|
|
|
|
গুরু বব অতীত, আর্মান্দোয় মন মজেছে সুনীলের |
রূপায়ণ ভট্টাচার্য • নয়াদিল্লি |
রঙের সেই বিখ্যাত বিজ্ঞাপনে বলা হত, “ওয়াহ্, সুনীল বাবু! নয়া ঘর, নয়ি মিসেস, নয়ি গাড়ি! বড়িয়া হ্যায়!”
ভারতীয় ফুটবলের ‘মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলর’ সুনীল ছেত্রীকে ও রকম কেউ বলবে না! কিন্তু জাতীয় দলের নয়া জমানায় ফুটবলার সুনীলবাবু ‘বড়িয়া হ্যায়’!
কোনও দিন নিজের টুইটারে নারায়ণ কার্তিকেয়নকে মন্ট্রিয়ল রেসের জন্য শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তিনি। কোনও দিন সুব্রত পালের ছবি দিয়ে দিচ্ছেন। নীচে ক্যাপশননাম্বার ওয়ান গোলকিপার। এক দিন রেনেডি সিংহের ছবি। নীচে ক্যাপশনআমাদের বাড়িতে সুপারস্টার।
এই সুনীল ছেত্রী একেবারে টেকনোলজি-প্রিয়।
কখনও ঝড়ের গতিতে ইংরেজি বলে যাচ্ছেন আমেরিকান স্টাইলে। কখনও ঝরঝরে বাংলায় অনর্গল বলে যাওয়া। কখনও বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি থেকে জাতীয় শিবিরে।
এই সুনীল ছেত্রীর গায়ে একেবারে ছেলেমানুষি লেগে।
কিন্তু ভাইচুং-উত্তর ভারতীয় দলে সর্বভারতীয় মিডিয়ার চোখে প্রধানতম আকর্ষণ যে তিনি, বারবার ধরা পড়ছে জাতীয় শিবিরে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের টিভি বিশেষজ্ঞের পরে তো আরও বদলে গিয়েছে ছবিটা। বছর তিনেক আগে তিনি এক বার বলেছিলেন, “দাভিদ ভিয়ার পাশে খেলাটা স্বপ্ন। ওঁর মতো ছোটখাটো চেহারার লোক যদি এত সফল স্ট্রাইকার হতে পারেন, আমি পারব না কেন?” তখনও ভিয়া এ দেশে এত পরিচিত নাম নয়।
এই বিশ্বাসটা সুনীল ছেত্রীর চলনে বলনে।
হাউটন, ভাইচুংনাম দুটো এখন জাতীয় ফুটবলারদের তীব্র দুশ্চিন্তার বিষয়। কী বলবেন, আর কী মানে হয়ে যাবে, এই ভয়ে কেউ কিছু বলতে চান না। অজস্র পাক মাঠটা চক্কর দিয়ে কথা বলতে এসে সুনীল কিন্তু অকপট। দক্ষতার সঙ্গে সামলালেন প্রশ্ন। হাউটনকে ছাড়া জাতীয় শিবির কেমন লাগছে? সুনীল বললেন, “তেমন ফারাক সত্যি লাগছে না। উনি পাঁচ বছর কাজ করেছেন। তার পরে গেছেন। এটাই জীবন।” আর ভাইচুং ছাড়া প্রথম জাতীয় শিবির? সুনীল ওই তোড়েই বলে গেলেন, “ইট হ্যাড টু হ্যাপেন। গত বছরে ভাইচুংয়ের চোট ওকে ভুগিয়েছে। নানা সমস্যা ছিল। আমি ওর সঙ্গে কথাও বলেছি। তবে জীবনে তো এমন হয়ই। আই এম বিজয়নের মতো ফুটবলারকেও এক দিন অবসর নিতে হয়েছে। দীপক, রেনেডিও শিবিরে ডাক পায়নি।”
আগের জমানা পুরোপুরি ভুলে দেশের এক নম্বর স্ট্রাইকার যে সামনের দিকে তাকাতে চান, তা প্রতিটি বাক্যে উপচে পড়ল। সুনীলের মতো ভাল কথা বলতে পারার লোক খুব কম। এখানে শুনলাম, প্রি-অলিম্পিক দলের স্টপার অধিনায়ক রাজু গায়কোয়াড়, স্ট্রাইকার জেজে, মিডফিল্ডার শিল্টন ডি’সিলভার মধ্যে এই উপকরণ রয়েছে। কিন্তু সুনীল অন্য ধারার। আর্মান্দোয় মন মজেছে তাঁর। “আমি ডেম্পোয় ওঁর কোচিংয়ে খেলেছি। বল পজেশনের উপর জোর দিয়ে থাকেন। প্লেয়ারদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। এত বার জাতীয় লিগ জিতেছেন, সেটাই বলে দিচ্ছে উনি কত ভাল কোচ।” দিল্লির বিকেলটা যেমন তীব্র ঝড়-বৃষ্টির পরে রোদ উঠে অন্য রকম হয়ে গেল, সুূনীলের মুখটাও তেমন ঝকঝকে। বড়িয়া হ্যায়!
