আচমকা রক্তপাত শুরু হওয়ায় তিনি হাসপাতালে এসেছিলেন। তার পরেই পেটে বাচ্চা থাকা বা না থাকা নিয়ে বিভ্রান্তির সূত্রপাত। বৃহস্পতিবার কী হয়েছিল? উষাদেবীর বক্তব্য, “রাতে মূত্রত্যাগ করতে গিয়ে আমার মনে হচ্ছিল কিছু একটা বেরিয়ে আসছে। চিকিৎসকদের সেই কথা জানাতে তাঁরা ছুটে আসেন।” ওই হাসপাতালেরই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ প্রমথকুমার রায় বলেন, “সম্ভবত দিন দুই আগেই জরায়ু থেকে বার হয়ে মৃত ভ্রূণটি রোগিনীর যোনিপথে আটকে ছিল। আমি সেটা বার করে দিই। ২-৩ ইঞ্চির মতো একটি মাংসপিন্ড ছিল। পরীক্ষা করে আমাদের মনে হয়েছে চার মাসের ভ্রূণটির জরায়ুর ভিতরেই মৃত্যু হয়েছিল। বাকি চার মাস সেখানেই ভ্রূণটি আটকে ছিল। তার পরে কোনও ভাবে সেটি যোনিপথে আটকে যায়।”
প্রশ্ন হল চিকিৎসক পেট কেটে ঘোষণা করলেন, জরায়ু স্বাভাবিক রয়েছে, বাচ্চা নেই। সেটা কী করে হল? আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতেও জরায়ুতে ভ্রূণের অস্তিত্ব পাওয়া গেল না কেন? সুপার কাজল মণ্ডল যুক্তি দেন, “ভ্রূণটি জরায়ুর মধ্যে অনেকদিন ধরে মরে শুকিয়ে ছিল বলে জরায়ু জামরুলের মতো ছোট হয়ে ছিল। তাই হয়তো চিকিৎসক বুঝতে পারেননি। মহিলা যাতে চিরকালের মতো মা হওয়ার ক্ষমতা না হারান তাই তিনি জরায়ু কাটেননি। তবে অন্য ভাবে পরীক্ষায় তাঁর বোঝার কথা ছিল। সেটা অন্যায় হয়েছে।”
আর আল্ট্রাসোনোগ্রাফি? কাজলবাবুর উত্তর, “হয়তো যখন আল্ট্রাসোনোগ্রাফি হয়েছে তত দিনে মৃত ভ্রূণটি জরায়ু থেকে যোনিপথে চলে এসেছিল। তবে আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে মনে হয়েছিল যোনিপথে কিছু একটা রয়েছে।” কিন্তু তারপরেও কোনও ব্যবস্থা কেন নেওয়া হল না, এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। অন্য দিকে, রোডিওলজিস্ট রমেশ বিশ্বাসও জানিয়েছেন, তিনি ভ্রূণের অস্তিত্ব পাননি। চিকিৎসক প্রমথকুমার বলছেন, দিন দুই আগে ভ্রূণটি যোনিপথে এসেছে। প্রমথবাবুর কথা মেনে নিলে প্রশ্ন ওঠে আল্ট্রাসনোগ্রাফি তো হয়েছে সাত দিন আগে, তখন কেন ধরা পড়েনি। এই প্রশ্নেরও কোনও উত্তর দেননি কাজলবাবু।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞেরা কিন্তু বলছেন, মূত্র রিপোর্টে ভ্রূণের অস্তিত্ব না পাওয়া গেলেও অস্ত্রোপচার করে বা আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে জরায়ুতে ভ্রূণ দেখতে না পাওয়া অবাস্তব। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সুরঞ্জন চক্রবর্তী যেমন বলেছেন, “চার মাসের ভ্রূণের আম্বিলিক্যাল কর্ড, প্ল্যাসেন্টা সব কিছু তৈরি হয়ে যায়। চার মাস ধরে ভ্রূণ মারা গিয়ে সেখানে থাকলেও জরায়ু স্বাভাবিকের থেকে বড় হতে বাধ্য। এটা চিকিৎসক দেখতে পেলেন না বা ইউএসজিতে ধরা পড়ল না, এটা বিশ্বাস করাই শক্ত।” স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অরূপ মাজিরও বক্তব্য, “চার মাসের ভ্রূণ মরে শুকিয়ে থাকলে জরায়ু চার মাসের মতো ফোলা না হোক দু’মাসের মতো ফোলা তো হবে। এটা কী করে চোখ এড়িয়ে গেল? এটা তো অবিশ্বাস্য।”
First Page Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.