|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
অপচয় |
বঙ্গীয় বাক্যালঙ্কারে ‘হরিষে বিষাদ’ বলিয়া একটি বস্তু আছে। এক্ষণে রণবীর কপূর হয়তো সেই বস্তুটি উপলব্ধি করিতেছেন। হর্ষ, কারণ তাঁহার নক্ষত্র-দীপ্তিতে বিমুগ্ধ জনতা দলে দলে রাস্তায় ভিড় করিয়াছে। বিষাদ, কারণ সেই ভিড়াক্রান্ত দার্জিলিং-এ আর ‘শুট’ করা যায় নাই। নির্মীয়মাণ ছবিটির পরিচালক অনুরাগ বসু জানাইয়াছেন, অনাবশ্যক অর্থব্যয় না-করিয়া অন্যত্র ছবিটি তুলিবার বন্দোবস্ত শুরু হইয়া গিয়াছে। অতঃপর, মুম্বইয়ের ‘সেট’ বা অন্য কোনও শৈলশহর যদি এই চলচ্ছবিতে ‘দার্জিলিং’-রূপে দেখা দেয়, বিস্ময়ের কিছু থাকিবে না। ছবির দৃশ্যগ্রহণ-এ এই জাতীয় ‘ফাঁকি’ স্বীকৃত, এবং সঙ্গত কারণেই স্বীকৃত। কারণ, দৃশ্যগ্রহণের যথাযথ পরিকাঠামো যদি না থাকে, কোনও প্রযোজকই বসিয়া বসিয়া জলের ন্যায় অর্থব্যয় করিবেন না। দার্জিলিং-এ পূর্বে একাধিক ছবির দৃশ্যগ্রহণ হইয়াছে, হয়তো ভবিষ্যতেও হইবে। সাম্প্রতিক সংকট একটি কাঁটার ন্যায় জাগিয়া থাকিল। অপ্রতুল প্রশাসনিক পরিকাঠামোর কাঁটা। প্রকৃতি এই শৈলনগরীতে অপর্যাপ্ত সৌন্দর্য বিতরণ করিয়াছে। আপাত দৃষ্টিতে পরিকাঠামোর বন্দোবস্তটিও মন্দ নহে। অথচ, মুম্বই সিনেমা দূরস্থান, পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজক-পরিচালকগণই যখন দার্জিলিং-এ দৃশ্যগ্রহণ করিবার পূর্বে দুই বার ভাবেন, তখনই বুঝা যায়, সংকটটি গভীরে নিহিত। তাহা অন্য কিছু নহে, দার্জিলিং-এর ভাবমূর্তির সংকট। সাম্প্রতিক এই বিপত্তি-ই প্রমাণ, সংকট দূর হয় নাই।
বিপণনের পরিভাষায় যাহাকে ‘ব্র্যান্ডিং’ বলে, সেই বিষয়টি এই ক্ষেত্রে বিবেচ্য। চলচ্চিত্র-শিল্পের নিকট দার্জিলিং একটি ‘ব্র্যান্ড’ হিসাবে গড়িয়া উঠিতে পারিত। অথচ, পারে নাই। তাহাতে শুধু যে এই শৈলনগরীর অজস্র মানুষের আয়ের পথ সুগম হইত, তাহাই নহে, অনুষঙ্গে দার্জিলিং-এর পর্যটন ব্যবসারও অধিকতর শ্রীবৃদ্ধি হইত। মুম্বই তো বটেই, টালিগঞ্জের পরিচালকেরাও নয়নাাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যের সন্ধানে বিদেশে পাড়ি দিতেছেন। বিদেশের বিভিন্ন স্থান প্রযোজক-পরিচালকদের প্রাকৃতিক শোভার পাশাপাশি এমন কিছু পরিকাঠামোগত সুবিধা প্রদান করিতেছে যে, সদলে গিয়া ‘শুট’ করিলেও আর্থিক সাশ্রয় হইতেছে। হাতের নিকট দার্জিলিং ব্রাত্যই থাকিতেছে। সূর্যালোকিত কাঞ্চনজঙ্ঘা, পাহাড়ি পথ ইত্যাকার বস্তু যে যাহার অনন্য শোভা-সহকারে হাজির, অথচ, প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে তাহার রূপ চলচ্ছবিতে উঠিবার সুযোগ পাইতেছে না। পশ্চিমবঙ্গে পালাবদলের পরে চলচ্চিত্রশিল্পের হাল ফিরাইবার কথা শুনা যাইতেছে। কলিকাতার অদূরে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে একটি ‘ফিল্ম সিটি’ গড়িবার কথা শুনা গিয়াছে। সাধু উদ্যোগ, কিন্তু ইহার পাশাপাশি দার্জিলিং-এর ন্যায় চলচ্চিত্রশিল্পের পক্ষে অনুকূল যে সকল স্থান আছে, তাহাদেরও যথাযথ ভাবে বিপণন করা জরুরি। সেই কাজটির জন্য সর্বাগ্রে প্রশাসনিক পরিকাঠামোর বন্দোবস্ত করা প্রয়োজন। ‘ফিল্ম সিটি’ বিশেষ ভাবে ছবির দৃশ্যগ্রহণের জন্যই নির্মিত। অথচ, রাজ্যে সাগর হইতে পাহাড় পর্যন্ত এমন কিছু প্রাকৃতিক অঞ্চল আছে, যাহার দৃশ্যরূপ কখনওই কৃত্রিম ভাবে নির্মাণ করা সম্ভব নহে। যেমন, কাঞ্চনজঙ্ঘা। যেমন, সাগরসৈকত। কিছু মৌলিক প্রশাসনিক পরিকাঠামো ঠিক থাকিলেই এই জাতীয় স্থানকে চলচ্চিত্র শিল্পের অনকূল করিয়া তোলা যায়। নূতন সরকার বিষয়টি ভাবিয়া দেখিলে ভাল। আপাতত, দার্জিলিং-এরও হরিষে বিষাদ। জায়গাটি জমজমাট হইবার কথা ছিল। হইল না। |
|
|
|
|
|