|
|
|
|
নিখোঁজ স্রোত ৪... |
মজা নদীর বুকে চাষ, খেলার মাঠ |
সেবাব্রত মুখোপাধ্যায় • হরিহরপাড়া |
গ্রীষ্মের শুরুতে কয়েকবার বৃষ্টি হলেও তারপর গরমকাল ফিরে এসেছে চেনা চেহারাতেই।
ছোট নদী, খাল, বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। সেই পরিস্থিতির কথাই এই প্রতিবেদনে। |
ত্রিশ বছর আগেও যেখানে স্রোত দেখা যেত, আজ সেখানে খেলার মাঠ। কিংবা মানুষের পরিচিত রাস্তা। অথবা বাড়ির উঠোন।
পদ্মার শাখা নদী ভৈরবের এই অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি। চোখের সামনেই একটু একটু করে নদীটি যখন মজে যায়, স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, চোখ বুজে ছিলেন রাজনীতি থেকে প্রশাসনের সব নেতা-কর্তারাই।
মুর্শিদাবাদ জেলার আখরিগঞ্জে পদ্মা থেকে উৎপত্তি ভৈরবের। ইসলামপুরের কাছে বরদহবাঁধী থেকে এই এসে হরিহরপাড়ায় ঢুকে রুকুনপুর দিয়ে নওদার ত্রিমোহিনী হয়ে একটি অংশ ভাণ্ডারদহ বিলের সঙ্গে এবং অন্য অংশ নওদার বালি শ্যামনগর হয়ে জলঙ্গিতে মিশেছে। প্রতিবার বর্ষার সময় বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক হলে নদীতে জল দেখতে পাওয়া যায়। বন্যা হলে নদী কানায় কানায় ভর্তি থাকে। তা ছাড়া, এই নদীর খাত পড়ে থাকে জলশূন্য হয়ে।
কী কারণে আজ ভৈরবে জল নেই? হরিহরপাড়ার প্রবীণ বাসিন্দা মুক্তার শেখ বলেন, “বাঁধী এলাকাটি পলি পড়ে পড়ে উঁচু হয়ে গিয়েছে। ফলে মূল নদী আর সেখানে ঢুকতেই পারে না। আমরা প্রায় সারা বছর নদীর জলে চাষ করতাম। এখন নদীর জল বেপাত্তা।”
নদীর খাতে জমে রয়েছে কচুরিপানা। এই ভরা গ্রীষ্মে নদী পুরো শুকনো। সেই শুকনো খাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পায়ে চলা রাস্তাই তৈরি হয়ে গিয়েছে। তার পাশে যেন এক টুকরো সবুজ মাঠই তৈরি হয়ে গিয়েছে। সেখানে শীতে বাচ্চারা ক্রিকেট ব্যাট বল নিয়ে নেমে পড়ে। কেউ আবার ওই নদীর বুকেই জমি তৈরি করে নানা রকম শাকসব্জি থেকে ধান পর্যন্ত চাষ করেন।
হরিহরপাড়ার রুকুনপুর অঞ্চলের ভবানীপুরে পৌঁছে দেখা গেল, একটা বাঁশের সাঁকো। সেই সাঁকোর নীচে কোনও জল নেই। সাঁকের পাশ দিয়ে নদীর খাত ধরে রয়েছে রাস্তাও। নদীতে জল না থাকা সত্ত্বেও গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় সব রাজনৈতিক দলের নেতারাই আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, ওই এলাকায় পাকা সাঁকো করে দেওয়া হবে। কিন্তু নদী সংস্কারের কথা শোনা গিয়েছে খুব কম লোকেরই মুখে। হরিহরপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য কংগ্রেসের মির আলমগির বলেন, “নদী সংস্কার করা যে খুব জরুরি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যাঁরা এখন পঞ্চায়েত সমিতিতে দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদেরই এটা নিয়ে ভাবতে হবে।” হরিহরপাড়ার বিধায়ক সিপিএমের ইনসার আলি বিশ্বাস বলেন, “মুর্শিদাবাদের নদী সংস্কার নিয়ে আমি আগেও বিধানসভায় বলেছি। এখনও সুযোগ পেলে বলব। নদীগুলো অবহেলিত, সেই অবস্থা দূর করতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।”
জেলা সেচ দফতরের কার্যনির্বাহী বাস্তুকার আশিস দত্ত বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতি একশো দিনের কাজের মাধ্যমে ওই নদী সংস্কার করছে। আমরা একাধিকবার কারিগরি সহায়তা করেছি।”
জেলা পরিষদে নওদার সদস্য বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “গ্রীষ্মে জল না থাকার কারণে মানুষ কৃষিকাজ, মাছ চাষ, নিত্য ব্যবহারে নদীগুলো ব্যবহার করা যায় না। নদীগুলো সংস্কারের কথা ভাবা হচ্ছে। দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বহরমপুরের মহকুমাশাসক দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “বিষয়টি সেচ দফতর দেখছে। সমস্যা গুরুত্ব দিয়ে দেখে এই সংস্কার কর্মসূচি নেওয়া হবে।”
|
মুশির্দাবাদের আখরিগঞ্জ থেকে পদ্মার শাখা নদী ভৈরবের উৎপত্তি। পদ্মার আর একটি
শাখা জলঙ্গির থেকে ভৈরবের অবস্থা ভাল। বর্ষাকালে পদ্মা থেকে বাড়তি জল ভৈরব
ধরে বয়ে যায়। এই নদীগুলো বৃষ্টি ও ভূগর্ভস্থ জলের উপরেই নির্ভরশীল।
কল্যাণ রুদ্র, নদী বিশেষজ্ঞ |
|
|
|
 |
|
|