পরিবর্তনের আশ্বাস দিতেই আজ শিল্পমহলের সঙ্গে বৈঠকে মমতা
পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের কাপাসবেড়িয়ায় রিলায়্যান্সের রিটেল ব্যবসার জন্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারের থেকে জমি নিয়েছিলেন মুকেশ অম্বানী। গত সপ্তাহে স্থানীয় কিছু তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সেই জমির পাঁচিল ভেঙে দেয় এবং রিলায়্যান্সের স্থানীয় কর্তাদের বলে, ‘এই জমিতে এখনও কিছু হয়নি। জমিতে যখন কোনও প্রকল্প হচ্ছে না, তখন এই জমিটাও আমরা সিঙ্গুরের মতোই দখল করে নেব।’ এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ রিলায়্যান্স কর্তৃপক্ষ মামলা করার হুমকি দেন। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানে ওঠে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সাংসদ শিশির অধিকারীকে নির্দেশ দেন, তৃণমূল কর্মীদের বলতে যে, আইন নিজের হাতে নেওয়া যাবে না। শিশিরবাবু তৃণমূল কর্মীদের বোঝান। একই সঙ্গে রিলায়্যান্স কর্তৃপক্ষকেও জানিয়ে দেওয়া হয়, সিঙ্গুরের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। রাজ্যে শিল্পপতিদের হাতে থাকা অন্যান্য জমির ক্ষেত্রে সরকার ওই ধরনের কোনও মনোভাব নিচ্ছে না।

ঘটনা-২
বারাসতে রাজ্য সরকার ও মহেন্দ্র জালানের যৌথ উদ্যোগে মেট্রো ডেয়ারির যে দুগ্ধ প্রকল্প রয়েছে, সিটুর আন্দোলনের জেরে গত মঙ্গলবার সেখানে ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’ ঘোষণা করতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। ঘটনা জানার পরেই মুখ্যমন্ত্রী স্থানীয় সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, শ্রমিকদের ধর্মঘট করার অধিকার হল ব্রহ্মাস্ত্র। এটা যখন তখন প্রয়োগ করা অনুচিত। শ্রমিকদের দাবিদাওয়া থাকতেই পারে। কিন্তু তা মালিকপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই মেটাতে হবে। উৎপাদন থামিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া চলবে না। মেট্রো ডেয়ারির সমস্যা মেটাতে স্থানীয় প্রশাসনকেও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ পাঠানো হয়। আর এ দুইয়ের যোগফলে এক দিনেই স্বাভাবিক হয়ে যায় মেট্রো ডেয়ারি।
শনিবার রাজ্যে যে শিল্প সম্মেলন হতে চলেছে, তার প্রাক্কালে এই দু’টি ঘটনাতেই স্পষ্ট, শিল্পায়নের স্বার্থে রাজ্যের কর্মসংস্কৃতির ভাবমূর্তিটা বদলাতে চান মুখ্যমন্ত্রী। বামেদের হাত ধরে বন্ধ-ধর্মঘটের যে ‘সংস্কৃতি’ এ রাজ্যে গড়ে উঠেছে, তার পরিবর্তন চান তিনি। সে জন্য প্রয়োজনে বামেদের পাশাপাশি নিজের দলের বিরুদ্ধেও যে কড়া পদক্ষেপ করবেন, তা স্পষ্টও করে দিয়েছেন। বস্তুত শাসকের গদিতে বসার আগেই মমতা জানিয়েছিলেন, কথায় কথায় বন্ধ-ধর্মঘটের চেনা ছবিটা এ রাজ্যে বদলাতে চান তিনি। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে একাধিক ঘটনায় শিল্পমহলের কাছে সেই বার্তা পৌঁছেও দিয়েছেন তিনি। এই অবস্থায় রাজ্যে ‘শাসক দলের’ ডাকা কর্মনাশা বন্ধের ছবিটা বদলাবে বলেই আশায় রাজ্যের শিল্পমহল। এ ছাড়াও যদি বর্তমান বিরোধী, অর্থাৎ বামফ্রন্ট বা সিপিএম বন্ধ ডাকে, তা হলে রাজ্য সরকার কী ভাবে তার মোকাবিলা করবে, সেটাও এখন জানতে আগ্রহী শিল্পমহল।
