রুগ্ণ স্বাস্থ্য/ ৩
পরিকাঠামোর ‘অসুখে’ ধুঁকছে কাঁথি হাসপাতাল
ত্যধিক রোগীর চাপ, পরিকাঠামোর অভাব আর দালাল-চক্রের দৌরাত্ম্যে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের নাভিশ্বাস অবস্থা। কিন্তু স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে হাজারো প্রশ্ন থাকলেও রোগীর সংখ্যা কমছে কই! অন্তর্বিভাগে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই গাদাগাদি করে থাকেন রোগীরা। শৌচাগারের সামনে মেঝেতে সার দিয়ে শুয়ে থাকেন প্রসূতিরা। দেখেও দেখে না কেউ। পরস্পরের ঘাড়ে দায় চাপাতেই ব্যস্ত সকলে।
কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা সম্ভবত প্রসূতি বিভাগের। একটা ঘরে গা ঘেঁষে গোটা উনিশেক শয্যা। মাঝে জায়গা এত কম যে এক শয্যা থেকে অন্য শয্যা যেতে হলে উপর দিয়েই যেতে হয়। তারই মধ্যে এক-একটি শয্যায় শুয়ে রয়েছেন দু’জন করে অন্তঃসত্ত্বা। কখনও আবার নবজাতককে সঙ্গে নিয়ে। সদ্যোজাতের সঙ্গে একই শয্যায় প্রায় একে অপরের উপরে চেপে শুয়ে ছিলেন প্রসূতি খুকুমণি বারিক ও বাতাসি দাস। অসুবিধা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, “এই অবস্থা যদি মেনে না নিই, তা হলে মেঝেতে শুতে হবে। সে আরও কষ্টকর।”
সত্যিই সে এক ভয়ানক অবস্থা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেল, প্রসূতি বিভাগে ১৯টি শয্যা থাকলেও প্রতি দিন গড়ে ৬৫-৭০ জন প্রসূতি ভর্তি হতে আসেন। এক-এক দিন তা একশো ছাড়ায় বলে জানালেন ওয়ার্ড মাস্টার তরুণ সাঁতরা। কোনও রোগীকে ফেরত পাঠানো চলবে না বলে সরকারি নির্দেশিকা রয়েছে। অগত্যা শয্যায় দু’জন করে, মেঝেতে সার দিয়ে শুইয়ে রেখেও জায়গার সঙ্কুলান হয় না। শৌচাগারের সামনের সামান্য জায়গাতেও ফাঁক করে বিছানা পেতে নেন কোনও প্রসূতি। কার্যত নরক পরিবেশে নবজাতক বা প্রসূতির সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যথেষ্ট।
মহকুমা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ। নিজস্ব চিত্র।
এই পরিস্থিতির জন্য হাসপাতালের পরিকাঠামোকেই দুষছেন নবাগত সুপার তপন পালিত। তিনি জানান, কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল দু’শো শয্যার অনুমোদন পেলেও ১৪১টি শয্যা রয়েছে এখনও। কেন শয্যা সংখ্যা বাড়েনি জানতে চাইলে সিএমওএইচ সুকুমার দাস বলেন, “সদ্য শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর অনুমতি মিলেছে। কিন্তু নতুন শয্যা পাতার কোনও জায়গা নেই। এমনিতেই বারান্দা-করিডরে শয্যা পাতা রয়েছে। ভবন না বাড়ালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর উপায় নেই।”
হাসপাতালের সার্জিক্যাল বিভাগে মাত্র এক জন চিকিৎসক রয়েছেন। ৭৫ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী থাকার কথা। সেখানে রয়েছে মাত্র ৪১ জন। ২১ জনের জায়গায় সাফাইকর্মী রয়েছেন মাত্র ৮ জন। আর ৪ জনের বদলে মাত্র দু’জন ওয়ার্ড মাস্টার রয়েছেন হাসপাতালে। অভাব রয়েছে অন্যত্রও। হাসপাতালের আলট্রা সোনোগ্রাফি মেশিন দীর্ঘ দিন অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। আবার অনেক সময় পরিকাঠামোগত সুবিধা থাকলেও বাইরে নার্সিংহোমে পরীক্ষার জন্য ‘রেফার’ করা হয় বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। মহকুমা হাসপাতাল চত্বরেই কাঁথি ব্লাড ব্যাঙ্ক। দীর্ঘ দিন ধরে ব্লাড ব্যাঙ্কে স্থায়ী চিকিৎসক নেই। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে কোনও রকমে। রোগীদের খাবারের মান নিয়েও রয়েছে হাজারো অভিযোগ।
সবার উপরে রয়েছে দালাল-চক্রের দৌরাত্ম্য। গরমে টেবিল ফ্যান থেকে শুরু করে অ্যাম্বুল্যান্স, এমনকী অন্য নার্সিংহোমে ভর্তি করানোতাদের ব্যস্ততার শেষ নেই। মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির কাঁথি পুরপ্রধানের প্রতিনিধি হেরম্ব দাসের অভিযোগ, “একে বেহাল অবস্থা, তার উপরে দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতাল বা আশপাশের অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ‘রেফার’ করা রোগীদেরও সামলাতে হয়। অতিরিক্ত চাপেই বেহাল পরিকাঠামো আরও ভেঙে পড়ছে।” পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করেও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারী। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, “রোগীর পরিবারের লোকজনদের জন্য বিশ্রামঘর তৈরির উদ্দেশ্যে বহু দিন আগে আমি বিধায়ক কোটা থেকে ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। সেই কাজ আজ পর্যন্ত হয়নি।”
মহকুমা হাসপাতালের বহির্বিভাগের অবস্থা আরও শোচনীয়। সকাল ৯টায় বহির্বিভাগ খুলে গেলেও প্রাইভেট প্র্যাক্টিসের জন্য বেলা ১১টার আগে চিকিৎসকেরা হাসপাতালে আসার সময় পান না বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, রোগীদের দেখার চেয়ে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের সঙ্গে কথা বলাতেই বেশি আগ্রহ চিকিৎসকদের। যদিও বর্তমান সুপার তপনবাবু মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের হাসপাতালে প্রবেশের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। কিন্তু ‘নেই-নেই’ আর অনিয়মের এই রাজত্বে সে কথা শোনে কে!
Previous Story Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.