মাওবাদীদের খপ্পর থেকে উদ্ধার তিন
আদিবাসী কন্যার বিয়ে দিলেন শিক্ষক
য় পুলিশের তাড়া খেয়ে প্রাণভয়ে জঙ্গলের ডেরায় সিঁটিয়ে থাকো, নয়তো মুখ বুজে বন্দুকধারী ‘প্রভু’দের ফাই-ফরমায়েশ খেটে যাও। মাওবাদীদের ডেরায় ‘বন্দি’-দশায় এটাই জীবন বলে মানতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা তিন জন। কোনওমতে পালিয়ে এলেও নিজেদের গ্রামে ফেরার দুরাশা মন থেকে মুছেই ফেলেন ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গাঁয়ে আদিম জনজাতির ওই তিন তরুণী। পুলিশের ডিআইজি, এসপি, সিআরপি-র কম্যান্ডা্যান্টদের উপস্থিতিতে ঝাড়খণ্ডের সেই তিন কন্যারই আজ বিনা পণে ঘটা করে বিয়ে হয়ে গেল।
ঘটনাস্থল: ডাল্টনগঞ্জ শহরের টাউন-হল। বিয়ের পৃষ্ঠপোষক সিআরপি। তবে এই মেয়েদের খুঁজে এনে বিনা পণে বিয়ে করবেন এমন বর জোগাড় করে ‘পাত্রস্থ’ করার কৃতিত্ব গঢ়বা জেলার ডন্ডই ব্লকের পার্শ্বশিক্ষক রিজওয়ান আলির। সিআরপি-র ডিআইজি বিজেন্দ্র কুমার শর্মার কথায়, “মাওবাদী-প্রভাবিত এলাকায় নানা ভাল কাজের মধ্যে দিয়ে বোঝাতে চাইছি আমরাও আম-জনতার বন্ধু। সমাজের পিছিয়ে থাকাদের মধ্যেও একেবারে পিছনের সারির আদিম জনজাতির তিন মেয়ের তাই বিয়ের ব্যবস্থা করা হল।” পলামু-গঢ়বায় কতর্ব্যরত সিআরপি-র ১৩৪ নম্বর ব্যাটালিয়নের কম্যান্ডান্ট অনিল মিন্জ বিয়ের আসরে উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে টেলিফোনে তিনি বলেন, “এক-এক জন কনের জন্য ১১ হাজার করে মোট ৩৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। স্থানীয় লোকে এই উদ্যোগে খুশি।”
গণবিবাহের আসরে অন্যদের সঙ্গে ওই তিন কন্যা। নিজস্ব চিত্র
মিন্জ জানান, এই তিন কন্যাই সিপিআই (মাওবাদী)-র কোয়েল-শঙ্খ জোনের নেতাদের পাল্লায় পড়েছিলেন। জবরদস্তি তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে আনে এরিয়া কম্যান্ডার সাতানজি। আদিম জনজাতি পারওয়াইয়া-গোষ্ঠীর তিন তরুণী সবিতা কোরওয়া (২১), লক্ষ্মী কোরওয়া (২০), কুসুম কোরওয়া (২০) (নিরাপত্তার স্বার্থে কাল্পনিক নাম ব্যবহৃত) ২০০৯ ও ২০১০ সালে ১৫-২০ দিন ধরে মাওবাদীদের ডেরায় বন্দি ছিলেন। এর পরে তাঁরা পালিয়ে আসেন। গঢ়বার চিনিয়া ব্লকের পুরেগাড়া গ্রামের মেয়ে সবিতা বলেন, “আমার মা-বাবা নেই। পড়াশোনা শিখিনি। ওরা বলেছিল, খাওয়া-পরার অভাব থাকবে না। তাই চলে গিয়েছিলাম। পুলিশের তাড়া খেয়ে আর ওদের জন্য রান্না করে নাজেহাল হয়ে গেলাম। তাই পালাই।” পালিয়ে বিহারের ঔরঙ্গাবাদে ইটভাটায় কাজ করতে চলে গিয়েছিলেন সবিতা। রিজওয়ান খবর পেয়ে তাঁকে ফিরিয়ে আনেন। দীনেশ কোরওয়ার সঙ্গে এ দিন বিয়ে হয় সবিতার। চিনিয়ার চিরকা গ্রামের লক্ষ্মীও পালিয়ে জরহি গ্রামে পিসির বাড়িতে গা-ঢাকা দেন। লক্ষ্মীর ছোট ভাই ছাড়া কেউ নেই। আর গঢ়বার ভবনাথপুর ব্লকের হঠরি গ্রামের মেয়ে কুসুম পাচৌরে মামার বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। কুসুমের শুধু মা রয়েছেন।
রিজওয়ানের উদ্যোগে এ দিন আরও সাত জনের বিয়ে হয়েছে। তাঁরাও দরিদ্রতম শ্রেণির। পলামুর ডিআইজি লক্ষ্মণপ্রসাদ সিংহ, এসপি অনুপ টি ম্যাথু কন্যাদান করেন। রিজওয়ান বলেন, “মাওবাদীদের খপ্পরে পড়া তিন জন-সহ সব পাত্রীদেরই দু’দিন আগে আইনি বিয়ে হয়েছে। আজ দুপুরে হিন্দুমতে বিয়ে হল।” পণদানের নামগন্ধ না-থাকলেও বরের তিলক বা আর্শীর্বাদের অনুষ্ঠানে ফাঁক থাকেনি। এই অনুষ্ঠানেই বরকে যৌতুক দেওয়ার রেওয়াজ। ‘কন্যাকর্তা’ রিজওয়ান নতুন জামাইদের সাধ্যমত উপহার দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন। পুলিশকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে এ দিন দুপুরে পাত পেড়ে ভাত-ডাল-আলুপটল, লাউয়ের তরকারি, পাঁপর, রসগোল্লা খান সকলে। তারপরে বর-কনের বিদায়।
রিজওয়ানের এই উদ্যোগে পাশে দাঁড়িয়ে খুশি সিআরপি। রিজওয়ান আগেও ঘরিব মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর কথায়, “পরেও এই কাজে এগিয়ে আসব। একটাই শর্ত, কাউকে এক পয়সা পণ দিতে পারব না।”
Previous Story Desh Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.