|
|
|
|
তার ছিঁড়ে ব্যাহত বিদ্যুৎ, বৃষ্টিতে নাকাল জনজীবন |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
টানা বৃষ্টি তো ছিলই। তার উপরে দুপুর থেকে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, পানীয় জলের সরবরাহ বন্ধ। বর্ষার শুরুতেই নাকানি-চোবানি খেয়ে গেল বর্ধমান।
গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার থেকে দক্ষিণবঙ্গে যে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল, শুক্রবার তা দিনভর চলেছে। কখনও কমেছে তার বেগ, কখনও ফের এসেছে ঝাঁপিয়ে। সেই সঙ্গে হু-হু হাওয়া। সব মিলিয়ে গুটিসুটি মেরে গিয়েছে বর্ধমান শহর। সকাল থেকেই রাস্তায় লোকচলাচল কম ছিল। অফিস-আদালতে হাজিরা ছিল কম। দোকানপাট তেমন খোলেনি। বেলা বাড়তে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। বিকেল থেকে কার্যত গোটা শহর বিদ্যুৎহীন। ফলে, পুরসভা পানীয় জল জোগাতে পারেনি। বহু জায়গায় জল জমে গিয়েছে। গাড়ি-ঘোড়াও চলেছে কম।
একই চিত্র কাটোয়া এবং কালনারও। কাটোয়া মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কিছু বাড়ি। মহকুমাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম বলেন, “বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে সরকারি ভাবে ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই।” কালনায় চকবাজার, ইন্দিরাবাজার, ধাত্রীগ্রাম বাজার, সমুদ্রগড় তাঁত কাপড় হাটের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলিতে ছিল কার্যত বন্ধের চেহারা। খেয়াঘাটও সুনসান। যাত্রীর অভাবে অনেক বাসই আর রাস্তায় নামেনি। বৃহস্পতিবার গভীর রাতেই কালনা, মন্তেশ্বর ও পূর্বস্থলীর বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। সারা দিন বিদ্যুৎ আসেনি। ফলে বহু জায়গাতেই পৌঁছয়নি জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর এবং সজলধারা প্রকল্পের পানীয় জল। কালনার মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি বিকেলে বলেন, “বিপর্যয়ের কারণ খোঁজার চেষ্টা চলছে।’’ |
|
নিজস্ব চিত্র। |
বর্ধমান উত্তর ও দক্ষিণ মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট শুরু হয় দুপুরের পরে। বিদ্যুৎ বণ্টন নিগম সূত্রের খবর, টানা বৃষ্টিতে রায়না ও ডিভিসির ৩৩ হাজার ভোল্টের সাবস্টেশন দু’টি বিকল হয়ে গিয়েছে। তার জেরে বর্ধমান শহরের পাঁচটি ১১ হাজার ভোল্টের সাবস্টেশন বন্ধ করে দিতে হয়েছে। সদরঘাট, কাটোয়া রোড, বেচারহাট, পাওয়ার হাউস ও নবাবহাটের ওই সাবস্টেশনগুলি থেকে শহরে বিস্তীর্ণ অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। সদরঘাটে সাবস্টেশনের ভিতরেই বিকল হয়ে পড়েছে দু’টি ট্রান্সফর্মার। এক মাত্র ভাতারের মাহাচান্দা সাবস্টেশন কিছুটা বিদ্যুৎ দিতে পারছে। সেই সামান্য বিদ্যুৎ দিয়ে শহরের একটি-দু’টি এলাকায় ৪০-৪৫ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের বর্ধমানের জোনাল ম্যানেজার রঞ্জন মিত্র বলেন, “ঝড়ে অনেক জায়গায় তারের উপরে গাছ পড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমাদের কর্মীরা জরুরি ভিত্তিতে গাছ সরানোর চেষ্টা করছেন।” যদিও বৃষ্টির কারণে সেই কাজ বারবার বাধা পেয়েছে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও কয়েক ঘন্টা বিদ্যুৎ ছিল না। ফলে অস্ত্রোপচার-সহ নানা জরুরি পরিষেবা আটকে গিয়েছে। সন্ধ্যায় জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা পাওয়ার হাউসে গিয়ে অবিলম্বে হাসপাতালে বিদ্যুৎ পাঠাতে বলেন। কিন্তু তারের উপরে প্রচুর গাছপালা ভেঙে পড়ে থাকায় দ্রুত তা করা যায়নি। বিকেলে জেলাশাসক বলেন, “হাসপাতালে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।” বহু ক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকায় নানা পাড়ায় অস্থায়ী জেনারেটার পরিষেবাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে হাতে গোনা যে কিছু দোকানপাট খোলা ছিল, সন্ধ্যা হতে না হতে তারাও ঝাঁপ ফেলেছে।
কালনায় ইতিমধ্যেই মহকুমা প্রশাসনের তরফে বিডিও-দের এলাকা না-ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কালনা ১ ব্লক প্রশাসন ও পুরসভার তরফে ত্রিপল চাওয়া হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরসভার রাস্তাগুলিতে বিশেষ জল জমতে দেখা যায়নি। উপ-পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, “দিন পাঁচেক আগে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নর্দমা সংস্কারের কাজ করা হয়েছে। এর পরেও শহরের জল জমলে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নিকাশির ব্যবস্থা করা হবে।”
কিছুটা হলেও এক মাত্র সুখবর রয়েছে ধান ও পাট চাষিদের জন্য। জেলা মুখ্য কৃষি করণের উপ-অধিকর্তা শ্যামল দত্ত বলেন, “বুধবার গড়ে ৩৬ মিলিমিটার, বৃহস্পতিবার ১৫ মিলিমিটার এবং শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টি নথিভুক্ত হয়েছে আমাদের নানা আবহাওয়া পরিমাপক কেন্দ্রে। এতে আমন চাষের উপকার হবে। বৃষ্টির অভাবে চাষিরা ধুলোয় বীজতলা তৈরি করছিলেন। তা বেঁচে যাবে। পাটচাষিরাও উপকৃত হবেন। তবে শসা, উচ্ছে ইত্যাদি বাগান-সবজির ক্ষতি হতে পারে।”
ঝাড়খণ্ডের জলাধারগুলিতে জল না থাকায় এ বার বোরো চাষে জল জোগাতে পারেনি ডিভিসি। তবে এ ভাবে বৃষ্টি চললে আগামী খরিফ মরসুমে জলের অভাব হওয়ার কথা নয়। সেচ দফতরে সূত্রে বলা হয়েছে, বর্ধমান জেলার প্রায় সর্বত্র হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দফতরের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধারে জল এখনও তলানিতে। ও দিকে ভারী বৃষ্টি না হলে বর্ধমান, বাঁকুড়া, হুগলি ও হাওড়া জেলায় খরিফ চাষে সেচের জল সরবরাহ করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে এ ভাবে বৃষ্টি চললে জলাধার ভরে যাবে।” |
|
|
|
|
|