জাতীয় দলের কথা উঠলেই বড় বেশি ডেম্পোর কথা উঠছে। এটা কি ভাল? সুনীলের এই প্রশ্নের জবাব দিতেও দ্বিধা নেই। “দেখুন, হাউটন কোনও ক্লাবের কোচ ছিলেন না। আর্মান্দো ডেম্পোর কোচ। তাই এখন এত বেশি কথা হচ্ছে। আর ক’দিন পরে দেখবেন আর্মান্দো কোলাসোকে সবাই ভারতের কোচ হিসেবে দেখছে। তখন আর ডেম্পোর কথা বলা হবে না।” কে বলবে, টুইটারে গুরু ববের পক্ষে সওয়াল করে বিপদে পড়েছিলেন একদা? একটা প্রশ্নই এড়িয়ে গেলেন, যখন কথা উঠল, আর্মান্দোকে চার মাসের জন্য দায়িত্ব দেওয়া ঠিক হল কি না। সাম্প্রতিক অতীতে তাঁর সঙ্গে এন প্রদীপ, আব্রামচেসের মতো অনেকে সতর্কিত হয়েছেন ফেসবুক বা টুইটারে বিতর্কিত লিখে। হয়তো এ জন্যই বললেন, “এটা আমার বলা ঠিক হবে না।”
তিনিই সর্বোচ্চ মূল্যের ভারতীয় ফুটবলার হতে চলেছেন। কিন্তু সুনীলই একমাত্র জাতীয় তারকা, যাঁর কোনও ক্লাব নেই। তাঁর দল বদল নিয়ে জল্পনারও শেষ নেই। আপনি নিজে কী বলছেন? “বিদেশে খেলাই প্রথম পছন্দ। আমার এজেন্ট ক্লাব খুঁজছে। এখনও তো অনেক সময়। তাড়াহুড়োর কী আছে?”, বলার পর অবশ্য যোগ করলেন, “বিদেশে খেলার সম্ভাবনা খুব কম। এক সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেব।” তাঁর বাবা কে বি ছেত্রী আগের দিন প্র্যাক্টিস দেখতে এসে যা বলছিলেন, তাতে কলকাতায় খেলার সম্ভাবনাই বেশি। তা হলে কি ছয় বছর পরে আবার প্রথম ক্লাব মোহনবাগানেই? সুনীল বললেন, “এক সপ্তাহ সময় দিন না! তার পরে সবাইকে জানিয়ে দেব।”
ফুটবলার হওয়ার কোনও ইচ্ছেই জীবনে ছিল না। ইন্ডিয়া সার্টিফিকেট পেলে ভাল কলেজে ঢোকা যাবে, এই ভাবনা থেকে শুরু করেছিলেন ফুটবল। আর এখন ফুটবল ছাড়া কিছু নেই সুনীলের জীবনে। কলকাতা, গোয়া, পঞ্জাবভারতীয় ফুটবলের তিন ভুবনেই খেলা হয়ে গিয়েছে তাঁর। ফুটবলের দৌলতেই পা রেখেছেন আমেরিকায়। প্রিমিয়ার লিগ খেলতে চলা কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সে তিন বছরের চুক্তিও সই হয়ে গেছিল দু’বছর আগে। খেলা হয়নি ভারতের ফিফা র্যাঙ্কিং ৭০-এর মধ্যে না থাকায়। দেখে ভাল লাগল, এত বাধার মধ্যেও বিদেশে খেলার চেষ্টা ছাড়েননি সুনীল।
মাঠ জুড়ে অজস্র চক্কর শেষে গলা ছেড়ে একটা চিৎকার করেছিলেন তিনি। মানেটা কী? জানি না। প্রশ্নও করা হয়নি। কিন্তু এত দূর লেখার পরে মনে হচ্ছে, চিৎকারটার মানে একটাই। সামনে তাকাও, সামনে তাকাও।
সুনীলবাবু বড়িয়া হ্যায়! |
|
|
|
|
|