|
|
|
|
আমলার পোষা বাঁদরের কামড় খেলেন বনকর্মীরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রাঁচি |
পোড়খাওয়া এক আইএএস অফিসারের পোষা বাঁদরের তাণ্ডবে দু’দিন ধরে তটস্থ শহরের এক অভিজাত মহল্লা। রাঁচির ওই প্রাক্তন কালেক্টর সজল চক্রবর্তী অবশ্য পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে এখন সাসপেন্ড রয়েছেন। বন্যপ্রাণী আইনের তোয়াক্কা না-করে রাঁচির কোকরে তাঁর বাড়িতে যে তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে একটি ছোটখাটো ‘চিড়িয়াখানা’ বানিয়ে রেখেছিলেন তা এ বার প্রকাশ্যে এসেছে।
কাল সকালে খাঁচা থেকে বেরোনোর পরে সজলবাবুর পোষা বাঁদর-বাহিনী প্রতিবেশীদের উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। বন দফতরের কর্তারাও বাঁদর ধরতে এসে কামড় খেয়ে রণে ভঙ্গ দেন। একটি বাঁদরকে কোনওমতে খাঁচা-বন্দি করা গেলেও বাকিদের কব্জা করতে তাঁরা ব্যর্থ হন। বন্য প্রাণী আইনে, বাঁদর বিপন্ন প্রাণীর তালিকাভুক্ত। তা পোষা যায় না। পুষলে জেল পর্যন্ত হতে পারে। রাজ্যের এক জন পরিচিত আমলা এ ভাবে নিয়ম ভাঙলেও প্রশাসন কেন তা দেখেও দেখছে না? বন দফতরের কর্তাদের কাছে এর সদুত্তর মেলেনি। বন দফতরের সংরক্ষক আর এন প্রসাদ বলেন, “রাঁচির ডিএফও এখন শহরে নেই। তিনি ফিরলে এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করা হবে।” |
|
পোষা বাঁদরদের সঙ্গে সজল চক্রবর্তী। প্রশান্ত মিত্রের তোলা ছবি। |
ঠারেঠোরে অবশ্য বন দফতরের কর্তারা স্বীকার করছেন, পশুপ্রেমী সজলবাবুর বিষয়টি নিয়ে যতটা কড়া হওয়া উচিত ছিল, তা ওঁরা হতে পারেননি। বনকর্তাদের এই ‘নরম অবস্থানে’র মাসুল দিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সজলবাবুর বাড়ির পাশের আবাসনের বাসিন্দা সুতপা মিত্র যেমন এখনও আতঙ্কে রয়েছেন। তিনি বলেন, “একটা বাঁদর বারান্দায় আমার পথ আটকে দাঁড়িয়েছিল। ওকে তাড়াতে গিয়ে আমার স্বামী বিশ্রী ভাবে কামড় খান। কোনওমতে ঘরে ঢুকে ছোট বাচ্চাসুদ্ধ আমরা তিন জন দরজা বন্ধ করে ছিলাম। বাঁদর অন্য ঘরে ঢুকে জিনিসপত্র তছনছ করে।” আর এক প্রতিবেশী রামপরেশ যাদবের কথায়, “বাঁদরটা ঘরে ঢুকে দু-দু’টো মোবাইল ফোন ছুড়ে বেঙে দিল। আক্রমণ করেনি এই রক্ষে।” স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সজলবাবুর বাঁদর মাঝেমধ্যেই খাঁচা থেকে বেরিয়ে যায় বলে পাড়ায় পরিচারক-পরিচারিকারা কাজ করতে চান না। তবে এত বড় হামলা এই প্রথম ঘটল।
সজলবাবু অবশ্য এ সব অভিযোগ শুনেও নির্বিকার। বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বাঁদর পোষা যে বেআইনি, তা তিনি নিজেই জানেন বলে স্বীকার করেন। কিন্তু তাঁর সাফাই, বাঁদরগুলি চিড়িয়াখানায় রাখার জায়গা নেই। আর রাঁচির কাছাকাছি বাঁদরগুলিকে জঙ্গলে ছাড়লে গ্রামবাসীরা তাদের মেরে ফেলতে পারে। তাই বাঁদরদের নিরাপত্তার স্বার্থেই তিনি ওদের ছাড়তে পারছেন না। আপাতত সজলবাবুর জিম্মায় পাঁচটি বাঁদর ও একটি কুকুর। প্রতিবেশীদের বক্তব্য, কিছু দিন আগে তাঁর দু’টি পোষা কচ্ছপও ছিল। যারা এখন মারা গিয়েছে। তবে সজলবাবু জানিয়েছেন, চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা চলছে। চিড়িয়াখানায় শীঘ্রই বাঁদরের জন্য নতুন একটি থাকার জায়গা তৈরি হবে। তখন তাঁর পোষা বাঁদরগুলিও ওখানেই রাখা হবে বলে কথা হয়েছে। |
|
|
|
|
|