সম্পাদকীয় ১...
প্রত্যাশা
বিশ্বাস অভিজ্ঞতার সন্তান। প্রত্যাশাও। অতীতে যাহা ঘটিয়াছে এবং বর্তমানে যাহা ঘটিতেছে, তাহার উপর ভিত্তি করিয়াই ভবিষ্যতের প্রত্যাশা তৈরি হয়। কথাটি জীবনের সর্ব ক্ষেত্রেই সত্য। অর্থনীতির দুনিয়ায় আরও বেশি সত্য। অর্থনীতির পরিভাষায় এই জাতীয় প্রত্যাশাকে ‘অ্যাডাপ্টিভ এক্সপেক্টেশন’ অর্থাৎ অভিজ্ঞতা-অনুগামী প্রত্যাশা বলা হইয়া থাকে। ভবিষ্যতের চেহারা কী হইবে, তাহা এই প্রত্যাশার উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে যেমন। যদি বর্তমানে মূল্যবৃদ্ধির হার চড়া থাকে, তবে প্রত্যাশা হইবে, ভবিষ্যতেও মূল্যবৃদ্ধির হার চড়া-ই থাকিবে। এই প্রত্যাশাটি ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে যে কোনও সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। একটি উদাহরণ দেখা যাউক। ধরিয়া লওয়া যাউক, কোনও একটি শ্রমিক সংগঠনের প্রত্যাশা, আগামী এক বৎসর মূল্যবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশ থাকিবে। ফলে, সংগঠনটি দাবি করিবে, বেতনবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের বেশি হইতে হইবে। শিল্পপতিও যদি প্রত্যাশা করেন, কাঁচামালের দাম ১০ শতাংশ হারে বাড়িবে, তিনিও শ্রমিকের বেতন এবং কাঁচামালের দামের বৃদ্ধির অঙ্কটি হিসাবে রাখিয়া পণ্যের দাম স্থির করিবেন। এই ভাবে, আগামী এক বৎসরে যে মূল্যবৃদ্ধির হার সকলে প্রত্যাশা করিতেছেন, তাহা অর্থনীতির হিসাবে ঢুকিয়া পড়িবে, ফলে প্রকৃত মূল্যবৃদ্ধির হারও বাড়িবে।
যেহেতু অভিজ্ঞতা-অনুগামী প্রত্যাশা মূল্যবৃদ্ধির প্রকৃত হারকে প্রভাবিত করে, ফলে ঊর্ধ্বমুখী প্রত্যাশাকে নিয়ন্ত্রণ করা যে কোনও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের অবশ্যকর্তব্য। ঊর্ধ্বমুখী প্রত্যাশা নিয়ন্ত্রণের উপায় বাজারে বিপরীত প্রত্যাশা সৃষ্টি করা। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক যদি বাজারে এই ইঙ্গিতটি স্পষ্ট ভাবে দিতে পারে যে তাহারা মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখিতে চাহে, তবে বাজার সেই বার্তাটি গ্রহণ করে, এবং তাহাকে আপন প্রত্যাশার অন্তর্ভুক্ত করিয়া লয়। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের হাতে এই ইঙ্গিত দেওয়ার অস্ত্র হইল আর্থিক নীতি, অর্থাৎ মুখ্যত অর্থের জোগান এবং সুদের হার নিয়ন্ত্রণের নীতি। ব্যাঙ্ক কঠোর আর্থিক নীতির পথে হাঁটিবার সিদ্ধান্ত করিলে বাজার সেই সংকেত বুঝিয়া লয়। এক বারে যদি না-ও বোঝে, দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় বারে বাজারে ইঙ্গিত পৌঁছাইতে বাধ্য। অর্থাৎ, ঊর্ধ্বমুখী মূল্যবৃদ্ধির হারের প্রত্যাশাকে প্রতিহত করিতে হইলে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ককে কঠোর আর্থিক নীতির পথটি ধরিয়া রাখিতে হইবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঠিক তাহাই করিয়াছে। সম্প্রতি ব্যাঙ্ক রেপো ও রিভার্স রেপো রেট বাড়াইয়া ৭.৫ শতাংশ ও ৬.৫ শতাংশ করিল। গত এক বৎসরে ব্যাঙ্ক মোট দশ বার এই ‘পলিসি রেট’ বাড়াইল। বাজারে স্পষ্ট বার্তা পৌঁছাইয়াছে। বাজারের প্রত্যাশা, আগামী মাসে ফের সুদের হার বাড়িবে। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিও সুদের হার বাড়াইতে বাধ্য। মূল্যবৃদ্ধির প্রত্যাশায় এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়িবেই।
মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এক গুরুত্বপূর্ণ যোদ্ধা, কিন্তু একমাত্র নহে। সরকার কী অবস্থান লয়, তাহার উপরও বাজারের প্রত্যাশা নির্ভর করে। ব্যাঙ্কের কঠোর আর্থিক নীতির বিপরীতে সরকার যদি শিথিল রাজস্ব নীতি গ্রহণ করে, তবে ব্যাঙ্কের উদ্যোগটি মার খাইতে বাধ্য। আবার, পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে সুদের হার বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ব্যয় যতখানি বাড়িবে, সংস্থাগুলি তাহার সমস্তটাই ক্রেতাদের ঘাড়ে চাপাইয়া দিতে পারিতেছেন, তাহা হইলেও মূল্যবৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী হইবে। বস্তুত, ব্যাঙ্কের গভর্নর তাঁহার ভাষণে উল্লেখ করিয়াছেন, বর্ধিত ব্যয়ের বোঝা ক্রেতাদের ঘাড়ে চাপাইয়া দেওয়ার ক্ষমতা সংস্থাগুলির আছে। অবশ্য, বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংগঠন এই কথাটির প্রতিবাদ করিয়াছে। এই ক্ষমতা খানিক কম থাকিলেই সাধারণ মানুষের মঙ্গল। কিন্তু, বাণিজ্যিক সংস্থার লাভ যাহাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তাহাও জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থেই নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাহার একটি উপায় কুশলতা বৃদ্ধি। ভারতীয় অর্থনীতিতে এখনও তাহার যথেষ্ট অবকাশ রহিয়াছে। কিন্তু, সেই কাজে সরকারের প্রত্যক্ষ ভূমিকা প্রয়োজন।
First Page Editorial Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.