|
|
|
|
কর্মীর অভাবে প্রবল সঙ্কটে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর |
পীযূষ নন্দী • আরামবাগ |
‘বন্যাপ্রবণ’ এলাকা বলে চিহ্নিত আরামবাগ মহকুমা। বর্ষা এলেই ফি বছর বন্যার কবলে পড়ে মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। বন্যা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের বহু বৈঠক-আলোচনার পরেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। বছরের পর বছর ধরে চলছে এই পরিস্থিতি। কিন্তু এ বার পরিকল্পনা রচনার ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহের ব্যাপারেই প্রশ্ন চিহ্ন উঠেছে। কারণ, আরামবাগ মহকুমা-সহ সংশ্লিষ্ট ছ’টি ব্লকে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক ও কর্মীদের পদগুলি অধিকাংশই খালি পড়ে আছে।
মহকুমা এবং ব্লক স্তরে বির্যয় মোকাবিলা দফতরে অনুমদিত পদ ৪ জন করে। এক জন আধিকারিক, দু’জন আপার ও লোয়ার ডিভিশন করণিক এবং এক জন করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিযুক্ত হন এই কাজে। আরামবাগ মহকুমার ক্ষেত্রে খোদ মহকুমা দফতরেই আধিকারিকের পদ ২০১০ সালের অক্টোবর মাস থেকে শূন্য পড়ে। মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী অস্থায়ী ভাবে আরামবাগ ব্লকের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক শ্যামল বসুকে সেই দায়িত্ব দিয়েছেন। শ্যামলবাবুর উপরে আবার খানাকুল ২ ব্লকেরও দায়িত্ব আছে ২০০৯ সাল থেকে। বর্তমানে খানাকুল ২ ব্লকে তিনি যেতেই পারছেন না। সেখানে ওই দফতরের এক জন করণিক আছেন মাত্র। খানাকুল ১ ব্লকে অবশ্য আধিকারিক আছেন। আছেন এক জন করণিকও। গোঘাট ১ ব্লকেও এক জন আধিকারিক এবং এক জন করণিক আছেন। পুড়শুড়া ব্লকে আছেন শুধুই এক জন করণিক। আরামবাগ ব্লকে তিন জায়গার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের সঙ্গে আছেন এক জন মাত্র করণিক। করুণ অবস্থা গোঘাট ২ ব্লকে। সেখানে দফতরটিতে সব পদই শূন্য। মহকুমা এবং ৬টি ব্লক মিলিয়ে ৭ জন আধিকারিক এবং ২১ জন কর্মীর বদলে আছেন ৩ জন আধিকারিক এবং ৮ জন কর্মী। এই অবস্থায় মহকুমা প্রশাসনের দিশাহারা দশা। মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “কর্মীর অপ্রতুলতার কথা জানিয়ে বার বার বলা হচ্ছে জেলায়। জেলাশাসক নিজে রাজ্যস্তরে কথা বলেছেন। কিন্তু এখনও কিছু হয়নি।” মহকুমাশাসক জানান, অন্য দফতরের কর্মী-আধিকারিকদের নিয়ে কোনও মতে কাজ সামাল দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু এই কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হওয়া জরুরি। আবার যে দফতরের কর্মী-আধিকারিকদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, সে সব দফতরেও সমস্যা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে আরামবাগ মহকুমা এবং ব্লকগুলিতে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর কার্যত বিপর্যস্ত। মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, আরামবাগের ৬৩টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৪০টি পঞ্চায়েত অতি বন্যাপ্রবণ। বর্ষার বৃষ্টিতেই অনেক জায়গা জলমগ্ন হয়। তা ছাড়া, ডিভিসির জলাধার থেকে ছাড়া জলে দামোদর নদী হয়ে বর্ধমানের জামালপুরের বেগুয়ায় মুণ্ডেশ্বরী নদীর উৎসমুখ দিয়ে আরামবাগ মহকুমায় জল ঢোকে। এই মহকুমা দিয়ে দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী এবং দ্বারকেশ্বর নদী প্রবাহিত। এক দিকে দামোদর এবং মুণ্ডেশ্বরীর জল পুড়শুড়া, আরামবাগের পূর্ব দিক এবং খানাকুলের দু’টি ব্লকের গ্রামগুলিকে প্লাবিত করে। ওই জল পড়ে রূপনারায়ণে। অন্য দিকে, বাঁকুড়ার দিক থেকে আসা দ্বারকেশ্বর নদী আরামবাগের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত গ্রামগুলি এবং খানাকুলের পশ্চিম দিকের গ্রামগুলিকে ভাসিয়ে দেয়। এই জলও পড়ে রূপনারায়ণে। রূপনারায়ণের নাব্যতা কমে যাওয়ায় জল ফুলে ঊর্ধ্বমুখী চাপ তৈরি করে। যার জেরে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেয়। নদীবাঁধ ভাঙে। বাড়ি-ঘর ভাসে। আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি, ফসল নষ্ট, জীবনহানির ঘটনাও ঘটে। ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজে নাভিশ্বাস ওঠে প্রশাসনের। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর তৈরি করেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে।
এই দফতরটি তৈরির উদ্দেশ্য ছিল, যে কোনও বিপর্যয়ের আগে থেকেই প্রতিরোধের ব্যবস্থা গড়ে তোলা। যাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে। সেই সঙ্গে বিপর্যয়ের পরে যাতে দ্রুততার সঙ্গে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা যায়, তা দেখাও এই দফতরের কাজ। এই দফতরের কাজ বাঁধের অবস্থা খতিয়ে দেখা। খাদ্যদ্রব্য ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য মজুত রাখা। স্থানীয় স্তরে নৌকো, মাঝির তথ্য রাখা। বেতারবার্তা প্রেরণের ব্যবস্থা নেওয়া। কন্ট্রোল রুম চালু করা প্রভৃতি। এ ছাড়া, বন্যার সময়ে এবং বন্যার পরেও কী কী করণীয়, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্বও এই দফতরের হাতে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) সৃষ্টিধর সাঁতরা বলেন, “বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের জেলা আধিকারিকের পদটিও ফাঁকা। সমস্ত বিষয়টি রাজ্যস্তরে জানানো হয়েছে।” |
|
|
|
|
|