স্বেচ্ছায় প্রকল্প ছাড়িনি, প্রতিবাদ টাটাদের
সিঙ্গুর বিল নিয়ে অবশেষে মুখ খুলল টাটা মোটরস। জানিয়ে দিল, সিঙ্গুরে ন্যানো প্রকল্প পরিত্যক্ত হওয়ার যে সব কারণ ওই বিলে দেখানো হয়েছে, তার সঙ্গে তারা এক মত নয়।
মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া সিঙ্গুর বিলে বলা হয়েছে, টাটারা প্রকল্পের জমিতে ন্যানো গাড়ির কারখানা চালু করেনি, বস্তুত তারা প্রকল্পটি বাতিল করেই চলে গিয়েছে। তিন বছরের বেশি সময় ধরে জমিটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রকল্প ঘিরে এলাকায় কোনও কর্মসংস্থান বা আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়নি। কোনও উপকারই পাননি স্থানীয় মানুষ। অথচ তার জন্য ২১৩ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে পূর্বতন রাজ্য সরকারের। সেই কারণেই সরকার ওই জমি ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
বিল পাশের পরে টাটা মোটরসের তরফে লিখিত বিবৃতিতে সরকারের এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলা হয়েছে, ‘কোন কারণে কাজ বন্ধ হয়েছিল এবং কারখানা অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছিল, সে সম্পর্কে বিলে কিছু বলা হয়নি।’ সংস্থার বক্তব্য, চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও কারখানা তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল তারা। হিংসাত্মক কার্যকলাপ, সম্পত্তির ক্ষতিসাধন, কর্মীদের ভয় দেখানোর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ২ আগস্ট পরিবেশ শান্তিপূর্ণ করার জন্য আবেদন জানানো হয়। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি। উল্টে কর্মীদের হেনস্থা ও ভয় দেখানোর পরিমাণ বেড়ে যায়। জাতীয় সড়ক অবরোধ করে শুরু হয় বিক্ষোভ। যে হেতু নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসার কোনও নিশ্চয়তা ছিল না তাই ‘অনিচ্ছা সত্ত্বেও’ ২০০৮-এর ৩ অক্টোবর কারখানার কাজ বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করা হয় এবং তার পর কারখানা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। সেটা এমন একটা সময়, যখন কারখানা তৈরির কাজ অনেকটাই শেষ হয়ে গিয়েছে।
এলাকার উন্নয়নে সিঙ্গুর প্রকল্প কোনও কাজে আসেনি, বিলের এই বক্তব্যের উত্তরে টাটাদের দাবি, প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার অনেক আগেই (২০০৬ সালে) ওই এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিল তারা। যেমন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি স্থানীয়দের কাজের বা স্বরোজগারের উপযুক্ত করে তুলতে শুরু করা হয়েছিল বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন ৭৬৭ জন। সংস্থার আরও দাবি, জোর করে বন্ধ করে দেওয়ার আগে পর্যন্ত ১০২টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছিলেন প্রায় ১৭ হাজার মানুষ। সাহায্য পেয়েছিল এলাকার স্কুলগুলিও। একই সঙ্গে, প্রকল্প চালু হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যথাক্রমে ২,০০০ ও ১০,০০০ জনের কর্মসংস্থান হত বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে।
বিবৃতিতে টাটারা জানিয়েছে, শিল্পায়নে পুনরুত্থানের জন্য লগ্নি করতে তৎকালীন রাজ্য সরকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বলেই এ রাজ্যে পা রেখেছিল তারা। সব মিলিয়ে বিনিয়োগ করেছিল ১৮০০ কোটি টাকা। কিছু যন্ত্রপাতি তুলে নিয়ে গেলেও বাড়ি, ছাউনি এবং অন্যান্য পরিকাঠামো মিলিয়ে তাদের ৪৪০ কোটি এবং ভেন্ডারদের ১৭০ কোটি টাকার সম্পত্তি পড়ে রয়েছে।
এই অবস্থায় বিলটি খতিয়ে দেখে টাটা মোটরস প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার দিনই মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের ৪০০ একর জমি ফিরিয়ে দেবেন তাঁরা। গত বৃহস্পতিবার ওই জমি ফিরিয়ে নেওয়ার অর্ডিন্যান্স জারির কথা জানিয়েছিলেন তিনি। তার পর অবশ্য জানান, অর্ডিন্যান্স নয়, জমি ফেরাতে বিধানসভায় বিল আনা হবে। সরকারি সূত্রের খবর, অর্ডিন্যান্স জারির কথা বলার পরই রাজ্য শিল্প দফতর ও শিল্পোন্নয়ন নিগমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন টাটা মোটরস কর্তৃপক্ষ। অর্ডিন্যান্সের কপিও দেখতে চান। কিন্তু তখন প্রকাশ্যে এ নিয়ে মুখ খোলেননি তাঁরা।
Previous Story South Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.