|
নাটক সমালোচনা... |
|
সেই চারু সেই অমল |
সূত্রধর ‘চারুলতা’র সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। একই মঞ্চে নাটক এবং সিনেমা।
‘নষ্টনীড়’। পরিচালক গৌতম হালদার। লিখছেন সংযুক্তা বসু |
“আমি অমল, অমল বলছি।
‘চারুলতা’র অমল।
না না, আজকে এই মুহূর্তে আমি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অমল নয়। অমলের গল্প বলতে এসেছি।”
এ ভাবেই অন্য চোখে অন্য দৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নষ্টনীড়’ গল্পের চারুলতা-অমল-ভূপতিদের মেলে ধরতে সূত্রধর হয়ে মঞ্চে হাজির হতে চলেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
|
দুলাল লাহিড়ি |
বাঙালির কাছে অমল মানে তো একমেবাদ্বিতীয়ম সৌমিত্রই। তিনিই তো সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’র সেই অমল, যে কালবৈশাখীর দুপুরে ঝড় মাথায় নিয়ে এসে পড়ে, চারুর একঘেয়ে জীবনের রোজনামচা বদলে দিতে। সেই অমলকে, চারুকে, ভূপতিকে নতুন ভাবে ভাঙা গড়া করে কেমন ভাবে সাতাত্তরে উপনীত আজকের সৌমিত্র সূত্রধরের বেশে মঞ্চে আনবেন? প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে রয়েছে যোজক নাট্যগোষ্ঠীর নতুন প্রযোজনা ‘নষ্টনীড়’-এ। চারুর ভূমিকায় ঋতাভরি চক্রবর্তী, অমল, শুভ্রজিৎ দত্ত আর ভূপতি, দুলাল লাহিড়ি। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিচালক ‘ভালো থেকো’ আর ‘মুক্তি’র পরিচালক গৌতম হালদার। কেন হঠাৎ এই নতুন আলোয় দেখা অমলের গল্পে সূত্রধর হতে আসছেন সৌমিত্র? উত্তরে |
|
হাসতে হাসতে, তিনি বললেন, “কেনই বা আসব না? অমল কি আমার একার? নতুন যুগে নতুন দৃষ্টিতে ‘নষ্টনীড়’-এর গল্পটি বলা হচ্ছে বলেই উৎসাহ পেয়েছি। তা ছাড়া আমি একজন পেশাদার শিল্পী। অমলের হয়ে নতুন করে গল্প বলায় অসুবিধে তো নেই। সেই ‘চারুলতা’ আর এই ‘নষ্টনীড়’ তো কোথাও এক নয়। তাই এই তুলনার কোনও মানে নেই।”
১৯৬৪ সালে ‘চারুলতা’ ছবি হওয়ার পর গত সাতচল্লিশ বছরে অসংখ্য বার ‘নষ্টনীড়’ হয়েছে। সে সব প্রযোজনার থেকে এই নতুন উদ্যোগের অভিনবত্ব তা হলে কোথায়? যোজক নাট্যগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে দুলাল লাহিড়ি বলছেন, “গোড়ায় এই প্রযোজনাকে আর পাঁচটা শ্রুতিনাটকের মতো করেই ভেবেছিলাম। কিন্তু পরে পরিচালক গৌতম হালদারের সঙ্গে নাটকের উপস্থাপনার আঙ্গিক নিয়ে আলোচনা হতে হতে শ্রুতিনাটক হয়ে উঠল ‘সিনে প্লে’ বা ছবিনাটক।” |
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় |
‘সিনে প্লে’? সে আবার কী? ব্যাপারটা হল ‘নষ্টনীড়’-এর টুকরো টুকরো অংশ অভিনীত হবে মঞ্চে। আর বাদবাকিটা ধরা থাকবে সেলুলয়েডে মঞ্চের বিশাল প্রেক্ষাপট জুড়ে। কখনও মঞ্চের সংলাপ গিয়ে মিশবে সিনেমার দৃশ্যপটে, কখনও সিনেমার চিত্রকল্প কথা বলবে মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকা চারু-অমল-ভূপতিদের টানাপোড়েনের সাক্ষী হয়ে। ‘নষ্টনীড়’-এর অভিনবত্ব এখানেই। দর্শকের মন যখন মঞ্চের সীমানা পার হয়ে, ক্লোজ-আপে চরিত্রের একান্ত অভিব্যক্তি দেখতে চাইবে, তখন তাঁদের চোখ চলে যাবে বড় পর্দায়। চারু যখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে একাকী আপন মনে, তখন সিনেমার পর্দায় দেখা যাবে লম্বা বারান্দার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে হেঁটে চলে যাচ্ছে ভূপতি, বই পড়তে পড়তে। খেয়ালই নেই যে চারু দাঁড়িয়ে রয়েছে তার চলার পথের ঠিক পাশেই। কিংবা ধরা যাক আরেকটা দৃশ্য। অমল যখন চারুকে ছেড়ে চলে গেল, এমন একটা সময় চারু একা মঞ্চে ডুবে আছে যন্ত্রণায়। পর্দায় ভেসে ওঠে অমলের মুখ। অদৃশ্য ভালবাসার সঙ্গে চারুর সংলাপ বুঝিয়ে দেবে সম্পর্ক ভাঙে না। সম্পর্ক বদলায় মাত্র। |
ঋতাভরি চক্রবর্তী |
শুভ্রজিৎ দত্ত |
|
এই কথাটিই পরিচালক গৌতম হালদার মেলে ধরতে চাইছেন নতুন ‘নষ্টনীড়’-এ। বললেন, “শুধু যে ‘সিনে প্লে’ তৈরি করে পরিবেশনায় একটা নতুনত্ব আনতে চাইছি তা নয়। ‘নষ্টনীড়’-এ বক্তব্যটাও আলাদা। আমরা প্রশ্ন তুলতে চাইছি ‘নীড়’ কি সত্যিই ‘নষ্ট’ হল? নাকি ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে অনেক বেশি পরিণত হয়ে উঠল এই গল্পের তিনটে চরিত্র। এটাই মনে হয় রবীন্দ্রনাথ বোঝাতে চেয়েছিলেন তাঁর লেখায়। আমরা মূল ‘নষ্টনীড়’-এর দৃষ্টিকোণটাই ধরতে চাইছি।” ‘সিনে প্লে’র শু্যটিং হয়েছে খন্যান রাজবাড়িতে।
ছবি আর নাটক।
নাটক আর ছবি।
কী ভাবে মিলবে তিনটি চরিত্রের গল্পে, তা প্রথম দেখা যাবে জি ডি বিড়লা সভাঘরে। আগামী শনিবার। সন্ধ্যায়। |
|