কর্মসংস্কৃতির বদল ঘটানোর পাশাপাশি বামেরা তাঁকে ‘শিল্প-বিরোধী’ বলে যে প্রচার করেছে, সেই ভাবমূর্তিও ভাঙতে মরিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বরং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলের নয়াচর বা অন্ডাল বিমাননগরীর মতো প্রকল্প খারিজ না করে নতুন করে পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে সেগুলি বাস্তবায়িত হতে পারে। এমনকী সিঙ্গুরের বিল পেশের পরেও মমতা জানিয়েছেন, তিনি টাটা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোনও ব্যক্তিগত বিদ্বেষ পোষণ করেন না। তিনি যা করেছেন, তা ‘অনিচ্ছুক চাষিদের’ স্বার্থে। তাঁর কথায়, “ক্ষতিপূরণ নিয়ে টাটা গোষ্ঠী যদি আলোচনা চায়, তা হলে আমি শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জানিয়েছি, যাতে তিনি ওদের সঙ্গে কথা বলেন।”
মমতা বুঝতে পারছেন, পশ্চিমবঙ্গকে বর্তমানের চরম আর্থিক সঙ্কট থেকে মুক্ত করতে হলে চাই শিল্পপতিদের বিনিয়োগ। জমি অধিগ্রহণেও তাঁর আপত্তি নেই, কিন্তু সেই অধিগ্রহণ হতে হবে কৃষকদের সম্মতির ভিত্তিতে। তা ছাড়া, শিল্পপতিদের বিনিয়োগ বাস্তবায়িত করতে গেলে যে সুষ্ঠু পরিকাঠামো গড়ে তোলা দরকার, তা ভালই বোঝেন তিনি। বিশেষত বন্দর এবং জাতীয় ও রাজ্য সড়ক। মমতার বক্তব্য, আগের সরকার এই পরিকাঠামো গড়তে ব্যর্থ হয়েছে। এখন এই পরিকাঠামোর জন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সাহায্য চাইছেন মমতা। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী মারুতি-কর্তা আর সি ভার্গবের সঙ্গে বৈঠক করে অনুরোধ করেন যে, মারুতি যেন পশ্চিমবঙ্গে নতুন কারখানা গড়ে। ভার্গব তাঁকে বলেন, গুজরাতের মতো বন্দরের সুবিধা কলকাতায় থাকলে তাঁরা যেতে পারতেন। একই প্রতিক্রিয়া আমুল সংস্থার অমৃতা পটেলেরও। অমৃতা জানান, পরিকাঠামো থাকলে এবং শ্রমিক সমস্যা ও সমবায় ক্ষেত্রে দলীয় রাজনীতি না থাকলে আরও অনেক দুগ্ধ প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গে গড়া সম্ভব।
শনিবার শিল্পপতিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁদের কাছে এই চালচিত্র বদলেরই আশ্বাস দিতে চাইছেন মমতা। এ ব্যাপারে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও সক্রিয়। কলকাতার সম্মেলন সফল হলে ভবিষ্যতে মুখ্যমন্ত্রী মুম্বইয়ের মতো শহরে বিশেষ সম্মেলন করতে পারেন। পার্থবাবু চাইছেন, রাজ্য যদি বিনিয়োগে আস্থা অর্জন করতে পারে, তখন অন্য রাজ্যে গিয়েও ‘বাংলার মুখ’ প্রচার করা সহজ হবে।
স্বাধীনতার সময়ে মাথাপিছু আয়ের বিচারে পশ্চিমবঙ্গ ছিল শীর্ষস্থানে। ৬৪-৬৫ সাল নাগাদ পশ্চিমবঙ্গকে ছাপিয়ে গেল পঞ্জাব, হরিয়ানা, গুজরাত, মহারাষ্ট্র। এর পর কর্নাটক এবং তামিলনাড়ুও পশ্চিমবঙ্গকে টপকে গেল! ১৯৪৭ সালে ভারতের মোট বাণিজ্যের ৪৪ শতাংশ কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে হলেও ৬০-এর দশকের শেষের দিক থেকে কমতে কমতে তা এক সময় ৮ থেকে ১০ শতাংশে এসে দাঁড়ায়।
৩৫ বছরের বাম শাসনে অর্থনৈতিক ছবির এই অধোগতি ঠেকানো যায়নি বলেই মনে করেন মমতা। অধোগতি ঠেকিয়ে ছবিটার ‘পরিবর্তন’ই এখন মরিয়া লক্ষ্য মুখ্যমন্ত্রীর।
First Page Rajya Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.