ওঁদের কথা বিলে কোথায়, আক্ষেপ খেতমজুরদের
কোথাও মহিলাদের আবির খেলা। কোথাও আল ধরে দীর্ঘ মিছিল। যাঁর জমি আছে তিনি তো নাচছেনই, যাঁর নেই তিনিও। তবে এখনও নাচানাচিতে নেই বর্গাদার ও খেতমজুরেরা। তাঁদের আক্ষেপ, “বিধানসভায় যে বিল পাশ হল তাতে আমাদের কথা তো শুনলাম না।”
সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনের প্রথম থেকেই খেতমজুর ও বর্গাদারের ক্ষতিপূরণের আন্দোলনে নেমেছিল সিপিআই (এমএল) লিবারেশন। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য সজল অধিকারী বললেন, “বাম সরকার গিয়ে ডান সরকার এল। কিন্তু নীতিতে পরিবর্তন হল কই? যে খেতমজুর আর বর্গাদারেরা টাটাদের প্রকল্প এলাকার জমিতে চাষের কাজ করে দিন গুজরান করতেন, তাঁদের হবে কী? আমরা কিন্তু আমাদের পুরনো দাবি থেকে একচুলও সরছি না। সিঙ্গুরে নতুন ভাবে আমরা আন্দোলন সংগঠিত করব।”
উচ্ছ্বাস। আবির খেলায় মেতেছেন মহিলারা।
খাসেরভেড়ি, বাজেমিলিয়ার বিশাল এলাকা জুড়ে খেতমজুরদের পরিবার রয়েছে। যাঁরা চাষিদের দাবিকে সামনে রেখে প্রথম থেকে আন্দোলন করেছেন। কৃষিজমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘর উজ্জ্বল সঙ্ঘের সামনে একা দাঁড়িয়ে ছিলেন হারাধন মাঝি। তিনি বললেন, “টানা দু’ঘণ্টা টিভি দেখলাম। খেতমজুরদের একটাও কথা নেই। বর্গাদারদের ব্যাপারেও কোনও আলোচনা নেই। তবে কি আমরা কিছুই পাব না? দিদি এটা কী করলেন? বামফ্রন্ট সরকারের জমির দামের ২৫ শতাংশ টাকা প্রতিবাদে নিইনি।”
আর এক খেতমজুরের আক্ষেপ, “তাপসী মালিক খেতমজুর, বর্গাদার পরিবার থেকে উঠে এসে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল। সেই রোষে তাকে গণধর্ষণ করে খুন করা হল। অথচ এঁদের কথা তো বিলে নেই।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, মোট আড়াই থেকে তিন হাজার খেতমজুর রয়েছেন সিঙ্গুরে। নথিভুক্ত বর্গাদার চাষির সংখ্যা অন্তত ৫০০। কিন্তু অনথিভুক্তদের সংখ্যা ঠিক কত? সেই তালিকা এ পর্যন্ত তৈরি হয়নি।
তবে এ দিন উচ্ছ্বাসের ছবিটাই বেশি দেখা গিয়েছে। বৃদ্ধা ভারতীদেবী এসে বলছেন, “দিদি হাত ধরে বলেছিলেন, ‘মিথ্যা মামলায় ভয় পেয়ো না। সত্যের জয় হবেই।’ দাঁতে দাঁত চেপে আমরা অপেক্ষা করেছি। ছেলেরা জমির মালিক থেকে খেতমজুর হয়ে গিয়েছে চোখের সামনে। বৌমা, নাতি-নাতনিদের নিয়ে সংসারের কী হাল। তবু, পিছিয়ে আসিনি।” উত্তর বাজেমিলিয়ায় টাটার পাঁচিলকে পিছনে ফেলে সবুজ শাড়ি পরে ছুটে এলেন মালতীদেবী। হাতের ক্ষতচিহ্ন দেখিয়ে মালতীদেবী বলেন, “এই দেখো বাবা। পাঁচিল টপকে ভিতরে চলে গিয়েছিলাম। পুলিশ কী মারটাই না মেরেছিল। সঙ্গে অকথ্য গালাগাল। এখনও দাগ আছে।
আক্ষেপ। বাজেমিলিয়ায় ক্ষুব্ধ খেতমজুর হারাধন মাঝি। মঙ্গলবার।
চন্দননগর জেলে টানা তিন দিন থাকতে হয়েছিল। তার মধ্যে দু’দিন
খেতে পাইনি।”
শ্যামলী পাত্রের এক টুকরো জমি নেই। কিন্তু প্রথম থেকে সপরিবার আন্দোলনে ছিলেন ‘অন্যায়ের প্রতিবাদে’। হতাশায় স্বামী ভোলানাথ আত্মঘাতী হন। তবু শ্যামলী পাঁচ বছরের ছেলে কোলে কৃষিজমি কমিটির আন্দোলনে থেকেছেন। অকাল দোলের আবিরে মাখামাখি শ্যামলী বলেন, “আমি কিচ্ছু পাব না। শুধু জয় পেলাম। আর কী চাই?”
তাপসীর বাবা মনোরঞ্জনবাবু বিধানসভায় গিয়েছেন। বাড়ির দাওয়ায় দাঁড়িয়ে মেয়ের ছবি নিয়ে নাড়াচাড়া করছিলেন মনোরঞ্জনবাবুর স্ত্রী মলিনাদেবী। তিনি বলেন, “সিঙ্গুরের চাষিদের ভাল কিছু হলেই ছবিটা ঝেড়েপুঁছে রাখি। ওর বাবা বলেছে, ফেরার সময় মালা আনবে।”
রাতের দিকে খাসেরভেড়ি, বাজেমিলিয়ায় যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। সঙ্গে ছিলেন হুগলি জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত। মুকুলবাবু বলেন, “সিঙ্গুরের মানুষের কাছে আজ এক ঐতিহাসিক দিন। এক জন সাধারণ তৃণমূল কর্মী হিসেবেই এখানকার মানুষের আনন্দের সঙ্গী হতে এসেছি।”

ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
Previous Story South Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.