কান্তের বদলে কুমার! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্বোধনে এই বিচ্যুতিটুকু শুনেই ক্ষুব্ধ বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। বিধানসভায় মঙ্গলবার সিঙ্গুর-বিলের উপরে বিতর্কে বিরোধী দলনেতার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলে ফেলেন ‘সূর্যকুমারবাবু’। পরে ‘সূর্যকান্তবাবু’ই বলেছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে প্রতিবাদ করে ফেলেছেন সূর্যবাবু ওই ভ্রান্তি ‘অপমানজনক’। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই বলেছেন, “বাবু বললাম তো! বাংলায় তো তাই-ই বলে! তবে আপনাকে আঘাত করতে চাইনি। আপনি আহত হয়ে থাকলে ক্ষমা চাইছি। ঠিক আছে, এর পর থেকে আর নাম বলব না। আপনাকে শুধু মাননীয় বিরোধী দলনেতা বলব!”
|
সিঙ্গুর-বিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিধানসভায় বিতর্কের আসরে হাসি-ঠাট্টায় একটু খোলা হাওয়া আনলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি যখন জবাবি ভাষণ দিতে উঠলেন, তার খানিক আগেই সিপিএম বিধায়ক তথা প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা ঘুমে ঢলে পড়েছেন! মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “যে যাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে বলেছেন। মাঝে মাঝে একটু হইহল্লা হয়েছে! ভালই তো! ‘লাইফ’টা ‘অ্যালাইভ’ হবে এতে!” এক সতীর্থ দেখালেন ঘুমন্ত রেজ্জাককে। মমতা বললেন, “আরে চাষির বেটা বলে কি খাবে-ঘুমোবে না? তা কি কখনও হয়?” কক্ষজুড়ে হাল্কা হাসির রোল। চটকা ভাঙল রেজ্জাকেরও। তার আগেই অবশ্য হরিপালের তৃণমূল বিধায়ক বেচারাম মান্নার কটাক্ষ শুনতে হয়েছে তাঁকে, “গলায় গামছা জড়ালেই চাষির ব্যাটা হওয়া যায় না!”
|
সিঙ্গুর-বিল আনতে সরকার পক্ষ ‘তাড়াহুড়ো’ করেছে বলে বিরোধীরা লাগাতার অভিযোগ করেছেন। যা শুনে তাঁদের মুখ্যমন্ত্রীর ‘পরামর্শ’, “মানুষ আপনাদের ছুটিতে পাঠিয়েছেন। ইউ এনজয় দ্য ছুটি!” তার আগে ফরওয়ার্ড ব্লকের অক্ষয় ঠাকুর বলেন, “এতদিন আমরা ও-পাশে ছিলাম। এখন এ-পাশে।” জবাবে কংগ্রেসের অসিত মিত্র, “মানুষ আপনাদের এ-পাশ থেকে ও-পাশে পাঠিয়েছে। সিঙ্গুর-বিল সমর্থন না-করলে এর পর একেবারে এই সভার বাইরেই পাঠিয়ে দেবে!”
|
‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের জমি ফেরত দেওয়ায় আপত্তি তো নেই-ই, ‘ইচ্ছুক’দের বিষয়টিও বিবেচনার দাবি জানাল বিজেপি। বিধানসভায় প্রতিনিধি নেই। ফলে সেখানে বিতর্কে অংশ নেওয়া যায়নি। তাই সিঙ্গুর-বিলের দিন আলাদা সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপি-র রাজ্যসভার সাংসদ চন্দন মিত্র ও দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, যাঁদের ‘ইচ্ছুক’ কৃষক বলা হচ্ছে, তাঁদের একাংশ ওই সময়ে জমি দেওয়ার সম্মতি দিতে ‘বাধ্য’ হন। তাঁদের কথাও ভাবা উচিত। যদি জমি ফেরত দেওয়া না-যায়, তা হলে ক্ষতিপূরণের প্যাকেজ অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়া হোক।
|
বিরোধী দলনেতার ‘পয়েন্ট অফ অর্ডার’ গ্রাহ্য না-হওয়ায় কক্ষত্যাগ করছেন বামফ্রন্ট বিধায়কেরা। হঠাৎই ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে ছুটে আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাকে পাকড়াও করলেন বেলেঘাটার তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পাল। রেজ্জাককে ধরে আসনে ফের বসিয়ে দিলেন! ততক্ষণে ফ্রন্টের অন্য বিধায়করা চলে গিয়েছেন। রেজ্জাক সভায় একা। পরেশের বক্তব্য, রেজ্জাক তো চাষির স্বার্থের পক্ষে। তিনি চান, কৃষকের হাতে জমি ফিরুক। তা হলে বিল পাশের সময় বেরিয়ে যাবেন কেন? রেজ্জাক কয়েক মুহূর্ত বসলেন। পরেশ ট্রেজারি বেঞ্চে ফেরার পর গুটিগুটি গেলেন সভার বাইরে। |